উদ্বোধনের অপেক্ষায় সিলেটের নান্দনিক বাস টার্মিনাল

মামুন পারভেজ


আগস্ট ০৬, ২০২২
১১:৩১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০৭, ২০২২
০১:২৫ পূর্বাহ্ন



উদ্বোধনের অপেক্ষায় সিলেটের নান্দনিক বাস টার্মিনাল
৭ একর জমির উপর টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১১৮ কোটি টাকা

উদ্বোধনের অপেক্ষায় নান্দনিক নকশায় দক্ষিণ সুরমার কদমতলীতে নির্মিত সিলেটের আধুনিক বাস টার্মিনাল। ছবি: শেখ নাসির

নান্দনিক নকশায় দক্ষিণ সুরমার কদমতলীতে নির্মিত হয়েছে সিলেটের আধুনিক বাস টার্মিনাল। কাজ প্রায় শেষ। এখন কেবল উদ্বোধনের অপেক্ষা। 

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, ইতোমধ্যে কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। শেষ পর্যায়ের কিছু কাজ বাকি আছে, যা চলতি মাসেই শেষ হয়ে যাবে। এই কাজ শেষ হলেই চালু করা হবে অত্যাধুনিক বাসটার্মিনাল। 

গতকাল সরেজমিনে নগরের কদমতলী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাসটার্মিনালে ভেতরে সাজসজ্জার শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। নির্মাণ কাজে ধীরগতির কারণে নির্ধারিত সময়ের দুই বছর পর টার্মিনালটি আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। তবু, এ নিয়ে উচ্ছ্বসিত সিলেটের বাসিন্দারা। 

সিসিক সূত্র জানায়, কদমতলী বাস টার্মিনালে শৃঙ্খলা ফেরানো এবং সিলেট থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াতকারী যাত্রীদের আধুনিক সেবা নিশ্চিত করতে সাড়ে ৭ একর জমির উপর ১১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই টার্মিনাল নির্মাণ করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। 

বাস টার্মিনাল আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ায় দুটি কাজ করা হচ্ছে। এর একটি হচ্ছে ডাম্পিং গ্রাউন্ড নির্মাণ, অপরটি টার্মিনালের অবকাঠামোতগত উন্নয়ন। ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জন্য ৫২ কোটি টাকা এবং টার্মিনালের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ৬৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

টার্মিনালে রয়েছে, বহির্গমন ও আগমনের দুইটি পৃথক ভবন, একটি প্রশাসনিক ভবন ও বিকল গাড়ি মেরামতের জন্য একটি ওয়ার্কশপ শেড। কাজটি করেছে ঢাকার নির্মাণ সংস্থা ঢালি কন্সট্রাকশন ফার্ম। টার্মিনালে যাত্রীদের জন্য থাকবে বিশ্রাম কক্ষ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, নামাজের কক্ষ, প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা, আইনশৃংখলা বাহিনীর পৃথক কক্ষ। প্রত্যেক রুটের জন্য থাকবে আলাদা পার্কিং জোন, প্রবেশ ও বের হওয়ার রাস্তা।

এই টার্মিনাল থেকে ঢাকা-সিলেট, সিলেট-কুমিল্লা, সিলেট-চট্টগ্রাম, সিলেট-হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন রুটে যানবাহন চলাচল করে। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলার আন্তঃরুটে কোচ, মিনিবাসও এখান থেকে চলাচল করে।

এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা না হলেও টার্মিনাল নিয়ে আশাবাদী বাসমালিক ও শ্রমিক সমিতি। টার্মিনাল হলে যানজট সমস্যা কমে আসবে বলে তারা মনে করছেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সিলেটের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির পলাশ বলেন, ‘বাসটার্মিনালটি চালু হলে পরিবহন সেক্টরসহ সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ অনেকটা লাঘব হবে।’

সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘সিলেটে আন্তর্জাতিক মানের বাস টার্মিনাল চালু হচ্ছে। এটি আমাদের সবার জন্য গর্বের বিষয়। এখন আর রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করা লাগবে না। যানজট থাকবে না। এর সুবিধা আমরা ও যাত্রী সাধারণ সবাই পাব।’   

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৮ সালে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল আধুনিকায়নের কার্যাদেশ হলেও কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। বাস টার্মিনালের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী ও টার্মিনাল নির্মাণ কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আলী আকবর।

আলী আকবর বলেন, ‘সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের সড়কপথে যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু সবচেয়ে বড় এই বাস টার্মিনালটি বিমান বন্দরের আদলে তৈরি করা হয়েছে। ফিনিশিং লেভেলের কিছু কাজ চলছে, যা চলতি মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। আমরা আগামী মাসেই টার্মিনালটি চালু করতে পারব।’ নির্ধারিত বাজেটের চেয়ে সামান্য ব্যয় বেড়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।  

তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানের বাস টার্মিনালের সব সুযোগ-সুবিধা থাকছে এই টার্মিনালে। পর্যটন নগর সিলেটে আগত দর্শনার্থীদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত হবে।’

আলী আকবর আরও জানান, টার্মিনাল থেকে একইসময়ে ৮০ থেকে ৯০টি বাস আসা যাওয়া করতে পারবে। ইংরেজি বর্ণমালার ‘এইচ’ বর্ণের আদলে তৈরি টার্মিনালের দুই তলাবিশিষ্ট দুইটি মূল ভবন। বহির্গমন ও আগমনের জন্য দুই তলাবিশিষ্ট ভবনে থাকছে অত্যাধুনিক সুযোগসুবিধা। সুপরিসর অভ্যর্থনা, ৪৮টি টয়লেট, ব্রেস্টফিডিং কক্ষ, নামাজের কক্ষ। প্রাইভেট কার, সিএনজি অটোরিকশা, মটর সাইকেল রাখার জন্য টার্মিনালের সামনে প্রশস্ত পার্কিং থাকছে। একই সময়ে ১৪০টি গাড়ি পার্কিং করা যাবে। 

যাত্রীদের বিশ্রামাগার, সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কক্ষ, প্রথামিক চিকিৎসার জন্য মেডিকেল টিম। সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও ওয়াইফাই জোন থাকবে। প্রত্যেক রুটের জন্য নির্ধারিত টার্মিনাল ও রাস্তা। ডিজিটাল সুযোগ সুবিধা সম্বলিত তথ্য কেন্দ্র। যেখানে সিলেট সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পাবেন আগত দর্শনার্থীরা। নির্ধারিত ভাড়ার বিনিময়ে গাড়ি পার্কিংয়ের সুযোগ পাবেন বাসচালকেরা। তবে যেসব পরিবহনের নিজস্ব টার্মিনাল আছে তাদের এই টার্মিনাল ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা থাকছে না। দুই ভবনে যাতায়াতের জন্য কাঁচের গ্লাসের আবরণে ঢাকা একটি ব্রিজ বাড়তি সৌন্দয্যবর্ধন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, ৫৮০০ বর্গ মিটার জায়গা উপর নির্মিত বহিগর্মন ভবনের নিচতলায় থাকছে ৩০টি টিকেট কাউন্টার, ৫টি ইনফরমেশন বুথ, ২য় তলায় ৯৭০টি আসন সম্বলিত ওয়েটিং স্পেস। এছাড়া ভিআইপিদের জন্য ৩০টি আসন রয়েছে এ ভবনে। ১৫০ সিটের রেস্টুরেন্ট ও ৯০ সিটের ফুডকোর্ট থাকছে বহির্গমন ভবনে। নারী পুরুষদের জন্য আলাদা ৬টি টয়লেট জোনে ৪৮টি টয়লেট রয়েছে। ১৪ আসন বিশিষ্ট ২টি ব্রেস্টফিডিং কর্ণার জোন, অসুস্থ রোগীদের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা কর্ণার, যাত্রীদের মালামাল রাখার জন্য সুরক্ষিত ১৩টি ‘লকার’ জোন থাকছে এই ভবনে।

দুই হাজার বর্গ মিটারে আগমন ভবনে থাকছে আগত যাত্রীদের জন্য থাকছে বিশেষ ব্যবস্থা। যাত্রীদের বসার জন্য ৫১০ সিটের ওয়েটিং স্পেস। এই ভবনের ভিআইপিদের জন্য ৩০টি আসন রাখা হয়েছে। দুটি টয়লেট পৃথক জোন।      

ছয় তলাবিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবনের তিন তলা পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এতে সিসিটিভি মনিটরিং রুম, ট্যুরিজম কর্পোরেশন অফিস, ট্যুরিজম পুলিশ সেন্টার, মেডিকেল টিম এবং প্রশাসনিক দপ্তর। 

এছাড়া, ৭৫০ বর্গমিটার জায়াগার উপর নির্মিত ওয়েলফেয়ার ভবনে থাকছে বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন সমিতির জন্য বিশেষ সুযোগ সুবিধা। ২৫০ আসনের মাল্টিপারপাস সভাকক্ষ, চালকদের বিশ্রামের জন্য ২৪ বেডের বিশ্রামাগার। ওয়ার্কশপ স্পেস, বিদ্যুৎ সাবস্টেশন, অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যস্থা রয়েছে ভবনটির নীচ তলায়।    

টার্মিনালটি ইজারাভিত্তিক পরিচালিত হলেও রক্ষাণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে সিলেট সিটি করপোরেশন।

বিএ-০১