ওসমানীনগরে হিন্দুদের ত্রাণ দিতে বাধা, ভিডিও ভাইরাল

ওসমানীনগর প্রতিনিধি


এপ্রিল ০৫, ২০২০
০২:৫৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ০৫, ২০২০
০৬:২৫ পূর্বাহ্ন



ওসমানীনগরে হিন্দুদের ত্রাণ দিতে বাধা, ভিডিও ভাইরাল

অভিযুক্ত কামরুল ইসলাম (ডানপাশে গেঞ্জি পরা)

সিলেটের ওসমানীনগরে হিন্দুদের ত্রাণ দিতে নিষেধ করার অভিযোগ উঠেছে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। এমন একটি ভিডিও গত দুই দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে চারদিকে নিন্দার ঝড় ওঠে। স্থানীয়রাও এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

জানা গেছে, করোনাভাইরাস সারা বিশ্বে মহামারী আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশেও করোনা প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। সবাইকে ঘরে থাকার নিদের্শ দিয়েছে প্রশাসন। এমন সময় সরকারের পাশাপাশি গরিব ও অসহায়দের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছেন বিত্তবানরা।

কিন্তু করোনাভাইরাসে দেশের সংকটময় মুহূর্তে ত্রাণ বিতরণকালে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করে আলোচনার জন্ম দিলেন ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপি নেতা ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সিলেট-১ এর পরিচালক কামরুল ইসলাম।

তিনি গতকাল শুক্রবার (৩ এপ্রিল) জুমার নামাজের পর উপজেলার স্থানীয় একটি মসজিদে সবার সঙ্গে ত্রাণ বিতরণ করেন। সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে জনসমাগম করে মসজিদে ত্রাণ বিতরণে নেতৃত্ব দেন ওই বিএনপি নেতা। ত্রাণ বিতরণের খবর পেয়ে স্থানীয় কিছু হিন্দু হতদরিদ্র মসজিদে আসেন ত্রাণ নিতে। এ সময় বিএনপি নেতা কামরুল ইসলাম তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, 'আপনারা হিন্দু কেউ এখানে আসবেন না। হিন্দু কারও নাম এই তালিকায় নেই, তাই হিন্দু কাউকে ত্রাণ দেওয়া হবে না।'

ত্রাণ বিতরণের ঘটনাটি ফেসবুকে লাইভ সম্প্রচার করা হয় শাহ জামাল নামের একজনের ফেসবুক আইডি থেকে। সঙ্গে সঙ্গেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে পড়লে চারদিকে নিন্দার ঝড় ওঠে।

সোহাগ আহমদ নামের এক ব্যক্তি কমেন্টে লিখেন, 'একজন বলছেন হিন্দু কেউ এখানে আসবে না, হিন্দুদের নাম লিস্টে নাই। আমার কথা হলো, ওদের কি কারণে ত্রান দেওয়া হলো না? একটু বুঝিয়ে বলেবেন দয়া করে?'

চুনু মিয়া নামের আরেকজন কমেন্ট করেন, 'এটা কোন ধরণের সাহায্য যা মুসলমান পাবে, হিন্দু পাবে না!'

এ বিষয়ে উপজেলা ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি পাপ্পু বহ্নি বলেন, 'ওই বিএনপি নেতা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নির্বাচনের সময় হিন্দুদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চেয়েছেন। সবাই তাকে ভোট দিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পরিচালক বানালেন আর এখন তিনিই দুর্যোগকালীন মুহূর্তে ধর্ম বিচার করে ত্রাণ বিতরণ করছেন!'

মানবাধিকার কর্মী উমেদ চৌধুরী বলেন, 'দুইদিন আগে নিউজে দেখলাম পাকিস্তানে হিন্দুদের ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে না। এ বিষয়টি নিয়ে দেশ-বিদেশে পাকিস্তানকে গালি দিচ্ছে সবাই। কিন্তু আমাদের দেশেও এমন হতে পারে ভাবনায় ছিল না। তারা বোঝালেন, পাকিস্তান থেকে আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন হলেও এখনও চিন্তা-চেতনায় অনেকেই পাকিস্তানি ভাবনাকে লালন করি। ঘিলুহীনরা বোঝে না, মানুষ আর মানবতা ছাড়া কোনো আদর্শই টিকতে পারে না।'

এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা ও পল্লী বিদুৎ সমিতি সিলেট-১ এর পরিচালক কামরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। 

ওসমানীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাহমিনা আক্তার এ বলেন, 'প্রথম কথা হচ্ছে প্রশাসনকে না জানিয়ে মসজিদে জনসমাগম করে ত্রাণ বিতরণ করা ঠিক হয়নি। আর এই সময়ে কে কোন জাতি বা ধর্মের তা বিচার করে ত্রাণ বিতরণ অনুচিত। ওসমানীনগর থানার ওসি রাশেদ মোবারক সাহেবকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।'