বাড়ি ফেরা হলো না কলেজছাত্রী ফাতেমার

নিজস্ব প্রতিবেদক


আগস্ট ৩০, ২০২২
০৫:০৩ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ৩১, ২০২২
০১:৪৯ অপরাহ্ন



বাড়ি ফেরা হলো না কলেজছাত্রী ফাতেমার

স্কুল শেষে বাড়িপথে যাত্রা করা শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সারি। প্রত্যেকের কাঁধে ঝুলছে বইভর্তি ব্যাগ। আকাশে বৃষ্টির আগাম বার্তায় কেউ ছাতা ধরেছেন মাথার ওপর, কেউ ছাতা হাতে রেখেই হাঁটছেন আপন মনে। সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কম ব্যস্ত আটগ্রাম স্টেশনে আশপাশের স্কুল ছুটির পর ব্যস্ততা বাড়ে। যার যার গন্তব্যে ফেরার তাড়া কিছুটা প্রাণ সঞ্চার করে এই স্টেশনটিতে।

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) তখন বিকেল ২ টা বেজে ২৫ মিনিট। জকিগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী একটি বাস বেপরোয়া গতিতে ঢুকে আটগ্রাম স্টেশনে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মুহূর্তেই সারিতে থাকা দুই কলেজছাত্রীকে চাপা দিয়ে বাসটি ঢুকে পড়ে সড়ক থেকে প্রায় ২০ফুট দূরের একটি দোকানে। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় লুৎফুর রহমান স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী ফাতেমা আক্তার (১৮)। অপর ছাত্রী সাদিকা আক্তারকে (১৭) গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক। 

জানা যায়, জকিগঞ্জের কাজলসার ইউনিয়নাধীন জালালাবাদ গ্রামের দিনমজুর আব্দুস সালামের মেয়ে ফাতেমা। গাছ ছাঁটাই করে তিনি যা আয় করেন তা দিয়েই চলে সংসার চালানোর সংগ্রাম। মঙ্গলবার বাসের চাকায় পিষ্ট মেয়ের লাশ দেখতে এসে আব্দুস সালামকে দেখা গেল নির্বাক। চোখে জল নেই, গলা ধরে আসায় মুখ ফুটে কিছু বলতে চেয়েও পারলেন না। পরিবারের মধ্যে ফাতেমাই ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। বাবার স্বপ্ন ছিল ফাতেমা বড় হয়ে চাকুরি করবে। বাবার কষ্ট লাঘবে সে কাঁধে তুলবে পরিবারের ঘানি। কিন্তু অকস্মাৎ বদলে গেল সব।

এদিকে, ঘটনার পর ঘাতক বাসটির চালক ও সহযোগি পালিয়ে যায়। পরে জকিগঞ্জ-সিলেট সড়ক ঘেরাও করে স্কুলের শিক্ষার্থীসহ বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটি ভাংচুর করেন ও বাসচালকের ফাঁসি দাবি করেন। 

ঘণ্টাখানেক পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুটা বেগ পেতে হয়। পরে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

এ ব্যাপারে জকিগঞ্জ থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মোশাররফ হোসেন বলেন, ঘাতক বাসটি জব্দ করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। আমরা বাসটির চালককে গ্রেফতারে কাজ করছি৷ বাসটির নম্বর চট্র মেট্রো-জ ১১-০১১০।

আরএম-০৩