জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের সিন্ডিকেটে জিম্মি সাধারণ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক


সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২
০৮:৩২ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২
০৮:৩২ অপরাহ্ন



জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের সিন্ডিকেটে জিম্মি সাধারণ মানুষ
রেকর্ড টেম্পারিং করে এক জনের জমি অন্য জনের নামে চালিয়ে দেন কর্মকর্তারা

সিলেট জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। দুর্নীতি-অপকর্মের নরক বানিয়ে এ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সিলেটের হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে পথে বসাচ্ছেন।
সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানা অপরাধের চিত্র তুলে ধরেন নগরের মজুমদারী পীরমহল্লা এলাকার বাসিন্দা মাহতাব আহমদ খোকন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সিলেট জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান, সদর সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার হুমায়ূন কবির, সহকারী সেটেলমেন্টমেন্ট অফিসার মো. রহিম উল্লাহ, উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার গোলাম মোস্তফা লিটন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান সহকারী আব্দুল মান্নান ও ভারপ্রাপ্ত রেকর্ড কিপার আবুল খায়ের সিন্ডিকেটের লাগামহীন দুর্নীতি ও রেকর্ড টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে অবৈধপন্থায় মালিকের অজান্তেই জমির রেকর্ড পরিবর্তনসহ বিভিন্ন অপকর্মের বর্ণনা দিতে চাই। এভাবে একজনের জমি অন্যের নামে দিয়ে হয়রানি ও অবৈধপন্থায় কোটি কোটি টাকা আদায় করছেন তারা। এতে সিলেট বিভাগের অসহায় ভূমি মালিকদের ভূসম্পত্তি নষ্ট করছেন। এ বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রী ও ভূমিসচিব বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
তবে, সুচতুর এসব কর্মকর্তা নিজেদের দোষ অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে জানান তিনি। মাহতাব খোকন বলেন, ‘সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মো. গিয়াস উদ্দিন ও মহিতোষ চন্দ্র দাস সিলেট সেটেলমেন্ট থেকে অবসরে চলে যাওয়ার পর হুমায়ূন কবিরের নেতৃত্বে গঠিত সিন্ডিকেট সব অপকর্মের দোষ তাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা করেন।’
তিনি বলেন, ‘অফিসে অবৈধ টাকার বিনিময়ে দাগ, খতিয়ান, মৌজা বহাল রেখে প্রকৃত ভূমি মালিকের অজান্তেই তার জমির মালিকানা বদলে অন্যজনের নামে রেকর্ড করা হচ্ছে। এ রকম একাধিক অভিযোগ রয়েছে এ অফিসে।’
একমাত্র সিলেট ছাড়া বাংলাদেশের কোনো সেটেলমেন্ট জোনে প্রেস নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘সিলেটে মিনি প্রেস স্থাপন করে ওবায়দুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রকৃত ভূমির মালিকানা অবৈধপন্থায় নির্বিঘেœ ও অতি উৎসাহের সঙ্গে পরিবর্তন করছেন তারা।’
তিনি কয়েকটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘ওবায়দুর রহমান সিলেট জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার হিসেবে বিগত ১৮ মে ২০২১ তারিখে যোগদান করেন। এরপর থেকে সদর সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার হুমায়ুন কবির-২, সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মো. রহিম উল্লাহ, উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার গোলাম মোস্তফা লিটন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান সহকারী আব্দুল মান্নান ও রেকর্ডরুমের ভারপ্রাপ্ত রেকর্ড কিপার আবুল খায়েরসহ স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ভূমিখেকো চক্রের সমন্বয়ে শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সিলেট সদর উপজেলার ১৪৮ নম্বর জেএলভুক্ত বড়শলা মৌজার রেকর্ড প্রণয়ন কার্যক্রম ২০১৭ সালে সমাপ্ত হয়েছে। অথচ মুদ্রণ সমাপ্ত রেকর্ডে ২০২১ সালে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার ওবায়দুর রহমান ডি.পি মোট ১৩টি খতিয়ান ১০১০/২০২১ নম্বর ভুয়া বিবিধ মামলা তৈরি করে প্রকৃত ভূমি মালিকের অজান্তেই টিলা ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন ও রেকর্ড টেম্পারিং করেছেন। পরিবেশ ও জলবায়ু চরম সংকটে টিলা শ্রেণী বিক্রয়, হস্তান্তর, কর্তন ও পরিবর্তন করা সরকার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা সত্তে¡ও প্রায় আট একর টিলা ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করেছেন। টিলা-শ্রেণি পরিবর্তনের ভুয়া বিবিধ মামলার আদেশ বলে ডি.পি ১৪৭৫ নম্বর খতিয়ানের হাল ৫৮০৯, ৫৮১০, ৫৮১১ ও ৬৪০১ নম্বর দাগগুলো অন্যান্য খতিয়ান থেকে টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে মো. মিছবাহুল ইসলাম নামের ব্যক্তিকে রেকর্ড প্রদান করেছেন।’
মাহতাব খোকন আরও বলেন, ‘ওবায়দুর রহমান কেবল দুর্নীতি ও অন্যায়ের আশ্রয় নিয়ে ক্ষান্ত হন না। তার অন্যায় ধরা পড়লে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সৎ কর্মকর্তাদের শাস্তি ও বদলির মুখোমুখি করেন। আর নিজের সিন্ডিকেটের সদস্যরা অপরাধ করে ধরা পড়লে তাদের সুরক্ষায় নিজের সর্বোচ্চ দিতে সমর্থ্য হন।’
বড়শলা মৌজার মুদ্রণ খতিয়ানের ভুলত্রæটি যাচাই-বাছাই করার সময় রেকর্ডে বড় অনিয়মটি সার্ভেয়ার আহমেদ শরীফ ও সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার ধ্রæব রঞ্জন দেববিশ্বাসের নজরে পড়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ভুল ধরার অপরাধে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মো. ওবায়দুর রহমানের সুপারিশে কোনো অভিযোগ ও তদন্ত ছাড়াই ধ্রæব রঞ্জন দেববিশ্বাসকে শাস্তিস্বরূপ সিলেট থেকে টাঙ্গাইল জোনে এবং সার্ভেয়ার আহমদ শরীফকে সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলায় বদলি করা হয়। পরবর্তীতে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মো. ওবায়দুর রহমান অবৈধপন্থায় রেকর্ডকৃত ১৪৭৫ নম্বর ডিপি খতিয়ানটি সংশোধন না করেই তড়িগড়ি করে মুদ্রণ খতিয়ান বিক্রির ব্যবস্থা করেন।’
খোকন বলেন, ‘সরকারিভাবে গেজেট প্রকাশের পর রেকর্ড সংশোধন ও পরিবর্তন করা জরিপ বিভাগের এখতিয়ার বহির্ভূত সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ। এ রকম কোনো ভুল নজরে এলে দায়ী ব্যক্তি চিহ্নিত করে আইন ও বিধি মোতাবেক তাৎক্ষণিক শাস্তির আওতায় আনা জরিপ বিভাগের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু প্রমাণ থাকা সত্তে¡ও আজ পর্যন্ত দায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। ফলে প্রকৃত ভূমি মালিকের অজান্তেই এসব অবৈধ কাজ অতি সহজ ও নিরাপদে সম্পন্ন করার সুযোগ এনে দিয়েছে সিলেট সেটেলমেন্টে স্থাপিত ছাপাখানা। এ ক্ষেত্রে চক্রের দালালদের মাধ্যমে সরকারি স্ট্যাম্পে লাখ লাখ টাকার লিখিত চুক্তিপত্র সম্পাদন করেও এরকম অবৈধ কাজ এখানে হয়ে থাকে।’
একইভাবে আরও কিছু ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি। তিনি জানান, সিলেট সদর উপজেলার ৪৫ নম্বর ছালিয়া মৌজার এসএ ১৭১৪ নম্বর দাগে মোট জমির পরিমাণ দুই একর চার শতাংশ। ১৯৫৬ সালের এসএ জরিপে ভ‚লবশত বাংলাদেশ সরকার পক্ষে জেলা প্রশাসকের নামে সাকুল্য ভ‚মি রেকর্ডভুক্ত হলে উক্ত ভ‚মির প্রকৃত মালিক কামতাল ভৌমিক বাদী হয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৬৬ সালে মাননীয় আদালতে স্বত্ত¡ মামলা দায়ের করেন। স্বত্ব মামলার বিচারে কামতাল ভৌমিকের নামে এক একর তেতাল্লিশ শতাংশ ভ‚মির রায় হয় এবং অবশিষ্ট একষট্টি শতাংশ ভ‚মি সরকারের নামে রেকর্ড বহাল থাকে। আদালত কর্তৃক ডিক্রিপ্রাপ্ত মালিক কামতাল ভৌমিকের তিন ছেলে থেকে ধারাবাহিক দলিলমূলে মাহতাব আহমদ খোকন ত্রিশ শতাংশ ও জহির আলী পয়তাল্লিশ শতাংশ ভ‚মি ক্রয়সূত্রে মালিক হয়ে নামজারী ও সরকারের ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করেন। বিএস জরিপে তাদের নামে রেকর্ড হয় এবং উপজেলা অফিস থেকে সরকারিভাবে ছাপা খতিয়ানও পেয়েছেন।
মাহতাব বলেন, ‘বিগত ৪ আগস্ট ২০২০ তারিখে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ছালিয়া মৌজার গেজেট বাংলাদেশ গেজেটেও প্রকাশিত হয়। কিন্তু হুমায়ুন কবীর-২ তৎকালীন জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসারের সহযোগিতায় ২৬/২০২১ নম্বর বিবিধ মামলা তৈরি করে উল্লেখিত ভূমি মালিকগণকে বিগত ২৫ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে নোটিশের মাধ্যমে ডেকে নেন এবং ভূমি সরকারি খাস খতিয়ানের ভূমি বলে জানান। হুমায়ূন কবির ৫ লাখ টাকা দাবি করেন এবং টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় বৈধ ভূমি সরকারি ভূমি হিসেবে ১ নম্বর খাস খতিয়ানে রেকর্ড করার প্রস্তাব করেন।’
তিনি আরও জানান, মৌলভীবাজার জেলাধীন কুলাউড়া উপজেলার ৪৩ নম্বর জেএলভুক্ত জালালাবাদ মৌজায় বিগত মাঠ জরিপের সময় সাবেক ৩২৫৫ হাল ৫৪৯৫ নম্বর দাগে ভুলক্রমে ২১ শতাংশের স্থলে মাত্র ৯ শতাংশ ভূমি-শ্রেণি বাড়ি হিসেবে রেকর্ডভুক্ত হয়। ছাপা খতিয়ান হাতে পাওয়ার পর বাবুল চন্দ্র দেবনাথের নজরে এলে তিনি জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসারের কার্যালয়, সিলেটে যোগাযোগ করেন। রেকর্ড সংশোধনের আবেদন করলে কুলাউড়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার নুরুজ্জামান অবৈধ উৎকোচ দাবি করেন। তিনি অবৈধ উৎকোচ না দেওয়ায় পরবর্তীতে সিলেটের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে স্থাপিত ছাপাখানার মাধ্যমে মাত্র ৯ শতাংশ ভূমির রেকর্ড বহাল রেখে অবশিষ্ট ১১ শতাংশ ভূমি ১ নম্বর খাস খতিয়ানে রেকর্ড করা হয়।’
মাহতাব আরও বলেন, ‘সেটেলমেন্ট অফিসার ওবায়দুর রহমানের সিন্ডিকেটের অন্যতম সহযোগী হুমায়ূন কবির ইতোপূর্বে একাধিক বিভাগীয় মামলায় শাস্তি ভোগ করলেও তিনি অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে আছেন। আদালতের আদেশের পর তিনি আইন ও বিধি অনুযায়ী কেবলমাত্র সুনামগঞ্জ জেলাধীন ধর্মপাশা উপজেলায় কর্মরত থাকার কথা। কিন্তু তিনি সিলেট সেটেলমেন্টের সিনিয়র ও যোগ্য কর্মকর্তাদেরকে ডিঙিয়ে আইন ও বিধি বহির্ভূতভাবে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে সিলেট জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসারের কার্যালয়ের সদর সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার, চূড়ান্ত প্রকাশনা শাখা, মুদ্রণ শাখা, ভলিয়ম বাঁধাই ও রেকর্ড হস্তান্তর শাখা, কারিগরি উপদেষ্টা এবং তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তার পদসহ গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন।’
ওবায়দুর-হুমায়ুন সিন্ডিকেটের কারণে হাজার হাজার মানুষ পথে বসছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গোয়াইনঘাট উপজেলার খাগড়া হাওড় ২য় খন্ড মৌজাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুতকৃত বাঁধাই ভলিউমে ডি.পি ১০, ১১, ২০, ৪২, ৯১, ১০০, ১০২, ১১৫, ১২৮ ও ২০০ নম্বর খতিয়ানে রেকর্ডভুক্ত শত শত বিঘা জমি প্রকৃত জমির মালিকদের অজান্তেই সম্পূর্ণ অবৈধ পন্থায় বদলে ফেলা হয়েছে মালিকানা। ফলে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে আছেন নিরীহ ও অসহায় ভূমি মালিকগণ। একই উপজেলার ১২১ নম্বর জেএলভুক্ত গোয়াইন মৌজার ডিপি ৬২২ নম্বর খতিয়ানের রেকর্ডও পরিবর্তন করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চূড়ান্তভাবে সরকারি গেজেট প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত আইন ও বিধি অনুযায়ী ছাপা রেকর্ড হস্তান্তরের কোন সুযোগ নেই। অথচ সরকারি গেজেট প্রকাশনার পূর্বেই ভলিউম বাঁধাই করে রেকর্ড জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হস্তান্তর করেন তারা। মাঠ জরিপে প্রস্তুতকৃত মাস্টার ভলিউমও পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। মৌজার সরকারি গেজেট বিগত ১ এপ্রিল ২০২১ তারিখে চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু, ২৩ জুন ২০২০ তারিখে মৌজাটির মাস্টার ভলিউম পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। এতে লক্ষাধিক অসহায় ভূমি মালিকগণ অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে আছেন।’
একইভাবে জৈন্তাপুর উপজেলার গৌরীশংকর মৌজার ৫৮, ৫৯ ও ৬০ নম্বর দাগের কোটি কোটি টাকা মূল্যের সরকারি খাস জমি চলমান জরিপে ব্যক্তি নামে রেকর্ড করে হুমায়ূন কবির ভলিউম বাঁধাই করে মৌজা রেকর্ড জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হস্তান্তর করেন। সিলেট সদর উপজেলার ৪৫ নম্বর ছালিয়া মৌজার ছাপা ৭৪১ নম্বর খতিয়ানে হাল ২০০৩, ২০০৪, ২০১৭ ও ২০১৮ নম্বর দাগ বর্তমান জরিপে মনোয়ার বখত মজুমদার নামে এবং  হাল ২০০২ নম্বর দাগে ছয় একর বাইশ শতাংশ ভূমি সৈয়দিয়া ওয়াকফ এস্টেটের সম্পত্তি হলেও বর্তমান জরিপে দেওয়ান ছাকিয়া রাজা চৌধুরীর নামে ১৬২০ নম্বর ডিপি খতিয়ানে রেকর্ডভুক্ত হয়। দেওয়ান ছাকিয়া রাজা চৌধুরীর নামে অফিস কর্তৃক ছাপা খতিয়ানও সরবরাহ করা হয়। কিন্তু, প্রায় ছয় কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি পরবর্তীতে এ সিন্ডিকেট দেওয়ান ছাকিয়া রাজা চৌধুরীর নাম কেটে ৭৪১ নম্বর খতিয়ান খেবে হাল- ২০০৩, ২০০৪, ২০১৭, ২০১৮ এবং ১৬২০ নম্বর খতিয়ান থেকে হাল ২০০২ নম্বর দাগটি কেটে একই ডিপি খতিয়ান অর্থাৎ ১৬২০ নম্বর খতিয়ান বহাল রেখে শুকুর মিয়ার নামে রেকর্ড করে মৌজাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
এভাবে সুনামগঞ্জ জেলাধীন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পদ্মনগর গ্রামের বাসিন্দা সোলেমান ফারুক পৈত্রিক সম্পত্তির রেকর্ড সংশোধনের জন্য আবেদন করলে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে কর্মরত হুমায়ূন কবির-২ এ কাজের জন্য প্রথমে ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে, জমির রেকর্ড সংশোধনের জন্য এপকই অফিসে কর্মরত প্রধান সহকারী আব্দুল মান্নানের সহযোগিতায় এ কর্মকর্তাকে ৭ লাখ টাকা প্রদান করেন। কিন্তু টাকা নিয়েও অদ্যাবধি রেকর্ড সংশোধন করেননি এবং টাকাও ফেরৎ দেননি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক থেকে মন্ত্রী পর্যন্ত এবং আদালতে মামলা গড়িয়েছে। আদালতের আদেশকেও অবজ্ঞা করে ২০২২ সালে আগস্ট মাসে ধরেরপাড় মৌজাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হস্তান্তর করেন।
এছাড়াও হবিগঞ্জ সদর উপজেলার প্রাক্তন সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার বর্তমানে জোনাল অফিসের অতিগুরুত্বপূর্ণ ছয়টি শাখার দায়িত্বে থাকা মো. রহিম উল্লাহ, হুমায়ুন কবিরের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। ১৪৮ নম্বর জেএলভুক্ত বড়চর মৌজার একটি তদন্ত প্রতিবেদনে গেজেট প্রকাশের তথ্য গোপন করে ওবায়দুর রহমানের দুর্নীতিতে সহযোগিতা করেন। এর সুবাদে রহিম উল্লাহ পদোন্নতি পেয়ে ছয়টি শাখার দায়িত্ব পান।
সিলেট জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের মুদ্রণ শাখায় কর্মরত উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার গোলাম মোস্তফা লিটনও সিন্ডিকেটের একজন সক্রিয় সদস্য হওয়ায় রেকর্ড পরিবর্তন করার মূল কারিগর হিসেবে মূখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। তার মাধ্যমেই অসহায় ভূমি মালিকদের নির্ভেজাল রেকর্ড অবৈধ পন্থায় পরিবর্তন হয়ে থাকে। যার অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।
২৮ বছর ধরে সিলেট সেটেলমেন্ট অফিসে থাকার সুবাদে ভারপ্রাপ্ত প্রধান সহকারী আব্দুল মান্নান এ অফিসকে নরকে পরিণত করেছেন। অফিসের সিসি ক্যামেরায় সংরক্ষিত ফুটেজ অনুসন্ধান করলেই রেকর্ডরুমে প্রতিনিয়ত তার অবাধ বিচরণের প্রমাণ পাওয়া যাবে।
খোকন বলেন, ‘সেটেলমেন্ট অফিসের সব অপকর্ম, দুর্নীতি ও অবৈধ কাজে তার হাত রয়েছে। তাদের হাত ধরেই জমির কাগজ টেম্পারিংসহ সব অপকর্ম ঘটে থাকে।’
মাহতাব খোকনের মতো সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র সোহেল আহমদ, একই জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাসিন্দা সোলেমান ফারুক, মো. আব্দুল মমিন ও আব্দুস সামাদ, সিলেট শহরের মজুমদারী এলাকার বাসিন্দা মো. দেলোয়ার হোসেন, হাওলাদারপাড়ার বাসিন্দা আনোয়ার রাজা চৌধুরী ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা জ্যোতিষ দাস অপকর্ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ দায়ের করেও সমাধান পাননি ।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে সিলেট সেটেলমেন্ট অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অপসারণ দাবি এবং সব অপকর্মের সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান।