দীর্ঘদিন পর সিলেটের মঞ্চে জলল আলো

নিজস্ব প্রতিবেদক


সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১
০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১
০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন



দীর্ঘদিন পর সিলেটের মঞ্চে জলল আলো
সম্মিলিত নাট্য পরিষদের ৩৭ বছর পূর্তি

দীর্ঘদিন পর সিলেটের কবি নজরুল অডিটোরিয়ামের কপাট খুলল। মঞ্চে জ্বলল আলো। নাট্যকর্মীরা প্রিয় অডিটোরিয়ামের মঞ্চে ফিরেছেন নাটক নিয়ে। চেনা নাটকের পরিবেশনায় দেখা গেল অনেক নতুন মুখও।

অতিমারি করোনায় সবকিছুর মতো স্থবিরতা নেমেছিল সিলেটের সংস্কৃতি অঙ্গনেও। সেই স্থবিরতা ভাঙল সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের ৩৭ বছর পূর্তির দিনে। শুধু নাটক দিয়েই নয়, নৃত্যের ঝংকার, আবৃত্তি, সংগীতের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। অভিনয়, নৃত্য, আবৃত্তি আর সংগীত শিল্পীদের পদচারণায় যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে সিলেট কবি নজরুল অডিটোরিয়াম প্রাঙ্গণ।

‘যাত্রাপথে জেগে উঠুক মানবতার জয়গান’ প্রতিপাদ্যে পালিত হয় এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সোমবার বিকেলে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা শেষে মানবহিতৈষী সম্মাননা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দেশে এখনও অনেক অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠার জন্য ওৎ পেতে আছে। তাদেরকে প্রতিহত করতে হলে সংস্কৃতি কর্মীদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। সংস্কৃতিক কর্মীরাই পারেন নতুন প্রজন্মের মাঝে শুভ চিন্তার বিস্তার ঘটাতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সিলেটের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনেক সমৃদ্ধ। শাহ আব্দুল করিম, রাধারমণ, হাসন রাজাসহ আরও অনেক লোককবির অঞ্চল এই সিলেট। সংস্কৃতিক চর্চার ঐতিহ্যের যে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন সিলেটের নাট্য ও সংস্কৃতিকর্মীরা, সেই ধারাবাহিকতায় এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রায় বড় ভূমিকা দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে রেখে চলেছে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট। আমাদের প্রত্যশা আগামীতেও এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে সিলেটের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বেগবান করে তুলবে সংগঠনটি।’

নাট্য পরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমদ চৌধুরী মিশুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম, জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা দেবজিৎ সিংহ, ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার নিরাজ কুমার জসওয়াল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন।

বক্তারা বলেন, ‘৩৮ বছরে পদার্পণ করা একটি সংগঠনের জন্য অনন্য মাইলফলক। অনেক সংগঠনই যাত্রা শুরু করে জাঁকজমকভাবে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। এদিক দিয়ে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ নিজেদের অনন্য করেছে। নাট্য পরিষদের প্রতিষ্ঠার এত বছর প্রমাণ করে সিলেটের সাংস্কৃতিক চর্চা কত গভীরে রয়েছে। শিল্প-সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে সিলেটের সংস্কৃতিকে তাঁরা দেশ ও দেশের বাইরে উপস্থাপন করছেন। তাঁরা শুধু সংস্কৃতিতেই সীমাবদ্ধ নন। করোনাকালে সংস্কৃতিকর্মীদের ‘কলের গাড়ি’ কার্যক্রম প্রমাণ করেছে সংস্কৃতিকর্মীরা মানুষের জন্য কাজ করেন।’  

পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্তের পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের প্রধান পরিচালক অরিন্দম দত্ত চন্দন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, প্রবীন রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার মো. আরশ আলী, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদউল্লাহ শহিদুল ইসলাম, সিলেটের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আল আজাদ, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সিলেট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান জামিল, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক শামসুল আলম সেলিম প্রমুখ।

নাট্য পরিষদের ৩৭ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে করোনাকালে বিশেষ অবদানের জন্য তিন ব্যক্তি ও দুই সংগঠনকে মানবহিতৈষী সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননা প্রদান করা হয় আব্দুল জব্বার জলিল ট্রাস্টের সভাপতি আব্দুল জব্বার জলিল, ফারমিস আক্তার ও সিলেট মহানগর পুলিশের নায়েক শফি আহমদকে। এছাড়া সিলেট জেলা রোভার স্কাউট ও যুব রেড ক্রিসেন্ট সিলেটকে মানবহিতৈষী অবদানের জন্য সম্মাননা প্রদান করা হয়।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালার শুরুতে উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যশৈলী সিলেটের শিল্পীরা। এরপর নৃত্য পরিবেশন করে একাডেমি ফর মণিপুরি কালচার অ্যান্ড আর্টস (এমকা)। জলের গানের ‘এমন যদি হত’ গানটির সঙ্গে নৃত্য শিল্পীদের পরিবেশনা দেখে মনে হচ্ছিল আর বন্দি থাকতে চান না সংস্কৃতিকর্মীরা। করোনাহীন পৃথিবীতে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ছুটে বেড়াতে চান সবাই।

আবৃত্তি পরিবেশন করেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন। পরে সিলেটের বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী হিমাংশু বিশ্বাস, জামাল উদ্দিন হাসান বান্না, রানা কুমার সিনহা, প্রতীক এন্দ টনি, অনিমেষ বিজয় চৌধুরী ও বিজন রায়সহ স্থানীয় শিল্পীদের সমন্বয়ে পরিবেশিত হয় সমবেত সংগীত। সবশেষে গণসংগীত পরিবেশন করেন অংশুমান দত্ত অঞ্জন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে নাটক ‘ভাইবে রাধারমণ’ পরিবেশন করেন লিটল থিয়েটার সিলেটের শিল্পীরা।

আরসি-০৩