সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
এপ্রিল ০৬, ২০২২
০৪:৩৭ অপরাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ০৬, ২০২২
০৪:৩৭ অপরাহ্ন
পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানির তোড়ে ভেঙে গেছে জেলার আরও পাঁচটি ফসলরক্ষা বাঁধ, সঙ্গে ডুবছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে ঢলের পানিতে শাল্লা ও ধর্মপাশা উপজেলার পাঁচটি বাঁধ উপচে হাওরে পানি প্রবেশ করেছে। পানি ঢোকার কিছুক্ষণ পরেই বাঁধগুলো ধীরে ধীরে ভাঙতে থাকে। এরই মধ্যে শতাধিক হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তালেব ও ধর্মপাশার ইউএনও মো. মুনতাসির হাসান।
জানা যায়, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে চন্দ্রসোনার থাল হাওরের ৭৫ নম্বর প্রকল্পের ডুবাইল বরুণ কাইচ্ছা বাঁধ ভেঙে বোরো ফসল তলিয়ে যেতে শুরু করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর পর এ বাঁধ ভেঙে যায়। একই দিনে গুরমার হাওরের ১১৫ নম্বর প্রকল্পের অধীনে স্লুইচগেট দিয়ে হাওরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এছাড়া সোনামড়ল হাওরের ৫৪ নম্বর প্রকল্পের বাঁধ ভেঙে ও পানি উপচে জয়শ্রী ইউনিয়নের কয়রানী হাওরে প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
গত সোমবার বিকেলে ধর্মপাশা কংস নদীর পানি শয়তানখালী খাল হয়ে রুইবিল, কাইল্যানী, বুন্না, নয়াবিল ও ডুলিজার হাওরের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। পরে স্থানীয়রা ওই খালের নোয়াবন্দ-আবুয়ারচর গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করে বাঁধ দিয়ে তা প্রতিরোধ করেন।
অপরদিকে রাতেই সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের প্রতাপপুর গ্রাম সংলগ্ন অরক্ষিত স্লুইচগেট হাওরে পানি প্রবেশ করতে থাকলে স্থানীয়রা তা প্রতিরোধ করেন
ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনতাসির হাসান বলেন, ওভার ফ্লো (উপচে পড়া) হয়ে বাঁধে পানি প্রবেশ করেছে। এতে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা পরে জানাতে পারব।
অন্যদিকে শাল্লা উপজেলার কৈয়ারবন ও পুটিয়া হাওরে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছে। এ দুই হাওরে ৪০ হেক্টর ফসলি জমি নিমিষেই তলিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
গতকাল বিকেলের দিকে এ বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ করে। তবে এ বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতার বাইরে বলে জানিয়েছেন ইউএনও।
ইউএনও আবু তালেব জানান, কৈয়ারবন ও পুটিয়া হাওরে প্রায় ৪০ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে এ বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতার বাইরে। এরপরও আমরা চেষ্টা করেছি ফসলি জমি রক্ষা করার। কিন্তু উজানের পাহাড়ি ঢল ও নদীর পানি বাড়ায় আর রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
ধর্মপাশা প্রতিনিধি জানান, উপজেলায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে কয়রানী হাওরের ৩০ হেক্টর জমির আধাপাকা বোরো ধান তলিয়ে গেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের সানবাড়ী বাজারসংলগ্ন সোমেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে হাওরে ঢুকে এই ফসলডুবির ঘটনা ঘটেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কয়রানী হাওরে ৩০ হেক্টর বোরো জমি আছে। গত সোমবার রাতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির চাপ বেড়ে গিয়ে সোমেশ্বরী নদীর পাড় উপচে পড়ে। এতে নদীর দক্ষিণ পাশে থাকা কয়রানী হাওরে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে ঢলের পানি ঢুকতে শুরু করে। বেলা তিনটা পর্যন্ত হাওরের ৩০ হেক্টর জমির আধাপাকা বোরো ধান তলিয়ে গেছে।
উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের বানারসীপুর গ্রামের কৃষক বাবুল মিয়া (৩৫) বলেন, ‘ঢলের পানি নদীর ফার দিয়া উপচাইয়া আমরার কয়রানী আওরে (হাওর) ঢুইক্যা আমরার জমির আধাফাকনা ধান হানিত তল অইয়া গেছে। আমার মতন অনেকেরেই এই সর্বনাশ অইছে। অহন আমরা হারা বছর খাইবাম কিতা?’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি নদীর তীর উপচে কয়রানী হাওরে ঢুকে ৩০ হেক্টর জমির আধাপাকা বোরো ধান তলিয়ে গেছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
আরএম-০৮