‘অধিকার আদায়ে রক্তঝরা মাটির মানুষ পিছপা হয় না’

নিজস্ব প্রতিবেদক


অক্টোবর ২৩, ২০২২
০৩:২৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ২৩, ২০২২
০৩:২৯ পূর্বাহ্ন



‘অধিকার আদায়ে রক্তঝরা মাটির মানুষ পিছপা হয় না’
...
সরকারের পতন ঘটাতে আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি। গতকাল খুলনায় গণমাবেশ করেছে দলটি। তার আগে চট্ট্রগামে সমাবেশ করে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে দলটি। তারপর কি? 
এসব বিষয় নিয়ে সিলেট মিরর-এর সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুন রায়। 


সিলেট মিরর: বিএনপির রাজনীতি, আন্দোলন নিয়ে কিছু বলুন। 

নিপুন রায়: প্রথমত আমি বলব যে, আমরা যারা রাজনীতি করছি, যারা এ যাত্রায় আছি তাদের সবার উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগনের কল্যাণ সাধন করা এবং দেশের উন্নতি। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যে চেতনা, সাম্য, ন্যায়বিচার, সুশাসন, গনতান্ত্রিতক যে অধিকার, যে অধিকার আদায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি সেটিকে ঠিক রাখা, সেই ঐতিহ্যটাকে ধরে রাখা। অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাও একজন রাজনীতিকের দায়িত্ব। সেই সঙ্গে আমি বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে, একজন রাজনৈতিক কর্মী বা রাজনীতিবিদের চেয়ে আমি বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। নাগরিকের যে দায়িত্ব, একজন রাজনৈতিক কর্মী রাজনীতির মাঠে একটি বৃহৎ প্ল্যাটফর্ম পায় যে ওইখানে দেশের মানুষের বা জনগণের কল্যাণে কাজ করতে পারি। বর্তমানে আমরা একটি অরাজনৈতিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি। বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্রহীনতা, বিচারহীনতা বিরাজ করছে। দেশে এখন ন্যায়বিচার সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। নারী থেকে শুরু করে শিশুদের জীবনেরও নিরাপত্তা নেই। প্রতিনিয়ত তারা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, নানা ধরনের নির্যাতনে শিকার হচ্ছে। এমন জায়গা থেকে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ আছি। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন থানা, উপজেলা জেলা এবং কেন্দ্র পর্যন্ত আমাদের লক্ষ্য এক। একটা রাষ্ট্রের মালিক হচ্ছে জনগণ। আমরা বাংলাদেশের জনগণের হাতে তার দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে চাই। জনগণের ভোটের অধিকার আমরা ফিরিয়ে দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। 

বর্তমানে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছে তারা জনগণের সমর্থন নিয়ে রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করছে না। ২০০৮ সালের যে নির্বাচন সেটি হয়েছিল একটি প্রজেক্ট সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে তারা ক্ষমতায় এসেছে। ২০১৪ সালের নির্বচনে ১৫৪টি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচন করে নিয়েছেন তারা নিজেরা। ২১০৪ সালে গঠিত এ সরকারকে স্বঘোষিত সরকার বলতে পারেন। 

সুতরাং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এবং জনগণের যে দাবিজ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে আন্দোলন চলছে সেখানে আমাদের পাঁচটি তাজা প্রাণ শহীদ হয়েছে। তারপরও আমরা থেমে নেই। দেশে যতবার ক্রান্তিকাল এসেছে ততবারই বিএনপি মানুষের পাশে নির্ভয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।  

সিলেট মিরর: বিএনপি দীঘদিন থেকেই আন্দোলন করছে এর শেষ কোথায়?

নিপুন রায়: এ আন্দোলনের শেষ কিন্তু আসন্ন, সন্নিকটেই। আমরা সে দিনটির অপেক্ষায় আছি। রাজপথে যখন রক্ত ঝরেছে, অর্থাৎ যে মাটিতে পানি পড়ে সে মাটি কাদা হয়ে যায়। সে মাটিতে যখন রক্ত ঝরে তখন সে মাটি আরও বেশি প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে পড়ে এবং তার অধিকার আদায়ে সব শর্তের সঙ্গে একীভ‚ত হয়ে যায়। অধিকার অর্জনে সে মাটির মানুষ পিছপা হয় না। 

সিলেট মিরর: রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছেন, সেখানে নতুন কোনো সম্ভাবনা কি জাগছে? 

নিপুন রায়: অবশ্যই। বাংলাদেশে যে কয়টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে যে দলগুলো আছে তাদের বাইরে যারা আছেন-আমি বলব তারা সবাই বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তন চায়। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। বর্তমানে জনগণের যে ভোগান্তি, মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে বিষয়গুলো আছে, যেগুলো লংঘিত হচ্ছেসেখান থেকে বাংলাদেশকে সুশাসনের বাংলাদেশ, জনগণের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য শুধু রাজনৈতিক দল কেন, ভিন্ন মত প্রকাশ করে যারা এমনকি, একজন সাধারণ কৃষককে জিজ্ঞেস করলেও বলবে আমি এ সরকারের পরিবর্তন চাই। কারণ এ সরকার দানবীয় রূপ ধারণ করে ফেলেছে। জনগণের কাছে সেটা স্পষ্ট। সরকারও এ বিষয়টি জানে। তাই সেখান থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে, জনগণকে রক্ষা করতে হলে পরিবর্তন অনিবার্য।  

সিলেট মিরর: আপনাদের রাজনৈতিক যে জোট ছিল তার অবস্থা কি?

নিপুন রায়: আমাদের জোট জোটের মতোই আছে। সেখানে নতুন যে কথাটি বলতে চাই তা হলো, আমাদের সংলাপ চলছে। সব রাজনৈতিক দল এবং সুশীলসমাজের সঙ্গে আমাদের সংলাপ হচ্ছে। সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গেও আমাদের কিছু কিছু টিম কাজ করছে। আমি মনে করি বৃহৎ পরিসরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে সব দল ঐক্যবদ্ধ হবে। 

সিলেট মিরর: জামায়াত নিয়ে কথা উঠেছে, তাদের ব্যাপারে আপনার দলের দৃষ্টিভঙ্গী কি? জামায়াতের আমিরের সাম্প্রতিক বক্তব্যকে কি বলবেন?

নিপুন রায়: আসলে এক দুইটা বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বৃহৎ কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া ঠিক হবে বলে আমি মনে করি না। এই একজনের বক্তব্য যে দলের বক্তব্য হয়ে যাবে সেটাও না। জামায়েতে ইসলামীর আদর্শ এক, বিএনপির আদর্শ এক। কিন্তু আমরা গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে বলেন, দেশের ক্রান্তিকাল দূর করার জন্য এ ফ্যাসিস্ট সরকারে বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক দল এক এবং অভিন্ন। সে জায়গাতে আমাদের কোনো ভিন্নমত নেই। 

সিলেট মিরর: এই মুহুর্তে বিএনপি কতটা সংগঠিত?

নিপুন রায়: বিএনপি কতটা সংগঠিত এটা আমার চেয়ে আপনি বেশি জানবেন আমার মনে হয়। কারণ মাঠ পর্যায়ে আপনার অনেক কর্মীরা কাজ করছে আপনার পত্রিকা কেন্দ্র করে। সেখানে আপনি বুঝতে পাবেন সংগঠন কতটা দাঁড়িয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে আমাদের, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান। তিনিতো দেশে নেই। দেশে না থেকেও যে পরিশ্রম করছেন, তিনি ম্যাজিক্যাল পারসনের মতো দলে যে পরিবর্তন এনেছেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করেছেন আমাদের এ আন্দোলনগুলোতে। আমি মনে করি বিএনপি সুসংগঠিত আছে বিধায়ই জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। আপনি আজকে খুলনার দিকে তাকান এটাইতেই পরিস্কার হয়ে যায়। যেখানে অস্ত্রের ঝনঝনানি আমরা দেখেছি। মহড়া দিয়েছে। সেখানে তারা চার-পাঁচ হাজার লোক হয়ত ছিল। সেখানে একরাতের মধ্যে, কয়েক ঘন্টার মধ্যে লাখও জনতার ঢল নেমেছে। সুসংগঠিত একটি দল না থাকলে কিংবা ওই দলের প্রতি মানুষের আস্থা না থাকলে এটি সম্ভব ছিল না। 

সিলেট মিরর: দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে তো আমরা ভিন্ন মতও দেখতে পাই, সেটাকে কি বলবেন?

নিপুন রায়: না, এটা গণতান্ত্রিক চর্চা। আমি মনে করি যে দলের ভেতরেও গণতান্ত্রিক চর্চার দরকার আছে। আমার একমত থাকতে পারে, আপনার একমত থাকতে পারে। আপনি আপনার মতের বহিপ্রকাশ করবেন, কিন্তু আমাদের আদর্শ এক আছে কি না সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের ওই জায়গাতে কিন্তু কোনো অমিল নেই। তো আমি মনে করি যে, কিছু বক্তব্যকে কাউন্ট করে দলের আদর্শের কথা বলে ছোট করার কোনো সুযোগ নেই। তো আমাদের লক্ষ্য এক, আদর্শ এক। বাংলাদেশকে জনগণের রাষ্ট্রে পরিণত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমরা রাজনীতি বা আন্দোলন করছি না। 

সিলেট মিরর: আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি, তারপর কি?

নিপুন রায়: তারপর তো খেলা শেষ হয়েও যেতে পারে। জনগণের কাক্সিক্ষত লক্ষে আমারা পৌঁছে যেতেও পারি। দেখেন না সামনে কি হয়। 


এএফ/০২