সংস্কার হয়নি জামালগঞ্জের সেই সেতুর সংযোগ সড়ক

বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ


মার্চ ২১, ২০২২
০৫:৫০ অপরাহ্ন


আপডেট : মার্চ ২১, ২০২২
০৫:৫০ অপরাহ্ন



সংস্কার হয়নি জামালগঞ্জের সেই সেতুর সংযোগ সড়ক

দীর্ঘদিন ধরে ভাঙ্গাচোরা জামালগঞ্জের বেহেলী-রাজাপুর সেতুর সংযোগ সড়ক। ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চললেও সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। ৬ মাস আগে সিলেট মিরর-এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হলেও টনক নড়েনি প্রশাসনের। 

এ ছাড়া বেহেলী থেকে সাচনা বাজারমুখী সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সাঁটানো অধিকাংশ নির্দেশিকা বোর্ড ভঙ্গুর অবস্থায় মাটিতে পতিত হওয়ার বিষয়টিও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ভাঙনে বেহাল রাজাপুর সেতু ও ভঙ্গুর নির্দেশিকা বোর্ডের বিষয়টিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক না নড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সড়কে চলাচলরতরা। 

বেহেলী বাজারে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থাকায় সাচ্না বাজার-বেহেলী সংযোগ সড়কটি এমনিতেই জনগুরুত্বপূর্ণ। এ সড়ক দিয়ে দুই উপজেলার অন্তত ৩০-৪০টি গ্রামের মানুষ নিয়মিত যাতায়াত করে। এ অবস্থায় উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের দৃষ্টি এড়ানোর চেষ্টায় জনমনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজাপুর সেতুর বেহেলীমুখী এপ্রোচের বেশির ভাগ অংশই ভেঙ্গে হেলে পড়ে আছে। সেতু থেকে নামার খাড়া অংশটুকু পাড়ি দিতে গিয়ে চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হচ্ছে যাত্রীবাহী যানবাহনকে। দিনের বেলায় সেতু থেকে ভাঙা এপ্রোচ নজরে আসলেও রাতের অন্ধকারে সেটি তেমন চোখে পড়ে না। যেকোন সময় গাড়ি উল্টে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন চালক-যাত্রীরা। সেতুর দক্ষিণ অংশও ধীরে ধীরে ভেঙে যাচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে বর্ষায় মাটি সরে গিয়ে পরিস্থিতি আরও প্রকট আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। 

এছাড়া সড়কের অংধিকাংশ নির্দেশিকা বোর্ড ভেঙে মাটির সাথে মিশে গেছে, কোনোটি ভেঙে সড়ক তীরবর্তী জমিতে গিয়ে পড়েছে। আবার কোনটির মাটিতে পোঁতার শেষচিহ্নটুকু থাকলেও আশেপাশে এর খন্ডিত অংশের দেখা পাওয়া যায়নি। এতে করে স্কুল, মন্দির, মসজিদ ও টার্নিং পয়েন্টে যে প্রয়োজনে নির্দেশিকা বোর্ড সাঁটানো হয়েছিল তা বিঘিœত হচ্ছে বলে জানা গেছে। 

জানা যায়, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী, বেহেলী আলীপুর, মশালঘাট, তিলকই, ইসলামপুর, শিবপুর, চন্ডীপুর, প্রকাশনগর, রাধানগর, রহমতপুর, হরিনগর, পুটিয়া, বাগানী, কুমড়িয়া, রাজাপুর, চিনামারা, শলাচ‚ড়া, বাগহাঁটি, রহিমাপুর, রহিমাপুর গুচ্ছগ্রাম, আরশিনগর, গোপালপুর, নিতাইপুর, বদরপুর, ইনাতনগর, জামালগড়, টেকাটুকিয়া, বীননগর, লক্ষ্মীপুর, উজান তাহিরপুর, ভাটি তাহিরপুরসহ অন্তত ৪০টি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে থাকেন সাচনা বাজার-বেহেলী সংযোগগামী সড়কের রাজাপুর সেতু দিয়ে। বর্তমানে সেতুর এক অংশের সম্মুখস্থলে ভাঙন দেখা দেওয়ায় হুমকির মধ্যে পড়েছে যাতায়াত। 

এ নিয়ে গত বছরের ৩ নভেম্বর দৈনিক সিলেট মিরর-এ একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। তারপরও মেরামত করা হয়নি রাজাপুর সেতুর এপ্রোচ অংশটুকু। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ সেতুর ভঙ্গুর অংশটুকু দ্রুত মেরামতের দাবি জানিয়েছেন। 

সেতুসংলগ্ন রাজাপুর গ্রামের কাজল কান্তি তালুকদার বলেন, এ সেতুর এপ্রোস অংশের ভাঙন গত বর্ষা থেকেই। কিন্তু এতদিন চলে গেলেও সেটি এখন পর্যন্ত ঠিক করা হয়নি। সেতু পার হতে গিয়ে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটছে। সেতুর রাজাপুর অংশে কোন স্পীডব্রেকার না থাকায় বৈশাখ মাসে কৃষিকাজ চলাকালীন সময়ে মোটরসাইকেল ও অটোরিক্সার বেপরোয়া চলাচলে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারে মানুষ। এছাড়া রাস্তার মেইন পয়েন্টগুলোতে যে নির্দেশিকা বোর্ড আছে সেগুলোও ভেঙ্গে গেছে। এগুলো দেখার কেউ নেই। সর্বাত্মক দায়িত্বহীনতাই ঝুঁকির কারণ বলে মনে করছি। 

এ সড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারী বেহেলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. নুর হোসেন বলেন, এই সেতু হওয়ার পর থেকে প্রতি বছরই এখানে ভাঙন দেখা দেয়। গত বছর ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ থেকে সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু এ বছর কেউ এর খোঁজ নেয়নি। ব্রীজ থেকে নামতে গিয়ে প্রায় সময়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও রয়েছে। এপ্রোচের দুই পাশে ব্লক দিয়ে ভালোভাবে কাজ করলে হয়তো ভাঙন এড়ানো সম্ভব। 

বেহেলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুব্রত সামন্ত সরকার বলেন, এপ্রোচের ভাঙন নিয়ে আমাদের এমপি মহোদয় আমাকে সামনে রেখেই সুনামগঞ্জের এলজিইডির দায়িত্বপ্রাপ্ত মাহবুব সাহেবকে বলে দিয়েছেন ঠিক করার জন্য। আর নির্দেশিকা বোর্ড যেগুলো মাটিতে পড়ে আছে সে ব্যাপারে আমি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলব। 

এ ব্যাপারে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান বলেন, এটা ইমার্জেন্সি মেইন্টিনেন্সে দেওয়া আছে। এই বছরের মধ্যে সম্ভবত কাজ হয়ে যাবে। নির্দেশিকা বোর্ডের বিষয়টাও ইমার্জেন্সি মেইন্টিনেন্সের মধ্যেই আছে।

আরসি-০৩