সিলেটে বাসাভাড়া মওকুফের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক


এপ্রিল ০৩, ২০২০
০৬:২৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ০৩, ২০২০
০৬:২৮ পূর্বাহ্ন



সিলেটে বাসাভাড়া মওকুফের দাবি

লাল মিয়া। বয়স ঊনপঞ্চাশ। পেশায় রিকশাচালক। নগরের বালুচর এলাকার একটি কলোনীতে স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। বাসা ভাড়া সাড়ে ৫ হাজার টাকা। গত এক সপ্তাহে তাঁর আয় মাত্র ৩৫০ টাকা। এ টাকায় কোনো রকমে অতিকষ্টে চাল ও ডাল কিনেছেন। খাওয়ার খরচ আপাতত মিটলেও তিনি এখন চিন্তায় রয়েছেন, বাসাভাড়ার টাকা কোথা থেকে দেবেন?

বাসাভাড়ার টাকা কোনোভাবেই লাল মিয়া করোনা-পরিস্থতি থাকাকালের মধ্যে জোগাড় করতে পারবেন না, সেটা বুঝে গিয়েছেন। অনেকটা অসহায়ের মতোই তিনি জানান, করোনাভাইরাসের কারণে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী মানুষজন রাস্তায় বেরোচ্ছেন না। ফলে, পেটের দায়ে তিনি রিকশা নিয়ে শহরে বেরোলেও রুজি-রোজগার মোটেই করতে পারেন না। এ অবস্থায় যদি বাসার মালিক দয়াবশত হয়ে চলতি মাসের ভাড়া মওকুফ করে দেন, তাহলে তিনি আপাতত রক্ষা পাবেন বলে মন্তব্য করেছেন। আর যদি তা না হয়, তাহলে তাঁকে ধারদেনা করে চলতি মাসের বাসাভাড়া পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) দিনভর নগরের বিভিন্ন এলাকার নানা শ্রেণি-পেশার ১৬ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের অভিন্ন ভাষ্য, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এরই মধ্যে বাসার মালিকদের চলতি মাসের ভাড়া না নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। কেউ কেউ এতে সাড়াও দিয়েছেন। আবার এ অনুরোধের বেশ আগে নগরের কিছু দয়াশীল মালিক নিজ উদ্যোগেই ভাড়াটিয়াদের বাসা ভাড়া আপাতত দিতে হবে না বলেও জানিয়েছেন। মানবিক দিক বিবেচনা করে এটি যদি সকল বাসার মালিক বাস্তবায়ন করেন, তাহলে অনেকেই বিশেষত নিম্ন আয়ের মানুষের দারুণ উপকার হবে।

চৌকিদেখি এলাকার একজন বাসার মালিক জানিয়েছেন, তাঁর বাসায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৮টি মধ্যবিত্ত পরিবার বসবাস করছেন। গত মার্চ মাসের ভাড়া তিনি মওকুফ করে দেবেন বলে ভাবছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাঠানটুলা এলাকার এক বাসার মালিক বলেন, ‘আমার নিজ বাসার পাশাপাশি একটি ছোট কলোনী রয়েছে। বাসায় যাঁরা থাকেন, তাঁরা সকলেই সরকারি চাকুরিজীবী। অন্যদিকে কলোনীতে নিম্ন আয়ের মানুষজন থাকেন। ভাবছি, বাসার ভাড়াটিয়াদের মার্চ মাসের ভাড়া আদায় করব, তবে কলোনীতে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের ভাড়া নেব না।’

দিনমজুর, শ্রমজীবী, পরিচারিকা, রিকশা ও ভ্যানচালকসহ নিম্ন আয়ের ৮ জন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট নগরের ২৭টি ওয়ার্ডেই তাঁদের মতো নি¤œ আয়ের অনেক মানুষ রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে তাঁরা ঠিকমতো খাবারই সংগ্রহ করতে পারছেন না। এর মধ্যে আবার মাস শুরু হওয়ায় বাসাভাড়া বাড়তি চাপ শুরু হয়ে গিয়েছে। কোথা থেকে যে তাঁরা ভাড়া দেবেন, সেটি কল্পনাও করে পাচ্ছেন না। সরকার যদি নি¤œ আয়ের মানুষদের বাসাভাড়ার বিষয়টি সমাধান করতে পারে, তাহলে দারুণ হবে।

নগরের সচেতন মানুষদের অভিমত, বিশ^জুড়েই করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে এ ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে এরই মধ্যে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে প্রধানটি হচ্ছে, হোম কোয়ারেন্টিনে থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। মানুষজন ঘরের বাইরে না বেরোনোয় বিশেষত নি¤œআয়ের মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন। এ ছাড়া ছোটখাটো কাপড়, জুতাসহ বিভিন্ন সামগ্রীর ব্যবসায়ীদের দোকানও বন্ধ রয়েছে। ফলে তাঁরা আয়বঞ্চিত থাকছেন। এঁদের অধিকাংশই ভাড়াবাড়িতে থাকেন। তাই আয়হীন অবস্থায় কিভাবে তাঁরা বাসাভাড়ার টাকা দেবেন, সেটা অবশ্যই সরকারের সংশ্লিষ্টদের ভাবা উচিত।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট মিররকে বলেন, ‘বাসার মালিকদের বর্তমান পরিস্থিতিটি মানবিকভাবে দেখার অনুরোধ জানিয়েছি। বাসাভাড়া মওকুফের জন্য আমি এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের এক বার্তায় অনুরোধ জানিয়েছি। মানবিক কারণে অনেকেই এ অনুরোধে সাড়া দেবেন বলে আমি বিশ^াস রাখতে চাই। নিজেদের অবস্থান থেকে মানবতার সেবার এখনই সর্বোত্তম সময়। শীঘ্রই আমরা এ দুর্যোগ কাটিয়ে উঠব। তবে এর জন্য সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনো অবস্থাতেই যেন কেউ বাসার বাইরে না বের হন, সে আহ্বানও আমরা নগরবাসীকে জানাচ্ছি।’