সিলেট মিরর ডেস্ক
জানুয়ারি ১৮, ২০২৪
০৫:৩৬ অপরাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ২০, ২০২৪
০১:৪০ অপরাহ্ন
সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসন থেকে এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন মাওলানা মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী। তার বাবা প্রয়াত আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী (ফুলতলী) সিলেটের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম। তার অনুসারীরা স্থানীয়ভাবে 'ফুলতলী অনুসারী' হিসেবে পরিচিত। সিলেট বিভাগের ৪টি জেলাতেই ফুলতলী অনুসারীদের ভালো ভোট ব্যাংক রয়েছে। সব জেলা উপজেলাতেই এই পরিবার ব্যাপক সমাদৃত।
জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচনে এই পরিবার যে প্রার্থীকে সমর্থন দেয় তার জয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ফলে তাদের বলা হয় কিংস মেকার। এতদিন এই পরিবার এমপি বানালেও এবারই প্রথম কোনো প্রার্থীকে সমর্থন না দিয়ে হুছামুদ্দীন চৌধুরী নির্বাচনে অংশ নেন।
প্রথমবার অংশ নিয়েই হুছামুদ্দীন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদকে তিনি হারিয়ে দেন। হুছামুদ্দীনের ৪৭ হাজার ১৫৩ ভোটের বিপরীতে মাসুক উদ্দিন আহমদ ৩২ হাজার ৯৭৩ ভোট পেয়েছেন। হুছামুদ্দীন আনজুমানে আল ইসলার চেয়ারম্যান। আল ইসলাহ ফুলতলী অনুসারী আলেমদের সংগঠন।
সিলেট-৫ আসন জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলা নিয়ে ঘটিত। এই এলাকা দুটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ফুলতলী পরিবারের মুরিদ, ভক্ত-আশেকান। ফলে দলীয় প্রার্থী থাকার পরও নির্বাচনী প্রচারণায় হুছামুদ্দীনের পক্ষে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকেও অংশ নিতে দেখা যায়। তার প্রচারণা ও সমর্থনে এই দুই উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রকাশ্যে দেখা গেছে। এ নিয়ে দলের কাউকে সমালোচনা করতেও দেখা যায়নি।
কেবল তাই নয় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন হুছামুদ্দীন। এ সাক্ষাতের পর থেকে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সবুজ সংকেত পেয়েই তিনি মাঠে নামেন।
আব্দুল লতিফ চৌধুরী সবসময় রাজনীতি কিংবা ভোটের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ নাম ছিল। তবে তিনি কখনো নির্বাচনে অংশ নেননি। তাঁর মৃত্যুর পর আলোচনায় আসেন হুছামুদ্দীন। তিনি রাজনৈতিক সচেতন ও আনজুমানে আল ইসলার চেয়ারম্যান হিসেবে সরকারি মাদরাসা পড়ুয়া আলেম ও ছাত্রদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়।
ফুলতলী অনুসারীরা জামাতেতে ইসলামী ও ক্বওমী মাদ্রাসাপন্থী আলেমদের বিরোধী হওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে এই পরিবারের গুরুত্ব ও সম্মান আলাদা। তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সিলেট সিটি করপোরেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনকে নিয়মিত দেখা যায়। একইভাবে সিলেট বিভাগের আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদেরও দেখা যায়।
প্রতিটি নির্বাচনের আগেই ফুলতলী অনুসারীদের ভোট কোন প্রার্থীর পক্ষে যাবে, এ নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে নানা আলোচনা থাকে। এবারের নির্বাচনের আগেও বিভিন্ন আসনের নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা ভোটের মাঠে ফুলতলী অনুসারীদের ভোট পেতে নানা কৌশল অবলম্বন করেন। এমনকি স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও প্রার্থীরা ফুলতলী অনুসারীদের ভোট টানার চেষ্টা করেন এবং যারা সেই সমর্থন পেয়ে যান তাদের জয় অনেকটা নিশ্চিত থাকে।
নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় হুছামুদ্দীন চমক দেখান। ফুলতলী অনুসারীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক আলেমদের শীতল সম্পর্ক ছিল। কানাইঘাট উপজেলায় কওমিপন্থীদের ভালো ভোট ব্যাংক ছিল, সেই ভোট টানতে তাকে দারুল উলুম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা মশাহিদ বাইয়ূমপুরীর কবর জিয়ারত করতে দেখা যায়। প্রয়াত মশাহিদ বাইয়ূমপুরী কেবল কওমী ঘরানা নয় সিলেটের সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক জনপ্রিয়। এরপর থেকে কওমী ভোটও তিনি আদায় করে নেন।
হুছামুদ্দীন চৌধুরী বলেন, আমি কোনো দল থেকে নির্বাচনে অংশ না নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি, কারণ আমি সব মানুষের পক্ষে কথা বলতে চাই। দেশ ও জাতীর উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চাই। জাতি গঠনে আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে ধর্মীয় শিক্ষার সমন্বয় ঘটাতে চাই। বঞ্চিত ও অসহায় মানুষের পক্ষে আমাকে সবসময় সোচ্চার দেখবেন। আমাদের পরিবারের প্রতি দেশের মানুষের যে বিশ্বাস তা আরও বৃদ্ধ করে জনগণের সমস্যা দূর করতে কাজ করে যাব। সততা ও জবাবদিহিতা সবসময় থাকবে। আমি মানুষের সেবক হয়ে কাজ করবো।
দেশের কোথাও সংখ্যালঘু নির্যাতন হলে আপনি সংসদে সোচ্চার হবেন কী না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের পরিবার কিংবা অনুসারীদের হাতে কখনো অন্য ধর্মের কেউ আঘাত পাননি। যেখানেই সংখ্যালঘুদের ওপর আঘাত আসবে আমি আমার জায়গা থেকে তার প্রতিবাদ জানাব।
আরসি-০২