সিলেট মিরর ডেস্ক
সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১
০৬:১৮ অপরাহ্ন
আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১
০৬:১৮ অপরাহ্ন
করোনাভাইরাসের ধাক্কা কাটিয়ে বাড়তে শুরু করেছে চায়ের উৎপাদন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চায়ের উৎপাদন বেড়েছে ৪ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন কেজি।
চা বোর্ড এবং চা বাগান মালিকরা জানিয়েছেন, সময়মতো পরিমিত বৃষ্টি না হওয়া ও প্রকৃতির বিরূপ আবহাওয়া থাকা সত্বেও গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে প্রায় ৫ মিলিয়ন কেজি বেশী চা উৎপাদন হয়েছে। চা শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন,এ আবহাওয়া অব্যাহত থাকলে এ বছরের চা উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ৭৫ মিলিয়ন কেজি ছাড়িয়ে ৯০ মিলিয়নের কাছাকাছি যাবে বলে আশাবাদী তারা। বছর শেষে গত বছরের চেয়ে চা উৎপাদন ১০-১৫ মিলিয়ন কেজি বেশি হবে বলে ধারণা করছেন তারা।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২১ সালে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ৭৭ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন কেজি। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত চা উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩৮ দশমিক ৩১ মিলিয়ন কেজি। ৭ মাসে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৫১ ভাগ চা উৎপাদন হয়েছে।
২০২০ সালের একই সময়ে চা উৎপাদন হয়েছিলো ৩৩ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন কেজি। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে চা উৎপাদন বেড়েছে ৪ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন কেজি।
সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম ও পঞ্চগড় সহ সারাদেশে চা বাগান রয়েছে ১৬৭টি। এছাড়া উত্তরবঙ্গ এবং বান্দারবানে চা চাষের সাথে সম্পৃক্ত আছে আরো ৫ হাজার ক্ষুদ্র চাষী। সারা বাংলাদেশে এই খাতে মোট ৩ লক্ষাধিক শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে।
বাংলাদেশ চা সংসদের চেয়ারম্যান এম শাহ আলম বলেন, গত বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রচন্ড খরার কারণে চায়ের উৎপাদন মারাত্বকভাবে ব্যাহত হয়। এরপর উৎপাদন মোটামুটি স্বাভাবিক হলেও সেপ্টেম্বর মাসে অতিবৃষ্টির কারণে আবারো ব্যাহত হয় উৎপাদন। এছাড়া করোনার নেতিবাচক প্রভাবও ছিলো চা উৎপাদনে। তবে এবার সেই পরিস্থিতি নেই। আবহাওয়া অনক‚লে থাকায় গত বছরের তুলনায় উৎপাদন বাড়ছে।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছরের গত জুন মাস পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলে এতো কম বৃষ্টিপাত হয়েছে যা বিগত কয়েক বছরের মধ্যে কম বৃষ্টিপাতের জন্য রেকর্ড হতে পারে।
চা শিল্পের বৃহৎ চা কোম্পানী ফিনলে টি’র সিইও তাসিন আহমদ চৌধুরী জানান, বছরের শুরুর দিকে তাদের কে প্রতিকুল আবহাওয়ার মধ্যে পড়তে হয়েছে। কৃত্রিম পানি দিয়ে চা গাছকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়েছে। গত দুই মাস ধরে ভালো বৃষ্টিপাত হওয়ায় চা উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন পর্যন্ত তাদের বাগান গুলোতে গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০ পারসেন্ট চা বেশি উৎপাদন হয়েছে। তবে বিগত ২০১৯ সালের চায়ের রেকর্ড বছরের চেয়ে কম।
তিনি বলেন, মৌসুমের বাকী সময়টুকু যদি পরিমিত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে তাহলে চায়ের আশাব্যঞ্জক উৎপাদন হবে।
জেরিন চা বাগানের ব্যবস্থাপক সেলিম রেজা চৌধুরী জানান, গত বছরের তুলনায় এখন পর্যন্ত তাদের বাগানে প্রায় ৩ পারসেন্ট চা বেশি উৎপাদন হয়েছে। তিনি জানান,মৌসুমের শুরুতে এ বছর চায়ের জন্য প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত হয়নি। গত বছরের তুলনায় এ পর্যন্ত প্রায় ২০ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। যা গত বছর জুলাই পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিলো ৬০ ইঞ্চি। আর চলমান মৌসুমে এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ ইঞ্চি।
রেজা জানান, চায়ের জন্য বছরে ৮০ থেকে ১০০ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। মৌসুমের শুরুর দিকে চা শিল্প তীব্রখরার মূখে পড়ে। যদি পরিমিত বৃষ্টি পাওয়া যেতো, তাহলে এ বছর চায়ের উৎপাদন শত মিলিয়ন কেজি ছাড়িয়ে যেতো।
চা বাগান মালিকরা জানিয়েছেন, গত বছর করোনার লকডাউন দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় চায়ের চাহিদা কমে যায়। আর্থিক সংকটে পড়ে বাগান মালিকরা। গত বছরের এপ্রিল থেকে চা বাগান মালিকদের ওয়্যার হাউসে জমতে থাকে উৎপাদিত চা। তাছাড়া ২০১৯ সালে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদিত হওয়ায় সে চাও অবিক্রিত থেকে যায় বাগান মালিকদের কাছে। নিলামে বাগান মালিকরা চায়ের উৎপাদন মূল্যের চেয়েও কম দামে চা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে চরম মূলধন সংকটে পড়তে হয়েছে তাদের। ওই সময়ে বাগান মালিকরা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে আর্থিক সংকটে পড়ে। বাগান রক্ষণাবেক্ষণ সঠিকভাবে করতে না পারার কারণেও উৎপাদন ব্যাহত হয়েছিলো।
চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে চা উৎপাদন হয়েছিলো ৯৬ দশমিক ৭ মিলিয়ন কেজি। কিন্তু করোনার প্রভাব, খরা, অতিবৃষ্টি এবং পোকার আক্রমণ সহ নানা কারণে ২০২০ সালে চায়ের উৎপাদন কমে যায়। ২০২০ সালে চায়ের উৎপাদন হয়েছিলো ৮৬ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন কেজি। ২০২১ সালে এসে আবারো বাড়তে শুরু করেছে চায়ের উৎপাদন।
আরসি-০৯