মরিয়া হয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি


এপ্রিল ০৭, ২০২২
০৩:৩২ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ০৭, ২০২২
০৩:৩৩ অপরাহ্ন



মরিয়া হয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা
শাল্লায় ফসলরক্ষা বাঁধে গর্ত, স্বেচ্ছাশ্রমে ১০ গ্রামের কৃষক

সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সুনামগঞ্জ জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোথাও কোথাও বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে হাওরে, এতে ডুবছে ধান। অনেক জায়গায় ঝুঁকির মুখে পড়েছে বাঁধ, যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। বাধ্য হয়ে কোথাও কোথাও আধা পাকা ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষক। আর মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন বাঁধ রক্ষার।

শাল্লা প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার সুবিশাল ছায়ার হাওরে পাউবোর ৯০ নম্বর বাঁধে মারাত্মক কয়েকটি চোরাই গর্ত (লিকেজ) দেখা দিয়েছে। গর্ত হওয়ায় ওই বাঁধটি রয়েছে হুমকির মুখে। যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যেতে পারে ছায়ার হাওরের বোরো ফসল। বাঁধ রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন এলাকার দশটি গ্রামের হাজারো কৃষক।

গতকাল বুধবার বেলা ১টায় ওইসব গর্ত দেখা দিলে এলাকাবাসি ঝাঁপিয়ে পড়েন গর্ত/লিকেজগুলো আটকাতে। লিক বন্ধ করতে বাঁধে জিও কার্পেটিংসহ মাটিভর্তি বস্তা ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাঁধের লিকেজ বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। আস্তে আস্তে লিকেজগুলো বড় হচ্ছে।

জানা যায়, এ বছর ছায়ার হাওরে শুধু শাল্লা অংশে ৬ হাজার ৪০০ হেক্টর, ইটনার ধনপুর ও খালিয়াজুরির কৃষ্ণপুর অংশে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের বোরো আবাদ করা হয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, ইউএনও মো. আবু তালেব, ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্বজিত চৌধুরী, মো. আব্দুস সাত্তার মিয়া, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিধান চন্দ্র চৌধুরী ও পাউবোর শাখা কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আব্দুল কাইয়ূমসহ এলাকার প্রবীণদের পরামর্শে এলাকার কৃষকগণ বাঁধ রক্ষায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বাঁধটি নির্মাণে পিআইসি সভাপতি শৈলেন চন্দ্র দাসের নানা অনিয়ম গাফিলতির অভিযোগও রয়েছে সংশ্লিষ্ট হাওরপাড়ের কৃষকদের।

হরিপুর গ্রামের আফাল দাস বলেন, বাঁধের কাছ থেকে মাটি কেটে বালু মাটি দেওয়ার কারনেই এখন বাঁধটি হুমকির মুখে। কয়েকটি জায়গায় গর্ত হয়ে হাওরে পানি প্রবেশ করছে। তাই নিজেদের ফসল রক্ষার্থে ছেলে মেয়ে নিয়ে বাঁধে মাটি কাটতে এসেছি। কারণ এই ফসলের উপরেই আমাদের জীবিকা নির্ভর করে।

বাহাড়া ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্বজিত চৌধুরী নান্টু বলেন, বালু মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। যার ফলে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি এখন হুমকির মুখে। পাউবো’র দুর্নীতির কারণেই উপজেলাবাসীর একমাত্র বোরো ফসল অকাল বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে। পাউবো’র গাফিলতির কারণে উপজেলার চারটি হাওরের বোরো ফসল এখন পানির নিচে। তাই কৃষকদের ক্ষতি পূরণের দায়ভার পাউবোকে নিতেই হবে।

শাল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী (এসও) আব্দুল কাইয়ুম জানান, নদীর পানি দিনদিন বৃদ্ধি পাওয়ায় ৯০ নম্বর প্রকল্পের বাঁধে ফাটল ধরেছে। আর এই বাঁধে বালু মাটি থাকায় কয়েকটি জায়গা দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। তবে উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীসহ বাঁধ রক্ষায় কাজ করছে। আশা করছি বাঁধটি টিকে থাকবে। হাওরের ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

তাহিরপুর প্রতিনিধি জানান, উপজেলার ছোটবড় ২৪টি হাওরের বেশ কয়েকটি ফসল রক্ষা বাঁধ চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ফলে স্থানীয় কৃষক, জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের লোকজন দিনে ও রাতে বাঁধ রক্ষায় কাজ করছেন। গত সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগে মাইকিং করে কৃষকসহ সর্বস্তরের মানুষকে বাঁধ রক্ষায় ওড়া, কোদাল নিয়ে হাওরে অবস্থান করার অনুরোধ জানানো হয়।

উপজেলা প্রশাসনের ওই আহŸানের পর সর্বস্তরের মানুষ বাঁধ রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন। দিন-রাত কাজ হচ্ছে।

শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, উপজেলার খাই হাওরের শালদিকা, ভেদাখালি ও রাঙ্গামাটি হাওরের বাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ায় মঙ্গলবার ভোর থেকে এসব বাঁধের আশপাশের কৃষকেরা নিজ উদ্যোগে বাঁধ টেকসই করার জন্য হাওরে অবস্থান করছেন। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা আবুয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ উপজেলার বৃহৎ খরছার হাওরের হরিমনের ভাঙ্গা নামক বাঁধে ভোরে ফাটল দেখা দেয়। কৃষকেরা খবর পেয়ে দ্রæত বাঁশ-মাটি ফেলে পানি প্রবেশ বন্ধ করেন।

আরএম-০২