সিলেট মিরর ডেস্ক
ডিসেম্বর ২২, ২০২৩
০৩:৫৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট : ডিসেম্বর ২২, ২০২৩
০৩:৫৯ পূর্বাহ্ন
সিলেটের কিনব্রিজের মেরামতকাজ শুরুর প্রায় চার মাস পর উন্মুক্ত করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেতুটি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রিকশা, পথচারী ও লোকজন পারাপার শুরু হয়েছে। কিনব্রিজটি উন্মুক্ত করতে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দুই পাশে পথ রোধ করে রাখা টিনের বেড়া অপসারণ করা হয়।
মোটরযান যাতে চলাচল করতে না পারে, সে জন্য দুই পাশে খুঁটি বসানোর উদ্যোগ নিচ্ছে কিনব্রিজের তদারককারী প্রতিষ্ঠান সিলেটের সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। ব্রিজ দিয়ে মোটরযান চলাচল বন্ধ রাখার কথা জানালেও আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পথচারীদের পাশাপাশি সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে বৃহস্পতিবার রাতে সেতুর দুই পাশে খুঁটি বসানোর ব্যবস্থা করা হবে। তখন সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ইঞ্জিনচালিত যানবাহন চলাচল করতে পারবে না।
সিলেট সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন বলেন, সেতুটি পুরোনো হওয়ায় সংস্কারকাজের পর যাতে মোটরযান চলাচল করতে না পারে, সেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পথচারীরা হেঁটে পারাপারের পাশাপাশি রিকশা, মোটরসাইকেল চলাচলের ব্যবস্থা রাখার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা ভারী কোনো যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে না।
কিনব্রিজ সিলেট নগরের মধ্যবর্তী স্থানে স্থাপিত হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা সুরমা নদী পারাপারে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে থাকেন। চার মাস ধরে কিনব্রিজ মেরামতকাজের জন্য বন্ধ থাকায় সিলেটের উত্তর-দক্ষিণ অংশের বাসিন্দাদের যাতায়াতে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
কিনব্রিজ বন্ধ থাকায় বিকল্প হিসেবে নগরের অভ্যন্তরে থাকা শাহজালাল ও কাজীরবাজার সেতু ব্যবহার করেছেন পথচারীরা। তবে সেই দুটি সেতু শহরের দুই পাশে হওয়ায় ভোগান্তি বেশি পোহাতে হয়েছে। কিনব্রিজ চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে সুরমা নদীর দুই পাশের বাসিন্দাদের।
নগরের তালতলা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ কালাম আহমদ বলেন, নগরের দক্ষিণ পারে যাতায়াতের জন্য কিনব্রিজই বেশি ব্যবহৃত হয়। ব্রিজটি বন্ধ থাকায় এত দিন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এখন উন্মুক্ত হওয়ায় চলাচলে সুবিধা হলো।
সওজ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে যায়, জরাজীর্ণ কিনব্রিজ সংস্কারের বিষয়ে ২০২০ সালে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হয়। সেখানে সেতু সংস্কারের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সওজের পক্ষ থেকে ব্রিজটি সংস্কারে মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় সওজ। একই বছরের জুন মাসে বরাদ্দের টাকা রেলওয়ের সেতু বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তবে নানা জটিলতায় সংস্কারকাজ হচ্ছিল না। অবশেষে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার পর গত ১৬ আগস্ট প্রথম দফায় দুই মাসের জন্য কিনব্রিজ দিয়ে চলাচল বন্ধ করে সংস্কারকাজ শুরু হয়। তবে সংস্কারকাজ দুই দফা পিছিয়ে শেষ হয় ১৫ ডিসেম্বর। এরপরও ব্রিজটি উন্মুক্ত করা হচ্ছিল না। অবশেষে ওই সেতুতে রাখা নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নিলে বুধবার সন্ধ্যায় পথচারীরা সেতু দিয়ে পারাপার শুরু করেন।
সিলেট নগরকে উত্তর ও দক্ষিণ—দুই ভাগে বিভক্ত করেছে সুরমা নদী। দুই অংশকে সংযুক্ত করতে নদীর ওপর ১৯৩৬ সালে ধনুকের মতো বাঁকা একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ১ হাজার ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৮ ফুট প্রস্থের লোহার তৈরি এ সেতুর নাম কিনব্রিজ। এটি এখন দেশ-বিদেশে সিলেটের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। তবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় ঐতিহ্যবাহী এই সেতু টিকিয়ে রাখার স্বার্থে কয়েক বছর আগে এর ওপর দিয়ে সব ধরনের ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এসই/০২