আনোয়ারুজ্জামানে উত্তপ্ত সিলেট আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক


ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২৩
০৮:০০ অপরাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩
০২:০২ পূর্বাহ্ন



আনোয়ারুজ্জামানে উত্তপ্ত সিলেট আওয়ামী লীগ
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন

সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে রীতিমতো উত্তাপ ছড়াচ্ছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। সম্প্রতি তিনি যুক্তরাজ্য থেকে ফিরে ঘোষণা দেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে মাঠে কাজ করার জন্য ‘নির্দেশনা’ দিয়েছেন। এর পরপরই ‘তিনিই পাচ্ছেন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বচনের টিকিট’ এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। এর পর থেকেই নানাভাবে প্রকাশ পেতে শুরু করে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীন ক্ষোভ।

সেই ক্ষোভ যেন উসকে দিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। গত সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সিলেট নগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাদাটিকর এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠনে তিনি বলেন, ‘স্মার্ট সিলেট সিটি গড়তে আনোয়ারুজ্জমান চৌধুরী কাজ করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা তাঁর সঙ্গে আছি। এই সিটিকে স্মার্ট সিটিতে রূপান্তরে আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাব।’

এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এক দিন পর মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছেন। এতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সিলেট সিটি মেয়র নির্বাচনের মনোনয়ন প্রসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন, এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা মহানগর আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী কিংবা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছ থেকে পাননি।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের শৃঙ্খলাসহ দলীয় ভাবমূর্তি যেন বিনষ্ট না হয় এবং বিভ্রান্তি যাতে ছড়ানো না হয়, এ বিষয়ে বিবৃতিতে সবার প্রতি আহ্বানও জানানো হয়।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। তিনি বলেন, ‘তাঁরা (মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) যে অভিযোগ এনে বিবৃতি দিয়েছেন, এমন কোনো শব্দ আমার বক্তব্যে ছিল না।’
গত ২২ জানুয়ারি সকালে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। ওই দিন হাজারো কর্মী-সমর্থক মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে তাঁকে সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শহরে নিয়ে আসেন। এ সময় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন নেতাও উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এবং সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব অন্যতম। এরপর থেকেই জোরেশোরে আলোচনায় আসে তাঁর নাম।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাতজন নেতা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ছাড়া মেয়র পদে মনোনয়ন পেতে এখানে এর আগে নানা সভা-সমাবেশে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক এ টি এম এ হাসান জেবুল ও আজাদুর রহমান আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান আহমদ শিপলু ও সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী। তাঁদের মধ্য থেকে একজন দলীয় মনোনয়ন পাবেন এত দিন এমনটাই করা হচ্ছিল।

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জোরেশোরে প্রার্থিতার বিষয়টি ঘোষণা করলেও অপর মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তাঁরা গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না। তবে মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেকে বলেছেন, তাঁরা মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। চলতি বছরের মাঝামাঝি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তখন তাঁরাও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। তবে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা যাঁকে যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দেবেন, তাঁর পক্ষেই তাঁরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন।
সম্প্রতি হঠাৎ গুঞ্জন ওঠে, আনোয়ারুজ্জামান মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পাবেন এবং দলীয় প্রধান তাঁকে সে লক্ষ্যে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। নগরজুড়ে ‘আনোয়ারুজ্জামানকে মেয়র হিসেবে দেখতে চাই’ স্লোগান দিয়ে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে। ফলে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী অপর প্রার্থীদের মধ্যে ‘চাপা ক্ষোভ’ দেখা গেছে।
মূলত এরই জের ধরে মহানগর আওয়ামী লীগ গতকাল গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছে। আর এই মন্তব্য ও বিবৃতিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মাঠ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ‘সিলেটে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে আমি কোনো বক্তব্যই রাখিনি। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন এমন কথাও বলিনি। আমি বলেছি আনোয়ারুজ্জামান দলের জন্য দেশে-বিদেশে কাজ করেছেন। ওয়ান-ইলেভেনের সময় নেত্রীর জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করেছেন। এটা আমরা স্মরণ করি।’

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ কেন এমন বিবৃতি দিলেন, বুঝে উঠতে পারছেন না মন্তব্য করে নাদেল বলেন, ‘তারপরও তাদের কোনো বক্তব্য থাকলে সেটা দলীয় ফোরামে আলোচনা করা যেত। এভাবে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে তারা দলের ভাবমূর্তি কতটা উজ্জ্বল করলেন সে প্রশ্নও তোলা যায়।
প্রসঙ্গত গত ২২ জানুয়ারি সকালে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘আমি সিলেটের সন্তান। বিগত সংসদ নির্বাচনে আমি সিলেট-১ আসনের দলীয় প্রার্থী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও সিটি করপোরেশনেরন মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের জন্য কাজ করেছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে গণসংযোগে অংশ নিয়েছি। নির্বাচন নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি এই শহরেই বড় হয়েছি, পড়ালেখা করেছি। তাই সিলেট নগরের মানুষ আমার আপনজন। দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে, তাঁকে নিয়েই আমরা সবাই কাজ করব।’

এএনএম/০২