মহানগর বিএনপির বিভক্তি প্রকাশ্যে

নাবিল হোসেন


আগস্ট ০৩, ২০২২
০৭:৫১ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০৩, ২০২২
০৮:০১ অপরাহ্ন



মহানগর বিএনপির বিভক্তি প্রকাশ্যে

সিলেট মহানগর বিএনপির বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। কয়েকদিন ধরে এ নিয়ে কানাঘুষা চললেও গতকাল মঙ্গলবার আলাদাভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করায় বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। দলের নেতারা বলছেন, দলের অভ্যন্তরে কিছু সমস্যা আছে; দ্রুত সেটি সমাধান হয়ে যাবে। 

ভোলায় দলীয় কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় বিএনপির এক নেতা গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল তিনটার দিকে নগরের আলিয়া মাদরাসা মাঠ থেকে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন মহানগর শাখার সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকী। নগর ঘুরে রেজিস্ট্রারি মাঠে গিয়ে সমাবেশ হয়। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকীসহ বিএনপির অন্য নেতাকর্মীরা। তবে সমাবেশ শুরুর আগেই সমস্যা শুরু হয়। সঞ্চালনার দায়িত্ব কে পালন করবেন তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। 

মিফতা সিদ্দিকীর অনুসারীরা জানান, সাংগঠনিক বিধি অনুযায়ী সঞ্চালনা করার কথা দলের সদস্যসচিবের। কিন্তু আহ্বায়ক চাইছিলেন সদস্যসচিবের সঙ্গে আরও একজন নেতা যৌথভাবে সঞ্চালনা করুক। এ সময় তারা সমাবেশ স্থল থেকে মিছিল নিয়ে বের হয়ে যান। পরে আহŸায়ক অন্যদের নিয়ে সমাবেশ করেন। 

বিকেলে ‘সিলেট সিটি বিএনপি’ নামের একটি ইমেইল থেকে গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। মিফতা সিদ্দিকীর উপস্থিতিতে গতকাল মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। মিছিল ও সমাবেশে মিফতা সিদ্দিকী ও তার অনুসারীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম আহবায়ক সুদিপ রঞ্জন সেন বাপ্পু, রুকশানা বেগম শাহনাজ, সালেহ আহমদ খসরু, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন, সিলেট মহানগর শ্রমিক দলের সভাপতি আব্দুল আহাদ প্রমুখ। 

অন্যদিকে, অপর এক ইমেইলে আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশের সংবাদও গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। যুগ্ম আহবায়ক রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর পরিচালনায় ওই সমাবেশে বক্তব্য দেন, মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নাসিম হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির শাহীন, জিয়াউল গণি আরেফিন জিল্লুর, নজিবুর রহমান নজিব, সদস্য সৈয়দ তৌফিকুল হাদী, হুমায়ুন আহমদ মাসুক, নুরুল আলম সিদ্দিকী খালেদ, আফজল উদ্দিন, শামীম মজুমদার, সৈয়দ সাফেক মাহবুব, মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব শাহ নেওয়াজ বক্ত তারেক, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আজিজ হোসেন আজিজ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব দেওয়ান জাকির, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মকসুদ আহমদ, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সুদীপ জ্যোতি এষ, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দিলওয়ার হোসেন দিনার, মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি আহসান, মহানগর শ্রমিক দলের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম জীবন, মহানগর কৃষক দলের যুগ্ম আহŸায়ক হাবিবুর রহমান হাবীব প্রমুখ। 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আবদুল কাইয়ুম পংকি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে মিফতাহ বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। 

মহানগর বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকেই কমিটির বেশ কয়েকজন যুগ্ম আহ্বায়ক মহানগরের সদস্যসচিবের বিরোধীতা করে আসছেন। মিফতা সিদ্দিকী নিজস্ব বলয় গড়ে তুলছেন বলে অভিযোগ তাদের। এ নিয়ে বিভক্তি বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গত ১৮ জুলাই মহানগর বিএনপির বর্ধিত সভায় মিফতাহ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে দলে ভাঙনের অভিযোগ এনে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন একাধিক যুগ্ম আহ্বায়ক। এ অবস্থায় মিফতাহ ওই সভায় বক্তব্য দিতে গেলে বাঁধার মুখে পড়েন। এ নিয়ে সভায় হট্টগোল হয়। পরে অবশ্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। 

এরপর গত ৩০ জুলাই সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানের উপস্থিতিতে মহানগর বিএনপির সমাবেশে দেখা যায়নি মিফতা সিদ্দিকীকে। গত সোমবার সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত গায়েবানা জানাজায়ও তিনি ছিলেন না। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকি সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমাদের সমাবেশ ছিল, মিছিলের খবর জানি না। মিফতা সিদ্দিকী আমাদের সমাবেশে এসেছিলেন। কিন্তু পরে অভ্যন্তরীণ কারণে কিছুটা সমস্যা হয়।’ 

কয়েকটি সভায় মিফতা সিদ্দিকীর অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সে (মিফতা সিদ্দিকী) অসুস্থ বলে আমাকে জানিয়েছিল। ভেতরে অন্যকিছু থাকলে বলতে পারছি না।’

বিভক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে সদস্যসচিব মিফতা সিদ্দিকী বলেন, ‘সাধারণভাবে চিন্তা করলে যেখানে সদস্যসচিব উপস্থিত তার সঙ্গে আরেকজনের পরিচালনার কথা বলাটাই বিভক্তির সৃষ্টি করা। এই ঘটনার পর কর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় আমি সমাবেশস্থল থেকে চলে আসি।’

বিভক্তির বিষয়ে জানতে চাইরে তিনি বলেন, ‘বিএনপি একটি বড় পরিবার, যেখানে কিছু ঘটনা ঘটবে, তার সমাধানও হবে। ফলে এ নিয়ে বিভক্তির কোনো বিষয় দেখছি না।’ 

সাম্প্রতিক কয়েকটি কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার জ্বর-সর্দি ও করোনার উপসর্গ ছিল। তাই উপস্থিত থাকতে পারেনি।’ কিছুদিন আগে মহানগর বিএনপির সভায় তাকে বক্তব্য দেওয়া হয়নি বলে যে তথ্য ছড়ানো হয়েছিল সেটি ভ‚য়া ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। 


এএফ/০২