সিলেট ও সুনামগঞ্জে স্বল্প মেয়াদি বন্যার আশঙ্কা : ৩ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

সিলেট মিরর ডেস্ক


জুলাই ০৩, ২০২৩
০২:৫২ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুলাই ০৩, ২০২৩
০২:৫২ পূর্বাহ্ন



সিলেট ও সুনামগঞ্জে স্বল্প মেয়াদি বন্যার আশঙ্কা : ৩ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত


সিলেটে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বাড়ছে নদীর পানি। সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, লোভা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে সিলেটে সবকটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

এদিকে দেশজুড়ে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোণা, সিলেট ও সুনামগঞ্জে স্বল্প মেয়াদি বন্যার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

অন্যদিকে আগামী তিন দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে জানা যায়, দেশের পূর্বাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে স্বল্প মেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

রবিবার সকাল ৯টায় নেত্রকোণা ও সকাল ১১টায় সুনামগঞ্জ এলাকায় অধিকাংশ নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও আশেপাশের এলাকায় উজানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।

বৃষ্টি বাড়তে থাকায় পুরাতন সুরমা, যাদুকাটাসহ কিছু নদীতে পানির সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্প মেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

এছাড়া আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি চলে আসতে পারে এবং ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

গত ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ শনিবার সকাল ৬টা থেকে রবিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশের মধ্যাঞ্চল ঢাকা ও ময়মনসিংহে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। ভারী বৃষ্টি ছিল সিলেটেও। এই সময় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে নেত্রকোনায় ১২৯ মিলিমিটার। বিগত কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মৌসুমী বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে সক্রিয় এবং তা অন্যত্র মোটামুটি সক্রিয় ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।

রবিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, এ সময়ে সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। একই সঙ্গে আগামী তিন দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সীমান্তের ওপারে মেঘালয়ে টানা ও ভারি বর্ষনের ফলে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর নদ-নদীর পানিপ্রবাহের উচ্চতা বেড়েছে। রবিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত দেওয়া হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে  সুরমা নদীর কাইনাঘাট পয়েন্টে পানির বিপৎসীমা ১২.৭৫ সেন্টিমিটার। সেখানে  ১১.৭০ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০.৮০ সেন্টিমিটার। সেখানে পানি ৯.৮৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়া কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৩.৫ সেন্টিমিটার। সে পয়েন্টে পানি ১০.৮১ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমা ৯.৪৫ সেন্টিমিটার। নদীর সে পয়েন্টে পানি এক সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।

ধলাই নদের ইসলামপুর পয়েন্টে  পানি ১০.২০ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, দুই দিন ধরে পানি বাড়তির দিকে। তবে আশা করছি মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত কমে এলে এখানে পানি বাড়ার হারটা কমে আসবে।

তিনি জানান, ‘নদীর পানি কোনো পয়েন্টেই বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। তবে নিম্নাঞ্চল, বিশেষ করে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটের যেদিকে বাঁধ নাই সে জায়গাগুলো প্লাবিত হয়েছে।’

এদিকে হবিগঞ্জের খোয়াই, কুশিয়ারা ও কালনী নদীর পানি দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ বৃষ্টির পাশাপাশি ভারতের উজানে পাহাড়ি ঢলের কারণে এই পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মাঝে কালনী-কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অপরদিকে গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র ও করতোয়ার পানি পরিমাপ করে দ্রুত পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, শনিবার বিকাল ৩টা থেকে আজ রবিবার বিকাল ৩টা পযর্ন্ত করতোয়া ও ব্রহ্মপুত্রের নদের পানি বাড়ছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাখালি পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার কমেছে।

করতোয়া ও ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধির ফলে সদর, গোবিন্দগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নদীবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। এতে চরসহ ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে নদী পারের মানুষরা। পানি আরও বৃদ্ধি পেলে নতুন নতুন এলাকায় পানি উঠার শঙ্কা রয়েছে।

গাইবান্ধা পানি উনয়ন বোর্ডের (পাউবো) নিবার্হী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, ব্রহ্মপুত্র ও করতোয়া নদের পানি বাড়লেও তিস্তা ও ঘাঘটের পানি কমতে শুরু করেছে। তবে কোনো নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। রোববার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, করতোয়া, তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।


এসই/০৫