নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ০২, ২০২৩
০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুলাই ০২, ২০২৩
০৭:০২ অপরাহ্ন
সিলেটে ঈদুল আযহার ছুটি শুরুর পর থেকেই বাগড়া দিচ্ছে বৃষ্টি। কখোনাবা থেমে থেমে কখোনাবা টানা বৃষ্টি।
ঈদের আগের দিন থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও ঈদের পর সকাল থেকে দুপুর নিয়মকরে হচ্ছে টানা বৃষ্টিপাত। নাকাল করা এমন বৃষ্টি্তে এবার সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে এবার পর্যটকদের আকাল পড়েছে। হোটেল-মোটেল্গুলোতেও নেই পর্যটকদের তেমন উপস্থিতি।
এদিকে পবিত্র ঈদুল আজহার চার দিনের ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটি শেষ হচ্ছে আজ (শনিবার)। আগামীকাল রবিবার (২ জুলাই) থেকে সিলেটে খুলছে অফিস-আদালত, ব্যাংক-বিমা শেয়ারবাজার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।। খুলবে বন্ধ দোকান-পাট ও শপিং মল।
সারা দেশের মতো সিলেটেও বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) পালিত হয় মুসলমানদের অন্যতম বড় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের ছুটি এক দিন বাড়িয়ে চার দিন করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ফলে ঈদ উপলক্ষ্যে ২৭ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত (মঙ্গলবার, বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার) চারদিন ছুটি ছিল। এর পরদিন ১ জুলাই (শনিবার) সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে এবারের ঈদের ছুটি হয় পাঁচ দিন।
কিন্তু টানা পাঁচ দিন ছুটিতেও প্রকৃতিকন্যা সিলেটে পর্যটকদের অনুপস্থিতি চোখে পড়ছে সবার।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয় জানিয়েছে, সিলেটে ঈদের আগের দিন বুধবার সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ৩৩ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ঈদের দিন সকালে কিছুক্ষণ বৃষ্টি ছিল না। তবে সকাল ১০টার পর বৃষ্টি শুরু হয়। সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ৩০ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। শুক্রবার ভোর থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টির পর দুই ঘণ্টা থেমে আবার বৃষ্টি শুরু হয়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আবার বৃষ্টি শুরু হয়। এইদিন সকাল ছয়টা থেকে পরবর্তী ১২ ঘণ্টায় সিলেটে ৭৩ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে । সর্বশেষ গত ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১০০.১ মি.মি.। আজ শনিবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত মোট ৬২মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে।
![]()
এদিকে টানা বৃষ্টিতে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের উপস্থিতি ছিলো একেবারেই হাতেগোনা। কোম্পানীগঞ্জে্র সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্রে গতকাল পর্যন্ত পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল হাতেগোনা। তবে দুপুরের দিকে কিছু পর্যটককে দেখা যায় এই স্পটে।
আমাদের কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি কবির আহমদ জানান, বৃষ্টির কারনে ঈদের পরের দিন পর্যটক উপস্থিতি একেবারেই কম ছিলো। কিন্তু আজ শনিবার বৃষ্টির তুলনায় পর্যটক উপস্থিতি অনেক বেশি ছিলো। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছাতা নিয়ে অনেকেই হাজির হয়েছিলেন সাদাপাথরে।
জাফলং পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের উপস্থিতি খুব একটা নেই বলে জানিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দা রুবেল আহমেদ। তিনি বলেন, দু-তিন দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। এ জন্য পর্যটকদের তেমন একটা উপস্থিতি নেই। এরপরও তাঁরা নিরাশ হচ্ছেন না।
এদিকে রাতারগুলেও বৃষ্টির প্রভাবে পর্যটকদের উপস্থিতি কম ছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। রাতারগুল গ্রামের মাঝি সোনা মিয়া বলেন, কিছু পর্যটক এসেছেন। তবে বৃষ্টির কারণে সেটা আশানুরূপ না।
তবে আজ শনিবার বিকেলে সিলেটের চা-বাগানগুলোতে পর্যটকদের ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। শহরতলির বিমানবন্দর সড়কের পাশে ও সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পাশের চা-বাগানগুলোতে বিনোদনপ্রেমীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তবে তাঁদের অধিকাংশই স্থানীয় পর্যটক বলে জানা গেছে।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী রোমানা চৌধুরী পরিবার নিয়ে চা বাগানে বেড়াতে এসে জানান ঈদে দেশে এসেছি। ইচ্ছে ছিলো পরিবার নিয়ে আজ সাদাপাথর যাব। গাড়িও ঠিক করে রেখেছিলাম কিন্তু বৃষ্টির জন্য আর যাওয়া হয়নি। পরে বিকেলে এখানে ঘুরতে এসেছি।
![]()
এদিকে হোটেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন সিলেটের পর্যটন ব্যবসায় মন্দা কাটছে না দীর্ঘদিন ধরে। ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে টানা চার বছর পর্যটকের দেখা না পেয়ে হতাশ ব্যবসায়ীরা। টানা দুই বছর মহামারী শেষে ২০২২ সালে বন্যা আর বৃষ্টির কারণে গত ঈদুল ফিতর বাড়িয়েছে হতাশা। পাঁচ দিনের লম্বা ছুটি থাকার পরও সিলেটে সেভাবে চোখে পড়েনি পর্যটকদের। ফলে পর্যটন কেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি নগরীর হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজগুলোও ছিল ফাঁকা।
হোটেল মোটেলগুলোর ব্যবসা এবার মোটেই প্রত্যাশিত নয় বলে মনে করছেন সিলেটের শতাব্দী হোটেল এন্ড গেস্ট হাউজের মালিক আব্দুল কাহহার। সিলেট মিররকে তিনি বলেন আবহাওয়ার কারনেই আশাতিত ব্যবসা হচ্ছে না। তারপরও স্বাভাবিক বুকিং রয়েছে সিলেটের হোটেল মোটেলে। তবে উল্লেখ্যযোগ্য কোন কিছু নয়।
এবার বৈরী আবহাওয়ার কারনে পাঁচ দিন ছুটি থাকা সত্ত্বেও আশানুরুপ পর্যটক আসেননি সিলেটে। নগরের ওসমানী শিশু পার্ক, ধোপাদিঘীরপাড় ওয়াকওয়ে, ক্বিন ব্রিজ ও নগরের পাশের চা-বাগানগুলোতে মানুষের উপস্থিতি কিছুটা থাকলেও এরা বেশিরভাগই স্থানীয়।
কিন্তু পুরো ঈদের ছুটি বৃষ্টি বিঘ্নিত হওয়ায় জাফলং, রাতারগুল, লালাখাল, সাদাপাথর, বিছনাকান্দিসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমনপিপাসু মানুষ আসেননি প্রকৃকন্যা সিলেটের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। এ জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করে পর্যটন সংশ্লিষ্টর বলেছিলেন, বৃষ্টি না হলে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় থাকতো পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে।
টানা পাঁচদিন ঈদের ছুটি শেষে আগামীকাল রবিবার অফিসে যোগ দেবেন কর্মজীবীরা।
এসই/০৫