নগরের ৪২টি ওয়ার্ডেই মিলেছে কমবেশি এডিসের লার্ভা

সিলেট মিরর ডেস্ক


আগস্ট ০৪, ২০২৩
০৬:৪৬ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০৪, ২০২৩
১০:১৯ অপরাহ্ন



নগরের ৪২টি ওয়ার্ডেই মিলেছে কমবেশি এডিসের লার্ভা


সিলেট নগরের ৪২টি ওয়ার্ডেই কমবেশি এডিস মশার লার্ভা পেয়েছে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য শাখা। তবে নগরে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ থাকলেও এডিস মশা নিধনে সেই অর্থে কার্যকর অভিযান পরিচালিত হচ্ছে না বলে নগরবাসী অভিযোগ করেছেন।  যদিও সিটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে দেদার অভিযান চলছে। 

নগরবাসীর অভিযোগ, সিলেট নগরের নালা-নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। সন্ধ্যার পর মশার যন্ত্রণায় টেকা যায় না। এমনকি দিনের বেলাও মানুষ মশার কামড়ে অতিষ্ঠ। বাসাবাড়ি, নালা-নর্দমা ও বিভিন্ন স্থাপনায় পানি জমে থাকলেও তা অপসারণ করা হচ্ছে না।

সিলেটের সিভিল সার্জন এস এম শাহরিয়ার জানান, জেলায় গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন করে ১৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৭ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৬৫। গতকাল শনাক্ত হওয়া ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে নগরের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আটজন, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজন, নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন, গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন এবং জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন চিকিৎসাধীন আছেন। 

আখালিয়া নতুনবাজারের বাসিন্দা পুলক মজুমদার বলেন, তাঁর এলাকায় মূল সড়কের পাশে দীর্ঘদিন ধরে ময়লা-আবর্জনা স্তূপাকারে পড়ে আছে। দুর্গন্ধের পাশাপাশি এ স্থানে সব সময় মশা উড়তে দেখা যায়। অথচ সিটি কর্তৃপক্ষ তা অপসারণে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যদিও দিন দিন সিলেট নগরে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছেই। নগরের ময়লা-আবর্জনা দ্রুত অপসারণ করতে না পারলে রোগের প্রকোপ বাড়বে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের আখালিয়া নতুনবাজার, আখালিয়া, কালীবাড়ি, পনিটুলা, উপশহর, কালীঘাট, নবাব রোড, ঘাসিটুলা, বেতেরবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে ময়লা-আবর্জনা স্তূপাকারে পড়ে আছে। এ ছাড়া নগরের অন্তত অর্ধশতাধিক স্থানে নালা-নর্দমা উন্মুক্ত অবস্থায় রয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন পরিত্যক্ত জলাশয় ও ফোয়ারায় এডিস মশা জন্মাচ্ছে। এসব স্থান মূলত মশার প্রজননক্ষেত্র বলে স্থানীয় বাসিন্দারা মন্তব্য করেছেন। 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের কোষাধ্যক্ষ ছামির মাহমুদ বলেন, সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের আরেকটু তৎপর হওয়া প্রয়োজন। তারা সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে, অভিযান পরিচালনা করছে। তবে এটা আরও বাড়াতে হবে। এ ছাড়া মশকনিধনে যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে, তা পর্যাপ্ত নয়। অথচ মশা নিয়ন্ত্রণ করাই এখন বড় ব্যাপার। যেকোনো মূল্যেই মশকনিধন করতে হবে। নতুবা ঢাকার মতো সিলেটেও ডেঙ্গু পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হয়ে উঠবে। 

সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা শাখা জানায়, সিটি করপোরেশনে যে সংখ্যক পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন, তা পর্যাপ্ত নয়। নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডেই কেবল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি এখন নিয়মিত চলে। এর বাইরে সিটিতে নতুনভাবে যুক্ত হওয়া ১৫টি ওয়ার্ডে এখনো পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ৪৭৬ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করছেন। অথচ নগর নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখতে সব মিলিয়ে অন্তত ৭০০ কর্মী প্রয়োজন। 

সিলেট সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা শাখার প্রধান হানিফুর রহমান বলেন, লোকবলের তীব্র সংকট থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা অপসারণে কাজ চলছে। প্রতিদিনই বর্জ্য অপসারণ করা হয়। ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী সোমবার দুপুরে সিটি করপোরেশন পরিষদের সাধারণ সভা ডাকা হয়েছে। একেক দিন একেক ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালালেও তাতে কার্যকর ফলাফল নিশ্চিত হচ্ছে না। এ অবস্থায় একযোগে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিতেই মূলত সাধারণ পরিষদের সভা ডাকা হয়েছে। 

সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য শাখা জানায়, প্রয়োজনীয় লোকবল–সংকটে মশার লার্ভা ধ্বংসে ব্যবস্থা নিতে বেগ পেতে হচ্ছে। করপোরেশনে একজন কীটতত্ত্ববিদ নেই। এ ছাড়া মশকনিধনকর্মী রয়েছেন মাত্র তিনজন। তবে প্রতিদিন দৈনিক মজুরিতে ৪০ জন কর্মী নিয়োগ দিয়ে ৬টি স্থানে মশকনিধনের জন্য তাঁদের দিয়ে স্প্রে ও ফগার মেশিন দিয়ে কাজ করানো হয়। এর বাইরে ১২ জন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিদিন নগরের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে লার্ভার অনুসন্ধান করছে। প্রতিটি ওয়ার্ডেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। 

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রতিরোধে আগামীকাল শনিবার থেকে নগরের সব কটি ওয়ার্ডে একযোগে মশক নিধনের ওষুধ ছিটাতে উদ্যোগ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে সচেতনতা তৈরিতে মাইকিংয়ের পাশাপাশি প্রচারপত্রও বিতরণ করা হবে। 

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ থামাতে এডিস মশা নিধনে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। ওষুধ ছিটিয়ে লার্ভা ধ্বংস করা হচ্ছে। এমনকি ডেঙ্গু মোকাবিলায় নিয়মিত অভিযানও পরিচালনা করে বিভিন্ন ভবনমালিককে জরিমানা করা হচ্ছে। ডেঙ্গু থেকে নিরাপদ থাকতে মশারি ব্যবহারসহ প্রয়োজনীয় বিষয়ে নগরবাসীকে সচেতন করাও হচ্ছে।


প্রথম আলো/এএফ-০৩