করোনা এবং একজন স্বাস্থ্যকর্মীর গল্প

সিলেট মিরর ডেস্ক


এপ্রিল ০৪, ২০২০
০১:৪২ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ০৪, ২০২০
০১:৫৭ পূর্বাহ্ন



করোনা এবং একজন স্বাস্থ্যকর্মীর গল্প

ডেভিড টিলার একজন যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেল্থ কেয়ারের একজন কর্মী। রাতভর কাজ করেছেন। অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ছুটেছেন যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। নির্ঘুম চোখে ভোরেই বাজার-সদাই করতে চলে যান সুপার মার্কেটে। অনন্য ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে ফেরেন ডেভিড। আর তাতে আরও বেশি প্রাণিত হয়েছেন। ফেসবুকে দিয়েছেন আবেগঘন এক স্ট্যাটাস। ডেভিডের ভালোবাসার গল্প নিয়ে একটি ফিচার প্রতিবেদন করেছে বিবিসি। ডেভিডের সেই আবেগঘন স্ট্যাটাসটি সিলেট মিরর পাঠেকদের জন্য তুলে দেওয়া হলো।   

আমি ডেভিড।

যুক্তরাজ্যের একজন এম্ব্যুলেন্স কর্মী। রাতভর কাজ করার পর ক্লান্ত শরীর নিয়ে সকাল বেলায় যখন দোকানে গিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম সবার সঙ্গে, আমি চমকে উঠলাম!

অবাক হয়ে দেখলাম, এই ভোর বেলায়, আমার আগে এসে দাঁড়ানো অপেক্ষমান জনগনের সুদীর্ঘ লাইনের প্রতিটি ব্যাক্তি একে একে আমাকে সামনে এগিয়ে দিলেন। অচিরেই আমি পৌঁছে গেলাম বাজারের দোরগোড়ায়।

কৃতজ্ঞতায় নুয়ে পড়ছিলাম আমি তখন। সারা রাত একটি মুর্হূতের ফুরসতও পাই নি। এম্বুলেন্স নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছি শহরের এ মাথা থেকে ও মাথা। দীর্ঘ কালো রাতে কতো হাহাকারের সাক্ষী আমাকে শত শত লোক যেভাবে তাদের ঠান্ডার মাঝে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকা থেকে বাঁচালেন।

সারির সামনে যখন পৌঁছুলাম, পেছনের সেই শত শত আমজনতা এমন একটা উল্লসিত হাততালির ছররা ছুটালো, যেন তারা মাউন্ট এভারেস্ট তখনই জয় করে ফেলেছে। কান্নায় ঝাপসা চোখে তাদের দেখতেও পাচ্ছি না, শুধু শুনতে পাচ্ছিলাম, তাদের সমস্বর কণ্ঠে বলা 'ধন্যবাদ তোমাদের'।

যা হোক, বাজার সদাই শেষ করে যখন পাওনা মেটাতে যাবো, কোথা থেকে উড়ে এলো এক বুড়ি। কিছু বুঝে উঠবার আগেই, হাতের 'কন্টাক্ট-লেস' কার্ডটা ছুঁয়ে দিলো টাকা নেবার মেশিনে। আমি আর মূল্য পরিশোধ করতেই পালাম না তখন। যখন জোর করে বললাম, 'তোমাকে ধন্যবাদ, কিন্তু তোমার এই দান আমি কোনভাবেই নিতে পারবো না।'

বুড়ি তেরচা মধুর হাসি মেরে দিয়ে চলে যাবার সময় বলে গেলো, 'পারলে ঠেকাও'।

বুড়ির চেহারাটাও ভালো মতো দেখতে পেলাম না।

[ আগামী কালও আমার রাতের শিফট, কিন্তু একটুও ক্লান্ত হবো না, জানেন? ]

ভাবানুবাদঃ আরিফুর রহমান 

বিএ-১৭