নগরে বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালুর তাগিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক


সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১
১২:১২ পূর্বাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১
১২:১২ পূর্বাহ্ন



নগরে বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালুর তাগিদ
# আমরা চাই যতদ্রুত সম্ভব নগরে গণপরিবহন বাড়াতে-মেয়র আরিফ, # প্রশাসনের নির্দেশনা পেলেই পর্যাপ্ত বাস নামাতে পারবে বিআরটিসি

সিলেট নগরে গণপরিবহন সঙ্কট চরমে পৌঁছেছে। সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বাধ্যবাধকতায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও দীর্ঘসময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে যানবাহন পাচ্ছেন না যাত্রীরা। নগরবাসী ও নাগরিক প্রতিনিধিরা মনে করছেন, নগরে গণপরিবহন হিসেবে বিআরটিসি বা অন্যান্য বাস নামলে কমবে দুর্ভোগ। এ দিকে নগরে বাস নামাতে প্রস্তুত রয়েছে বিআরটিসি। প্রশাসনের নির্দেশনা পেলেই তারা বাস নামাতে পারবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

জানা যায়, গণপরিবহণ নিয়ে সিলেটবাসীর দুর্ভোগ পুরোনো। সিলেটে বাস-মিনিবাসের বদলে গণপরিবহন হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। সিলেটে লাইসেন্স আছে এমন সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। তবে এর বাইরেও আরও অন্তত ১০ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা জেলায় চলছে। গত ১১ আগস্ট করোনার বিধি-নিষেধ শিথিল হলে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া বাড়ে। শ্রমিক ও মালিকদের দাবি, আগে তারা ৫ জন যাত্রী নিয়ে চলাচল করলেও এখন পুলিশ ৩ জনের অধিক যাত্রী পরিবহণে মামলা দিচ্ছে। তাই যাত্রীদেরকে বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে। 

গত ২০ সেপ্টেম্বর ট্রাফিক পুলিশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের নানাভাবে হয়রানি করছে বলে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ। তাদের ৬ দফা দাবি না মানলে আগামী ৩ অক্টোবর থেকে সিলেট জেলায় অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করা হবে বলেও ঘোষণা দেন তারা। 

তবে পুলিশ জানিয়েছে, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ৩ জনের বেশি যাত্রী নেওয়া বেআইনী। এরপর থেকেই প্রতিদিন চালক ও যাত্রীদের মধ্যে ঘটছে অনাকাঙ্খিত ঘটনা। আর বাধ্যবাধকতার কারণে রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েও সিএনজিচালিত অটোরিকশা পাচ্ছেন না যাত্রীরা। যদিও বিআরটিএ জানিয়েছে, সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে গণপরিবহণ হিসেবে ব্যবহার অবৈধ। 

নগরের বন্দরবাজার এলাকায় পথচারী আহমদ হোসেন বলেন, ‘দ্বিগুন ভাড়া দিয়েও গাড়ির (সিএনজিচালিত অটোরিকশা) জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়। ভাড়া নিয়ে প্রায়ই চালকের সঙ্গে বাক-বিতন্ডা করতে হয়। নগরে বাস সার্ভিস পাওয়া গেলে আমাদের খুব সুবিধা হত।’

এদিকে গণপরিবহন সঙ্কট কমাতে গত ২০০৮ সালে নিটলস মোটরসের ৩৫ টি মিনি বাস নিয়ে ‘টাউন বাস’ সার্ভিস নামে ব্যক্তি উদ্যোগে সিলেটে গণপরিবহন সেবা চালু হয়েছিলো। তবে নানা কারণে লোকসানের মাথায় তা বন্ধ হয়ে যায়। আর গত ২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে নগরে চলতে শুরু করে নগর এক্সপ্রেস। ৪১ টি বাস নিয়ে এ সেবার চালুর কথা থাকলেও প্রথম দিকে নগরে বাস নামে ২১টি। আর বর্তমানে নগরে বাস চলাচল করছে ১৪ থেকে ১৫টি। প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় হলেও এখনো নগরবাসীকে পুরোপুরি সন্তুষ্ট করতে পারেনি নগর এক্সপ্রেস। যদিও সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও নগর এক্সপ্রেস সিটি বাস মালিক গ্রæপের আহবায়ক মখলিছুর রহমান কামরানের দাবি, অটোরিকশা চালকদের চাপের কারণে তারা রুট বাড়াতে পারছেন না। 

তবে নগরে গণপরিবহন সঙ্কট কমাতে বাস নামাতে চায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) সিলেট। বিআরটিসি সিলেট ডিপো সূত্রে জানা যায়, তাদের কাছে চারটি নতুন দ্বিতল বাস ও চারটি একতলা বাস রয়েছে। জেলা প্রশাসন বা সিটি করপোরেশনের নির্দেশনা পেলে তারা তা নগরে নামাতে প্রস্তুত। এ সব বাস দিয়ে কম টাকায় নগরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত করতে পারবেন নগরবাসী। 

এ বিষয়ে বিষয়ে বিআরটিসি সিলেট ডিপোর ম্যানেজার (অপারেশন) মো. জুলফিকার আলী সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমাদের কাছে পর্যাপ্ত বাস আছে। যদি জেলা প্রশাসন বা সিটি করপোরেশন আমাদের নির্দেশনা দেন তাহলে আমরা নগরে বাস নামাতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘বেশ কয়েক মাস আগে মধ্যরাতে নগরের বন্দরবাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত আমরা পরীক্ষামূলক ভাবে বিআরটিসির দ্বিতল বাস চালাই। এ সময় সড়কের কোনো স্থানে বাধা পাইনি। এছাড়া যেসব সড়কে বৈদ্যুতিক তারের জটিলতা রয়েছে সেসব সড়কে একতলা বাস নামানো যাবে।’

এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট মিররকে বলেন, ‘নগরের ট্রাফিক সিস্টেমের উপর নির্ভর করে আমরা একটি পরিকল্পনা করছি। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে এই পরিকল্পনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই যতদ্রæত সম্ভব নগরে গণপরিবহন বাড়াতে।’

আর গণপরিবহন সঙ্কট নিয়ে জানতে চাইলে সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘সিলেটে গণপরিবহন সঙ্কট নেই।’

তবে সিলেটের নাগরিক প্রতিনিধিরা মনে করেন সিলেটের পরিবহন সঙ্কট পুরোনো। এই সঙ্কট দূর করতে বাস নামাতে হবে। এতে করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের জিম্মি দশা থেকে নগরবাসী মুক্তি পাবেন। 

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, ‘নগরে গণগণপরিবহন সঙ্কট দীর্ঘদিনের। এতে করে অটোরিকশা চালকদের কাছে নগরবাসী জিম্মি হয়ে আছেন। এই অবস্থায় নগরে বিআরটিসি বাসকে আমাদের স্বাগত জানানো উচিত। বিআরটিসি বাস নামলে কম টাকায় নগরবাসী সেবা পাবেন। আর নগরের বিভিন্ন পয়েন্টে যদি যাত্রীরা এ সেবা তান তাহলে বিআরটিসিও লাভবান হবে।’

নগর এক্সপ্রেস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নগর এক্সপ্রেসকে শুধু নগরের সার্ভিস দিতে হবে। নগরের প্রতিটি পয়েন্টে যাতে নগরবাসী তাদের সেবা পান।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নগরে গণপরিবহন সঙ্কট দূর করতে বিআরটিসি বাস নামানো প্রয়োজন। এছাড়া এখন তো প্রতিযোগিতার যুগ। সড়কে যারা ভালো সেবা দিবে তারাই টিকা থাকবেন।’

এদিকে সিলেটে থেকে বর্তমানে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও ভোলাগঞ্জে বাস সার্ভিস চালু আছে বিআরটিসির। মৌলভীবাজারে বাস সার্ভিস আপাতত বন্ধ রয়েছে। এসব রুটে বাস চালুর সময় শ্রমিকদের তোপের মুখে পড়তে হয় বিআরটিসিকে। ভাঙচুর করা হয় বিআরসিটির বাস ও অফিস। ফলে নগরেও বাস চালু করলে শ্রমিকদের তোপের মুখে পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন বিআরটিসি সিলেট ডিপোর ম্যানেজার (অপারেশন) মো. জুলফিকার আলী। 

তিনি বলেন, ‘আমরা যে রুটেই বাস সার্ভিস চালু করেছি সেখানেই শ্রমিকদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। তাই নগরে বাস চালুর নির্দেশনা পেলে তখনও হয়ত তাদের তোপের মুখে পড়তে হবে।’

বিএ-০২