সিলেট মিরর ডেস্ক
জুন ১৮, ২০২৩
০৫:৩৬ অপরাহ্ন
আপডেট : জুন ১৮, ২০২৩
০৯:৪১ অপরাহ্ন
টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ জেলার সুরমা, যাদুকাটা, কুশিয়ারা, ভোলাই, পাকলিসহ সব নদনদীর পানি বাড়ছে। রোববার (১৮ জুন) দুপুর পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জের ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৪১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে ছাতক, দোয়ারাবাজার উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করছে।
দুপুরে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাত ৯টা থেকে রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীতে এখনও পানি বাড়ছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জের বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১০০ মিলিমিটার।
প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা জানান, ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সুনামগঞ্জের নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোববার সকালে ছাতক পয়েন্ট দিয়ে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ভারতের টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে সুনামগঞ্জে বন্যা হতে পারে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে অনেক এলাকায় নদীর পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। জেলার তাহিরপুর উপজেলার শক্তিয়ার খোলা এলাকার এক কিলোমিটার সড়ক যাদুকাটা নদীর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বর্তমানে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড আরও জানিয়েছে, শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এই নদীর পানি ছাতক উপজেলায় বিপৎসীমার মাত্র ৭০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এদিকে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি ছাড়িয়ে যায় বিপদসীমা। এসময় এ পয়েন্টে রেকর্ড করা হয় ১২.৯৫ পয়েন্ট। বিপদসীমা ছিলো ১২.২৬ পয়েন্ট।
এদিকে সিলেটে গত দুই দিন ২০০ মিলিমিটারের ও বেশি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গত দুই দিনের পরিমাপে দেখা যায় শুক্রবার (১৬ জুন) সকাল ৬টা থেকে শনিবার (১৭ জুন) সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১১৫ দশমিক ৫ মিলিমিটার।
আর শনিবার (১৭ জুন) সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা সিলেটে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৮৮ মিলিমিটার।
এছাড়া শনিবার (১৭ জুন) সিলেটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে গত কয়েকদিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাত এবং পাহাড় থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে সুরমার ভাঙন এখন তীব্র আকার ধারণ করেছে।
নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় শেষ রক্ষা হচ্ছে না উপজেলার জালালপুর গ্রামের প্রাচীন মসজিদ, অসংখ্য বসত বাড়ি।
পাউবো সুনামগঞ্জের এসডিও সমশের আলী মন্টু বলেন, জালালপুর গ্রামের ভাঙন রোধে দ্রুত বালুর বস্তা ফেলতে ঠিকাদারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে গত কয়দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদী ও হাওরে পানি বেড়েছে।
রোববার (১৮ জুন) সকাল পর্যন্ত উজানের পাহাড়ি সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়ক ডুবে গিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সুনামগঞ্জ-তাহিরপুরের মাঝামাঝি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের কৈয়ারকান্দা ১০০ মিটার নামক স্থানে সড়ক পাহাড়ি ঢলে হাওরের পানি বেড়ে ডুবে গিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
জেলার যাদুকাটা, চেলা, সুরমাসহ সবকটি নদীর পানি প্রবল বেগে নিম্নাঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে জেলার সবকটি হাওর পানিতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। এ কারণে কয়েকটি উপজেলায় সড়কও পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলা শহরে আসতে গিয়ে কোনো কোনো সড়কে মানুষজন নৌকা দিয়ে পারাপার হচ্ছেন। পাহাড়ি ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার হাওর পাড়ে ও সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী কয়েক লক্ষাধিক মানুষ গত বছরের বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কের মধ্যে সময় পার করছেন।
জেলার সঙ্গে বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর সড়কের শক্তিয়ারখলাসহ কয়েকটি অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও জেলার হাওর পাড়ের সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙে ভেঙে কষ্ট করে সুনামগঞ্জ জেলা শহরে পৌঁছাতে হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জানান, বন্যার আশঙ্কায় সরকারের তরফ থেকে পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা মজুদ এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এসই/০১