গাছ ঢেকে যায় স্বর্ণলতায়

বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ


মার্চ ২৫, ২০২২
০১:২৫ অপরাহ্ন


আপডেট : মার্চ ২৫, ২০২২
০১:২৫ অপরাহ্ন



গাছ ঢেকে যায় স্বর্ণলতায়

স্বর্ণলতায় ঢেকে গেছে এই বরই গাছটি। এভাবে জড়িয়ে ধরে গাছের বেড়ে ওঠায় মারাত্বক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে এ লতা। ছবিটি জামালগঞ্জের রহিমাপুর গুচ্ছগ্রাম এলাকা থেকে তোলা

ফাগুনের আগুনঝরা দুপুর। সংবাদ সংগ্রহ করতে সম্প্রতি তপ্ত রোদে পথ চলা। চলতে চলতে পথেই দেখা মেলে স্বর্ণলতার। সংবাদ সংগ্রহের শেষ গন্তব্যে ছোটার ফাঁকে দৃষ্টি আটকে যায় সেখানে। জামালগঞ্জের বেহেলী ইউনিয়নের রহিমাপুর গুচ্ছগ্রাম পুকুর পাড়ের একটি বরই গাছ জড়িয়ে গাঢ় সবুজের ধানি জমির সাথে যেন খোশগল্পে মেতেছে স্বর্ণলতার ঝাড়। 

বেহেলীমুখী সড়কঘেঁষা ধান ক্ষেতের তীর আগলে দাঁড়ানো একটি বরই গাছকে আকড়ে ধরে নিজের আধিপত্যের জানান দিচ্ছে এই পরজীবী উদ্ভিদটি। স্বর্ণলতা বরই গাছটিকে এমনভাবে বেষ্টন করে ধরেছে, ফাঁকে ফাঁকে কোনোরকমে পাতা দেখা গেলেও ডালপালার দেখা মেলা ভার। এভাবে আশ্রয় নেওয়া গাছটিকে মুমূর্ষু পথে ঠেলে দিয়ে শিকড়বিহীন শক্তির পরিচয় ফুটিয়ে তুলে স্বর্ণলতা। তাই গাছখেকো এই লতিকাকে গ্রামাঞ্চলের মানুষ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। একসময় হরহামেশা দেখা মিললেও বর্তমানে ঝোপঝাড়, বন-জঙ্গল ও গাছপালা উজাড় হওয়ায় স্বর্ণলতার দেখা তেমন পাওয়া যায় না। 

স্বর্ণলতা হলুদ সোনালি রঙা উজ্জ্বল লতাজাতীয় পরজীবী উদ্ভিদ। মূলকাণ্ড, পাতাহীন নরম ও সরু আকৃতির স্বর্ণলতার জন্ম ছোট কিংবা মাঝারি কোনো গাছকে ভর করে। শূন্যলতা বা অলোকলতা নামেও পরিচিত এটি। যে গাছে জন্ম সে গাছ থেকেই প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে। পরগাছা এই লতা তার আশ্রিত গাছটিকে আষ্টেপৃষ্ঠে ঢেকে ফেলে এবং সেই গাছের ফলন ও বেড়ে ওঠায় মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। স্বর্ণলতা আশ্রয়দাতা গাছের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটিয়ে থাকে। এ জন্য ভেষজ গুণসমৃদ্ধ উপকারিতার বিপরীতে তার বদনামই বেশি। স্বর্ণলতা ছোট্ট মাঝারি যেকোন গাছের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। এ কথাটি সবার জানা থাকলেও তার ঔষধি গুণের কথা অনেকেরই অজানা। 

শীতকালে লতাটিতে ছোট ছোট সাদা ফুল ফোটে। সেই ফুলের ঘ্রাণে আকৃষ্ট হয় পিঁপড়া ও মৌমাছি। গ্রামের শিশু-কিশোরদের কাছেও চোখধাঁধানো এই লতাটি অনেক পছন্দের। গ্রামের মানুষের কাছে স্বর্ণলতা অতি পরিচিত একটি লতিকায় উদ্ভিদ। ডালপালা ও পাতায় সমৃদ্ধ একটি সুসজ্জিত গাছকে জীর্ণদশায় পতিত করতে এর একটুকরো লতা কতটুকু ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে তা কেবল গ্রামের মানুষই জানে। শহরের মানুষ স্বর্ণলতা সম্পর্কে তেমন ওয়াকিবহাল নন। কারণ ইট-কংক্রিটের শহরে এটি দেখা যায় না বললেই চলে। 

গ্রামের ছোট-মাঝারি রকমের জীবন্ত গাছে এর বেড়ে ওঠা। বরই ও বাবলা গাছের মতো কাঁটাযুক্ত গাছই স্বর্ণলতার জন্মানোর উত্তম আশ্রয় বলে মনে করা হয়। লতাটির বৈজ্ঞানিক নাম ঈঁংপঁঃধ জবভষবীধ। ভারতীয় উপমহাদেশেই এর আধিক্য। ভারতে এটি ‘অমর বেল’ এবং নেপালে ‘আকাশ বেলি’ নামে পরিচিত। সারা বিশ্বে ঈঁংপঁঃধ জাতীয় দেড় শতাধিক প্রজাতির স্বর্ণলতা রয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে চার প্রজাতির পাওয়া যায়। 

স্বর্ণলতা একটি একবর্ষজীবী লতা। এটি স্বল্পসময়ে এক লতা থেকে অনেক শাখা লতার বিস্তৃতি ঘটিয়ে পুরো গাছকে জড়িয়ে ফেলে। এ লতাটি লোকজ চিকিৎসাসহ আয়ুর্বেদ চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর রয়েছে নানা ওষধি গুণ। এটি বায়ুনাশক, পেটব্যথা, জন্মনিরোধ, কৃমিনাশক, রক্তদুষ্টিনাশক, পিত্ত ও কফনাশক, বিরেচক, খোসপাঁচড়া নিবারণকারী হিসেবে কার্যকরী। স্বর্ণলতার নির্যাস পেটফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্যেও বেশ উপকারী। এছাড়া বিভিন্ন দেশে হাড়ের চিকিৎসা, জন্ডিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, যকৃতের রোগ, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সার ইত্যাদি কঠিন রোগ নিরাময়ে স্বর্ণলতার ব্যবহার সম্পর্কে জানা যায়।

আরসি-০৯