একাদশ সংসদের মারা গেছেন ৩১ সংসদ সদস্য

সিলেট মিরর ডেস্ক


নভেম্বর ০১, ২০২৩
১১:২২ অপরাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ০১, ২০২৩
১১:২২ অপরাহ্ন



একাদশ সংসদের মারা গেছেন ৩১ সংসদ সদস্য


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন দিন পর, ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি মারা যান আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তিনি ছিলেন কিশোরগঞ্জ-১ (কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর উপজেলা) আসনে পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত সৈয়দ আশরাফ ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অসুস্থতার কারণে তিনি দেশে না থেকেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে- কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন। তবে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার আগেই তিনি মারা যান। চলতি সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া কিশোরগঞ্জ-১ আসনে উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তার ছোট বোন ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি।

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, একাদশ সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই মারা যান। বার্ধক্যজনিত কারণে তার মৃত্যুতে শূন্য হয় রংপুর-৩ আসন। পরে এ আসনে উপনির্বাচন হয় ওই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন তার ছেলে রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদ।

সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সংসদ সদস্য ইসমাত আরা সাদেক মারা যান ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি। তার স্বামী প্রয়াত এ এস এইচ কে সাদেক ছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী। জাতীয় সংসদে তিনিই প্রথম যশোর থেকে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত নারী সংসদ সদস্য। তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়েরও প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। পরে ওই শূন্য আসনের উপনির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা এবং পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ শামসুর রহমান শরীফ মারা যান ২০২০ সালের ২ এপ্রিল। তিনি বার্ধক্যজনিত জটিলতাসহ নানা দুরারোগ্য রোগে ভুগছিলেন। তার মৃত্যুর পর শূন্য ওই আসনের ২৬ সেপ্টেম্বরের উপনির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরুজ্জামান বিশ্বাস।

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যু হয় ২০২০ সালের ১৩ জুন। মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। একাদশ সংসদে মোহাম্মদ নাসিম ছিলেন ষষ্ঠবারের মতো সিরাজগঞ্জ-১ আসনের জনপ্রতিনিধি। পরে ওই আসনে উপনির্বাচনে ভোটে বিজয়ী হন তার ছেলে তানভীর শাকিল জয়।

একই বছরের ৯ জুলাই মারা যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। তিনি কিডনি ও শ্বাসতন্ত্রের জটিলতায় ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলে সাহারা খাতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। ছিলেন ঢাকা-১৮ আসনে পরপর তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। পরে ওই আসনের উপনির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিব হাসান। 

২০২১ সালের ১৪ এপ্রিল করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক আইনমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন খসরু। তিনি কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনের পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। ১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে তিনি আইনমন্ত্রী ছিলেন। পরে ওই আসনে উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম খান।

সাবেক ডেপুটি স্পিকার ও কুমিল্লা-৭ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ মারা যান ২০২১ সালের ৩০ জুলাই। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি নিউমোনিয়া, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, ফুসফুসে ক্ষতসহ নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। প্রবীণ এই রাজনীতিক কুমিল্লার ওই আসন থেকে পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। পরে ওই আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন।

চলতি সংসদের ডেপুটি স্পিকার এবং গাইবান্ধা-৫ আসনের এমপি ফজলে রাব্বি মিয়ার মৃত্যু হয় ২০২২ সালের ২৩ জুলাই। ৭৬ বছর বয়সী প্রবীণ এই রাজনীতিক সাতবার ওই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্বে ছিলেন। একই সঙ্গে কার্য উপদেষ্টা কমিটি ও পিটিশন কমিটির সদস্য এবং লাইব্রেরি কমিটির সভাপতি ছিলেন।

উচ্চরক্তচাপ ও বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মারা যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তিনি ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। পরে ওই বছরের ৫ নভেম্বর ওই শূন্য আসনের উপনির্বাচনে বিজয়ী হন সাজেদা চৌধুরীর ছেলে শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবু।

গত ১৫ মে মারা যান ঢাকাই চলচ্চিত্রের মিয়াভাইখ্যাত কিংবদন্তি নায়ক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। তিনি কিডনি রোগে ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। পরে ১৭ জুলাই ওই আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বিজয়ী হন।

ফুসফুসে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে গত ২ জুন মারা যান চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন। পরে ৩০ জুলাই ওই আসনের উপনির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু।

২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য ও জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈনউদ্দীন খান বাদল। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। ঢাকা-১৪ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হক মারা যান ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের হাউস কমিটি এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।

এ ছাড়া গাইবান্ধা-৩ আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য ডা. মো. ইউনুস আলী সরকারের মৃত্যু হয় ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর। বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাগেরহাট-৪ আসনের এমপি ডা. মোজাম্মেল হোসেন মারা যান ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি। বগুড়া-১ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান ২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি মারা যান। হৃদরোগে আক্রান্ত ঢাকা-৫ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা মারা যান ২০২০ সালের ৬ মে। নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রানীনগর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইসরাফিল আলম ২০২০ সালের ২৭ জুলাই মারা যান।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালের ১১ মার্চ ও ২ সেপ্টেম্বর মারা যান সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস এবং সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসিবুর রহমান স্বপন। একই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর মারা যান জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সংরক্ষিত মহিলা আসন-৪৫-এর এমপি বেগম মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী। কিডনি রোগে ভুগে ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর মারা যান টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনের সংসদ সদস্য মো. একাব্বর হোসেন। সংরক্ষিত নারী আসন-১৯ (পিরোজপুর-১)-এর এমপি শেখ এ্যানি রহমান মারা যান ২০২২ সালের ১১ অক্টোবর।

নেত্রকোনা-৪ আসনের এমপি রেবেকা মমিন মারা যান গত ১১ জুলাই। ৭৬ বছর বয়সী আওয়ামী লীগ থেকে টানা তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত এই এমপি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। গত ৩০ আগস্ট মারা যান নাটোর-৪ আসনের (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস।

চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। তিনি ওই আসনের সংসদ সদস্য ও জাসদ নেতা মঈনুদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুর পর ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারির উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ২ জুন মোছলেম উদ্দিন আহমেদের মৃত্যুর পর ওই আসনের উপনির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের নোমান আল মাহমুদ।

১৭ মিনিটের ব্যবধানে গত ৩০ সেপ্টেম্বর মারা যান ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া এবং লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এমপি এ কে এম শাহজাহান কামাল। আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া কিডনিজনিত রোগে এবং শাহজাহান কামাল ভুগছিলেন বার্ধক্যজনিত নানা রোগে। গত ৩ অক্টোবর ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ওই দুই শূন্য আসনে ৫ নভেম্বর ভোট হওয়ার কথা।

সর্বশেষ গত ২১ অক্টোবর সংসদ সদস্য শাহজাহান মিয়ার মৃত্যুতে শূন্য হয় পটুয়াখালী-১ আসন। ২৪ অক্টোবর ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী এই আসনের উপনির্বাচন হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর, আগামী ২৬ নভেম্বর। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলেছেন, সাংবিধানিক ধারাবহিকতা রক্ষায় তাদের এই নির্বাচন করতে হচ্ছে।


এসই/০৫