বিতর্কিত ও এলাকাবিমুখ এমপিরা বাদ পড়ছেন

সিলেট মিরর ডেস্ক


মে ০৫, ২০২৩
০৩:০৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ০৫, ২০২৩
০৩:০৬ পূর্বাহ্ন



বিতর্কিত ও এলাকাবিমুখ এমপিরা বাদ পড়ছেন


আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রাথী মনোনয়ন দিতে বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জনগণের কাছে অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়া এমপিরা আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে বাদ পড়বেন। তাদের বিরুদ্ধে অপকর্মের নানা তথ্য এসেছে দলের কাছে। সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, ধরে নিয়ে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করতে প্রার্থী মনোনয়নে বেশ কঠোর হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য তালিকা করছেন এলাকাবিচ্ছিন্ন এমপিদের। এলাকার অজনপ্রিয় সংসদ সদস্যরাও আছে এ তালিকায়। 

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রতি ছয় মাস পর পর জরিপ করছেন সরকারপ্রধান। বিভিন্ন সংস্থা ও প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব টিম এ জরিপ করছে। এসব জরিপের ভিত্তিতেই মনোনয়ন দেওয়া হবে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে। বাদ পড়ার তালিকায় বর্তমান সংসদে থাকা অনেক হেভিওয়েট এমপি-মন্ত্রী এ তালিকায় আছেন বলে জানা গেছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিগত যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে চ্যালেঞ্জিং হবেÑএমন কথা দলীয় ফোরাম ও সংসদীয় দলের সভায় এমপি-নেতাদের জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সে জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দলীয় এমপিদের এলাকামুখী হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে সরকারের উন্নয়ন প্রচারে জোর দিয়েছেন তিনি। অনেকএমপি সেই নির্দেশ উপেক্ষা করেছেন। বিগত কয়েকটি জরিপে এসব এমপির বিরুদ্ধে ভয়াবহ তথ্য এসেছে। এসব তথ্য পর্যালোচনা করতে গিয়ে কোনো কোনো মন্ত্রী-এমপির কর্মকাণ্ডে বিস্মিত স্বয়ং দলীয় প্রধান। দীর্ঘদিন এলাকায় যাননি মন্ত্রিসভার এমন সদস্যের তথ্যও পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, নির্বাচনী এলাকার নেতা-কর্মীরা ঢাকায় এসে এমপি-মন্ত্রীদের সাক্ষাৎ পান না। কারও কারও বাড়ির দরজা থাকে বন্ধ। এতে হতাশ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।

সূত্রমতে, কোনো কোনো এমপি এলাকায় গেলেও দলীয় নেতা-কর্মী বাদ দিয়ে নিজস্ব বলয় নিয়ে চলাফেরা করেন। আওয়ামী লীগকে পাশ কাটিয়ে নিজের পছন্দের লোকদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। এসব এমপির বিরুদ্ধে মুখ খোলা শুরু করেছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। কোনো কোনো এমপির বিরুদ্ধে দলীয় নেতা-কর্মীরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। কেউ কেউ লিখিত অভিযোগ করছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে। কোনো কোনো এমপির ইন্ধনে দলীয় নেতা-কর্মী হত্যার শিকারও হয়েছে মর্মে সংবাদ পাওয়া গেছে। জলমহাল দখল, সরকারি খাস পুকুর দখল, বাড়িঘর দখলসহ নানা অভিযোগ উঠছে কোনো কোনো এমপির বিরুদ্ধে। আবার নির্বাচনী এলাকায় স্কুল, কলেজসহ হাটবাজারের নিয়ন্ত্রণ এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের কব্জায়। ফলে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগের স্তূপ জমা পড়ছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই এমন অভিযোগ বাড়ছে।

দল ও সরকারের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক সূত্র জানায়, মন্ত্রী-এমপিদের কর্মকাণ্ডের তথ্য সংগ্রহের এ কাজটি নিয়মিতই করা হয়। তাদের কর্মকাণ্ড মনিটরিং অতীতেও হয়েছে। কিন্তু অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন বর্তমান সংসদে সরকারি দলের অনেক এমপি। তারা বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের আওয়ামী লীগে এনে যেমন পুনর্বাসন করেছেন, তেমনি আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন পৃথক বলয়। তাদের ভেদ করে মন্ত্রী-এমপিদের কাছে যেতে পারেন না আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই বেছে নেবেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপিকা ড. সুলতানা শফি  বলেন, ‘যার এলাকায় সুনাম রয়েছে, জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত, দলীয় নেতা-কর্মীর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছেÑএমন ব্যক্তিকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া উচিত। কারণ, সৎ, যোগ্য ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিলেই সহজে বিজয় লাভ করা সম্ভব হবে।’ তিনি বলেন, ‘যারা এলাকায় যান না, দলীয় নেতা-কর্মীর সঙ্গে সম্পর্ক নেই তাদের মনোনয়ন দিলে জয়লাভের ঝুঁকি থাকে।’

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থীর ওপর এবার ভরসা করতে চান দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী নির্বাচনে প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা অনেকটাই নিশ্চিত। কারণ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত এমপিদের বাদ দিয়ে উজ্জ্বল ভাবমূর্তির প্রার্থীর হাতে নৌকা তুলে দিতে পারলে জয়ের ব্যাপারে অনেকখানি নির্ভার থাকা যাবে। বিতর্কিত এমপিদের পরিবর্তন না করে আবারও মনোনয়ন দেওয়া হলে দলের ভাবমূর্তি যেমন নষ্ট হবে, তেমনই ওই প্রার্থীদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হবে। সে জন্য যাদের কারণে দলের ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে তারা ‘শাস্তিস্বরূপ’ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকিট পাবেন না বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রায় অর্ধেক আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন দেবে না। ইতোমধ্যে গত নির্বাচনে যারা প্রার্থী ছিলেন, নির্বাচিত হয়েছিলেন তাদের এলাকার অবস্থান যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে, এলাকায় তাদের অবস্থা, তাদের জনপ্রিয়তা, তারা কোনো বিতর্কে জড়িয়েছেন কি না, সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আছেন কি না ইত্যাদি নিয়েও তথ্যানুসন্ধান চলছে। চলছে একাধিক মাঠ জরিপ। 

আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সার্ভে করছেন। রিপোর্ট অনুযায়ী যারা ভালো কাজ করছেন, যারা জনগণের কাছে যাচ্ছেন, উন্নয়নের প্রচার করছেন। জনগণের সুযোগ-সুবিধা দেখেন এবং জনগণ যাদের চান তাদেরকেই তিনি মনোনয়ন দেবেন।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, ‘জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা ভালো কাজ। জনসাধারণের কাছে গেলেই একজন রাজনীতিবিদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। জনগণের সঙ্গে দূরত্ব কমে আসে। ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়। এমপিদের সক্রিয় হওয়ার মধ্য দিয়ে তৃণমূলে আওয়ামী লীগ আরও শক্তিশালী হবে।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘সংসদীয় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সেসব এমপি জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন, আগামীতে তাদের আর মনোনয়ন দেওয়া হবে না।’ এটাই বাস্তবতা। 

সূত্রগুলো জানায়, আগামী নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পার পাওয়ার কোনো সুযোগ তারা আর এখন দেখছেন না। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক রাজনীতির গতিপ্রকৃতির পরিবর্তন হয়েছে। আগামী দিনে এর প্রভাব বাংলাদেশের রাজনীতিতে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ কারণে বছর শেষে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন হতে পারে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতামুখর। এ জন্য মন্ত্রী-এমপিদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। দায়িত্বপ্রাপ্তরা এ সংক্রান্ত তথ্য নিয়মিতই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করছেন বলে জানা যায়।


এএফ/০২