সংস্কৃতিকর্মীদের দাবির সঙ্গে সিলেট জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধাচারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক


সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১
০৫:২৩ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১
০৫:২৩ অপরাহ্ন



সংস্কৃতিকর্মীদের দাবির সঙ্গে সিলেট জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধাচারণ
সম্মিলিত নাট্য পরিষদের অভিযোগ

সিলেটের নাট্য ও সংস্কৃতিকর্মীদের দাবির সঙ্গে বিরুদ্ধাচারণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা অসিত বরণ দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগ করেছেন সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের নেতৃবৃন্দ। 

মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতির মাধ্যমে এই অভিযোগ তুলে সংগঠনটি। একইসঙ্গে জেলা শিল্পকলা একাডেমির হল ভাড়া মওকুফেরও দাবি জানান সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ। 

বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করেন, সারাদেশে শিল্পের বিকাশের জন্যই শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। শিল্পকলার বিস্তার, প্রসার এবং প্রচারের জন্য একাডেমির দায়িত্বে থাকেন একজন সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা। শিল্পের বিকাশের স্বার্থে রাষ্ট্র তাকে নিযুক্ত করে। রাষ্ট্রীয় দিবস ছাড়াও অন্যান্য দিবসগুলোও একজন সুনাগরিকের মতই যথাযথ সম্মান প্রদর্শন পূর্বক রাষ্ট্রের আজ্ঞাবহ হয়ে তিনি এসব স্ব স্ব একাডেমির কর্ম পালন করে থাকেন। 

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রায় দু বছর ধরে করোনার তান্ডবে লন্ডভন্ড গোটা বিশ্ব। বিশ্ব অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। কলকারখানার চাকা এখনও পুরোদস্তুর খুলেনি। শিল্পকলা সংস্কৃতির প্রবাহমান যাত্রায় পড়েছে ছেদ। মঞ্চ নাটকের মঞ্চগুলো এখনও মেলে ধরতে পারেনি তার সহজাত পেখম। আর্থিক অসঙ্গতি আর সীমিত আয় নিয়ে শিল্পকলার দিকে মানুষের আগ্রহ ক্রমশই তলানীতে। 

বিবৃতিতে বলা হয়, সামগ্রিক দিক পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ অতিমারীর এই সময়ে শিল্পকলাসহ সংশ্লিষ্ট স্থানগুলোর মিলনায়তন ভাড়া মওকুফসহ বিভিন্নাবি দাওয়া উত্থাপন করছেন। রাজধানীর বাইরের শহরগুলোতেও যখন আপামর সংস্কৃতিকর্মী সেসব দাবিদাওয়ার প্রতি একাত্মতা ঘোষনা করে আঞ্চলিকভাবে মিলনায়তনের ভাড়া মওকুফ করার আন্দোলনে কাতারে সামিল হচ্ছেন। 

এই কাতারে সিলেটও পিছিয়ে নেই উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, সিলেটের সাংস্কৃতিক কর্মীরাও কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ও সহমর্মিতা পোষন করেন। সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটও একাত্মতা ঘোষণা করে। সেখানে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সিলেটের বিরুদ্ধাচারণ কেবল একটি অনাকাঙ্খিতই ঘটনাই নয়, সর্বোপরি অনভিপ্রেত। 

এই বিষয়ে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমেদ চৌধুরী মিশু বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ শিল্পকলার হল ভাড়া মওকুফের দাবি জানালে তা কার্যকর হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতেও হল ভাড়া মওকুফের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। কিন্তু সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা অতিউৎসাহী হলে মিলনায়তন ভাড়া মফকুফ না করার জন্য ঢাকায় একটি আবেদনপত্র  পাঠিয়েছেন। যা সিলেটের সব শ্রেণীর সংস্কৃতি কর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ অবস্থার সৃষ্টি করেছে।’

তিনি বলেন, আমরা সংস্কৃতিকর্মীরা মনে করি, এ দায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি সিলেটকেই বহন করতে হবে। যেখানে ঋত্বিক সংস্কৃতি ও নাট্যজনরা ভাড়া মওকুফের আন্দোলনে সরব ভ‚মিকা নিচ্ছেন, সেখানে সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমি কোনভাবেই এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে না। সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট, জেলা শিল্পকলা একাডেমি সিলেটের এমন কাল্পনিক মিথ্যা অজুহাতের তীব্র প্রতিবাদ ও অসন্তোষ জানাচ্ছে। একইসঙ্গে শিল্পকলার বিকাশ লাভে মিলনায়তন ভাড়া মফকুফের জোর দাবি জানাই। 

তবে বিরুদ্ধাচারণ নয়, বরং বিষয়টি ভুল বুঝাবুঝি বলে দাবি করেছেন জেলা শিল্পকলা একাডেমি সিলেটের সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা অসিত বরণ দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, সংস্কৃতি কর্মীদের কোনো দাবির সঙ্গে বিরুদ্ধাচারণ আমি করতেই পারি না। কারণ আমি নিজেও একজন সংস্কৃতি ও নাট্যকর্মী। সংস্কৃতি কর্মীদের যেকোনো দাবির সঙ্গে আমার সহমত সবসময় আছে এবং থাকবে। 

সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমির বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে মহাপরিচালক বরাবর চিঠি পাঠিয়েছিলেন উল্লেখ করে অসিত বরণ বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর ধরে এবং নবায়ন ও সংস্কারের জন্য ৩ বছর, এই ৫ বছর ধরে জেলা শিল্পকলা একাডেমি সিলেটে হল ভাড়ার কোনো ব্যবস্থাপনা নেই এই বিষয়টি তুলে ধরেছি। যেকারণে আমার ৯ মাসের হল ভাড়া বকেয়া রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমাদের স্থানীয় কোনো আয় নেই। আমার পত্রে, এসব বিষয় মহাপরিচালককে আমি অবহিত করেছি মাত্র। এই চিঠিতে সংস্কৃতিকর্মীদের দাবির সঙ্গে বিরুদ্ধাচারণের কোনো কিছুই উল্লেখ নেই। 

মিশ্র প্রতিক্রিয়ার কারণে তিনি পত্রটি প্রত্যাহার করেছেন জানিয়ে বলেন, আমার এই চিঠি প্রেরণের পর থেকে সিলেটের সংস্কৃতি কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এতে করে একটা ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। তাই আমি পত্রটি আজ (গতকাল) প্রত্যাহার করেছি। 

আরসি-০৭