নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ১৯, ২০২২
০২:৩৩ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুলাই ১৯, ২০২২
০৩:০৬ পূর্বাহ্ন
১৭ পদাতিক ডিভিশনের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল হামিদুল হকের হাতে সিলেট ক্লাব লিমিটেডের পক্ষ থেকে বন্যা আক্রান্ত মানুষের জন্য অনুদানের চেক হস্তান্তর করা হয়।
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় মানুষ যখন দিশেহারা। মানুষ যখন বিপাকে। বন্যার আঘাতে সবহারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন মানুষ। শেষ আশ্রয় হয়েছে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে। এমন সময় মানবতার ডাকে এসব দিশেহারা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সিলেট ক্লাব লিমিটেড। বন্যার ভয়াবহতার শুরু থেকেই বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা অসহায় মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে রান্না করা খাবার। রান্না করা খাবার বিতরণ করেই থেমে থাকেনি সিলেট ক্লাব। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্লাবের পক্ষ থেকে প্যাকেট ভর্তি খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল সংস্থা ও বিভিন্ন সংগঠনকেও দেওয়া হয় সহায়তার চেক।
![]()
ক্লাব এডমিন মুফতি তাহের আহমদ সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমরা প্রথমে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করলেও পরবর্তীতে নিঃস্ব প্রায় সাড়ে চার হাজার পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়েছি প্যাকেট ভর্তি খাদ্যসামগ্রী। যেসব দুর্গম এলাকায় আমরা যেতে পারিনি সেসব এলাকার জন্য বাংলাশে সেনাবাহিনীরদায়িত্বশীলরে কাছে সহায়তার চেক হস্তান্তর করেছি। শুধু তা-ই নয় আমরা ‘কলের গাড়ী’-কেও দিয়েছি উৎসাহের চেক।’
![]()
জানা যায়, সিলেট ক্লাব লিমিটেড যাত্রা শুরু করে ২০০৮ সালের ২০ জানুয়ারি। এরপর থেকেই আড্ডা, গান, খেলায় মুখরিত হতে থাকে ক্লাবটি। উজ্জ্বীবিত ক্লাব সদস্যরা সব সময় ছিলেন সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ। শুরু থেকেই যেকোনো দুর্যোগে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন সিলেট ক্লাবের সদস্যরা। বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে সরব হয়ে উঠেন ক্লাব সদস্যরা। বন্যার ভয়াবহতার শুরু থেকেই করোনাকালের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার আরও বেশি সরব হয়ে উঠেন তারা।
ক্লাব সূত্রে জানা যায়, এবারের বিশাল এ কর্মযজ্ঞে সম্মুখ থেকে নেতৃত্ব দেন সিলেট ক্লাব লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট মুহিতুল বারী রহমান। সফলভাবে এ কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করায় ক্লাব সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। মুহিতুল বারী রহমান সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমাদের সামান্য উদ্যোগে যেভাবে ক্লাব সভ্যরা সাড়া দিয়েছেন তা ছিল আমার জন্য কল্পনাতীত। বিশেষ করে সিলেটের বাইরের সদস্যরা যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তা ছিল আমাদের প্রেরণার উৎস।’
তিনি জানান, ট্রাক, পিকআপ ভ্যান আর ভাড়া করা নৌকায় শহরতলী থেকে শুরু করে সিলেট ও সুনামগঞ্জের দুর্গম এলাকায় পৌঁছে ওেয়া হয় এসব ত্রাণসামগ্রী। শুরুতে শহরতলীর বাইশটিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র, বাইশটিলা আইডিয়াল স্কুল, এম কামাল মডেল স্কুল, ছড়ছড়ি ও বাহরকান্দি গ্রামে এবং নগরের কানিশাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র, ঘাসিটুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জালালাবাদ স্কুল এন্ড কলেজ ঘাসিটুলা, ঘাসিটুলা লামাপাড়া, মজুমদারপাড়া, বনকলাপাড়া, লামা টুকের বাজার, নলকট, মাসুকবাজার, সোনাতলা, তেমুখিতে রান্না করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হয়। এসব রান্না করা খাবার প্যাকেটজাত করার দায়িত্বে ছিলেন ক্লাব কর্মচারী রুমিন মিয়া ও নজরুল ইসলাম।
![]()
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ক্লাবের দৈনন্দিন কাজের পাশে বন্যার্ত মানুষের জন্য কাজ করতে পেরে ভালো লাগছে। এমন মানবিক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারাও সৌভাগ্যের।’
ক্লাব প্রেসিডেন্ট মুহিতুল বারী রহমান বলেন, বন্যায় কাজ করছেন এমন সংস্থা ও সংগঠনকে আমারা কয়েক লক্ষ টাকার চেক হস্তান্তর করেছি। বন্যাকবলিত প্রায় সাড়ে চারহাজার পরিবারের মধ্যে আমরা খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ক্ষিণ সুনামগঞ্জের বীরগাঁও ও রগাপাশা ইউয়িনের বিভিন্ন গ্রাম, তাহিরপুর উপজেলার পন্ডুপ, ইকরামপুর, জগদিশপুর, চিলাইন তাহিরপুর, মধ্যনগর উপজেলার কামাউড়া, খলাহাঠি, সাহাপুর, গলহা, নিয়ামতপুর, ছাতকের দোলার বাজার, ফকির পার, কুশি, কাঠাশলা, রাউলি, মঈনপুর এবং ছৈলা আফজলাবাদ ইউনিয়নের সরিষপুর গ্রাম।
সূত্র জানায়, খাদ্যসামগ্রী বিতরণকালে ক্লাব প্রেসিডেন্ট মুহিতুল বারী রহমান ও ক্লাব এডমিন মুফতি তাহেরের সঙ্গে বিভিন্ন সময় উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের ডাইরেক্টর ফুড সুমনুজ্জামান চৌধুরী, ডাইরেক্টর কালচার ইকবাল হোসেন, ডাইরেক্টর স্পোর্টস খাঁন মো. ফরিদ উদ্দিন, ডাইরেক্টর একোমেডেশন জয়দীপ দাস সূজক, ক্লাব সভ্য কাওসার হোসেন শাহীন, রথীন্দ্র কুমার দাস নিশু ও রাজীব রায়।
ক্লাব এডমিন মুফতি তাহের আহমদ সিলেট মিররকে বলেন, বন্যার্ত মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের সময় ক্লাব কর্মকর্তা, কর্মচারীদের মধ্যে আজমল আহমদ, নাঈম উদ্দিন, আশিষ তালুকদার, রুমিম মিয়া, নজরুল ইসলাম, সাদিকুর রহমান, এজহারুল ইসলাম, সাজ্জাদুর রহমান, আমির হোসেন, কামাল হোসেন, জেরী স্যান্ডী, মাসুদ পারভেজ, প্রদ্যুত তালুকদার, মুশফিক অমানুষিক পরিশ্রম করেছেন। এদের কেউ খাবারসামগ্রী প্যাকেট করেছেন, কেউ ছুটেছেন বন্যার্ত মানুষের কাছে খাবারের প্যাকেট নিয়ে।
সিলেট ক্লাব লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট মুহিতুল বারী রহমান দেশবাসীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘এবারের বন্যায় দেশবাসী যেভাবে সিলেটবাসীর প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়েছেন তা নজিরবিহীন ছিল। প্রবাসীরাও যেভাবে অকুন্ঠ সহযোগিতা করেছেন তাও ছিল প্রশংসাযোগ্য।’
সিলেট ক্লাব প্রেসিডেন্ট বলেন, দুর্গত মানুষের পাশে অনেকেই দাঁড়িয়েছেন কিন্তু মানুষের দুর্দশা এখনও চলমান। বিশেষ করে সহায় সম্বল হারানো মানুষের পূনর্বাসন এখন সবচেয়ে জরুরি। সিলেট ক্লাব এই পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় কাজ করতে চায়। এ জন্য প্রয়োজনে আমরা সামগ্রিক উদ্যোগ নেওয়ার চিন্তা করছি। তিনি জানান, ইতোমধ্যে ক্লাবের যে সব কর্মচারী বন্যায় ভিটে মাটি হারিয়েছেন, তারে পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ তহবিলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিএ-০১