করোনা সচেতনতায় দোয়ারাবাজারের ওসি'র খোলা চিঠি

দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি


মার্চ ২৯, ২০২০
১১:৫৬ অপরাহ্ন


আপডেট : মার্চ ২৯, ২০২০
১১:৫৬ অপরাহ্ন



করোনা সচেতনতায় দোয়ারাবাজারের ওসি'র খোলা চিঠি

করোনা সচেতনতায় সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে উপজেলাবাসীর উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখিছেন সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল হাসেম।

 

জানা গেছে, কয়েকদিন যাবৎ দোয়ারাবাজারের কিছু এলাকা ও হাটবাজারে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষিত হচ্ছে। বিভিন্ন হাট-বাজারের ব্যবসায়ীসহ জনসাধারণ কেউই কথা শুনছেন না, স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এমন পরিস্থিতিতে আজ রবিবার ‘সম্মানিত দোয়ারাবাজারবাসীর বিবেকের কাছে একটি প্রশ্ন’ শিরোনামে এক খোলা চিঠি পোস্ট করেছেন ওসি।

 

করোনাভাইরাস সচেতনতায় এলাকার মানুষের অবজ্ঞা ও খামখেয়ালিপনায় বাধ্য হয়ে এমন পোস্ট করেছেন বলে জানিয়েছেন দোয়ারাবাজার থানার ওসি মো. আবুল হাসেম।

 

খোলা চিঠিতে তিনি বলেন- ‘সম্মানিত দোয়ারাবাজারবাসী। আমি জানি আপনারা আমার মতোই খুব একটা ভালো নেই। তবুও দুই-একটা কথা আপনাদেরকে না বললে আমি অন্তত শান্তি পাচ্ছি না। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের তাণ্ডব শুরুর পর থেকে সরকারের নির্দেশনা ও আমাদের সুনামগঞ্জ জেলার মাননীয় পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশ সর্বোপরি নিজের বিবেক ও ঈমানী দায়িত্ব হিসেবে মৃত্যুঝুঁকিকে সঙ্গী করে অত্র থানার সকল অফিসার ও ফোর্সগনকে নিয়ে থানা এলাকার মানুষজনকে সতর্ক এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাসহ অনুরোধ করে যাচ্ছি।

 

গতকাল (২৮ মার্চ) অত্র উপজেলার সম্মানিত বীর মুক্তিযোদ্ধা উপজেলা চেয়ারম্যান ডা. আবদুর রহিম ও ভাইস চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকজন সম্মানিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নিয়ে মৃত্যুঝুঁকি বিষয়ে অত্র উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেছি। মানুষজনকে দুই হাত তুলে করজোড়ে আবেদন জানিয়েছি- আপনারা এই অল্প কয়েকটা দিন ঘরে থাকুন, অযথা রাস্তাঘাট-বাজারে আড্ডা দেবেন না। নিজে বাঁচুন, পরিবারকে বাঁচান। সর্বোপরি এই গরিব দেশটাকে বাঁচান। আমরা বোঝানোর চেষ্টা করেছি সতর্কতা এবং একমাত্র সতর্কতায় এই মহামারি থেকে আমরা পরিত্রাণ পেতে পারি। আমরা যদি সাবধান না হই, তবে সামনে যে কি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে, তা একমাত্র মহান রাব্বুল আলামিনই ভালো জানেন।

 

করোনার তাণ্ডবে পুরো পৃথিবী আজ লণ্ডভণ্ড। আমাদের দেশটা গরিব, বিদেশি সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। অন্য সময় আমাদের বিভিন্ন দুর্যোগে বিদেশি বন্ধু রাষ্ট্রসমূহ সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। কিন্তু এবার আর এই সুযোগ নেই। কারণ তারা নিজেরাই করোনা মোকাবেলায় নাস্তানাবুদ, হিমশিম খাচ্ছে। আমরা মানুষজনকে বলেছি নিজের ভালো-মন্দ বোঝার চেষ্টা করুন। করোনা কাউকে করুণা করে না। আমি মনে করি আমাদের এই চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। আমরা অনবরত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আজকের খবর হলো- বাজারের দোকানদাররাসহ কেউই কথা শুনছেন না, স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। কারোরই বোধোদয় হয়নি। অনেকটা আগের মতোই অবস্থা। করোনাভাইরাসকে নিয়ে অনেকে ঠাট্টা-মশকরা করছেন। আমাদের সকল চেষ্টা, করজোড়ে মিনতি সবকিছুই ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। আমাদেরকে জনগণের সঙ্গে মানবিক আচরণ করার জন্য অনেকে পরামর্শ দিচ্ছেন। মানবিক আচরণ করছিও বটে। এই জীবনে কখনওই অমানবিক হইনি। আর কত মানবিক হলে মানুষজন কথা শুনবে ভেবে পাচ্ছি না। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সকলকে হেফাজত করুন।’