করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জগন্নাথপুরের তরুণরা

আলী আহমদ, জগন্নাথপুর


এপ্রিল ০৬, ২০২০
১১:২৪ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ০৬, ২০২০
১১:২৪ অপরাহ্ন



করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জগন্নাথপুরের তরুণরা

রাসেল বক্স সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার পাটলী ইউনিয়নের প্রভাকরপুর গ্রামের বাসিন্দা। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর তিনি স্বেচ্ছায় গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানোর কাজ শুরু করেন। গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি এলাকার তরুণদের নিয়ে আশপাশের গ্রামে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন। শুধু জীবানুনাশক স্প্রে নয়, রাস্তাঘাটের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের পাশাপাশি মাস্ক ও জনসচেতনামূলক প্রচারপত্র মানুষের মধ্যে তুলে দিচ্ছেন। কাজ করছেন সকাল, দুপুর, বিকেল গড়িয়ে রাত পর্যন্ত।

শুধু রাসেল বক্স নন, উপজেলার ৩১৩ জন তরুণ স্বেচ্ছাসেবক করোনাভাইরাস মোকাবিলায় এখন এ রকম নানা সচেতনতামূলক কাজ করছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে শুরু করলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতিমূলক নানা কাজ শুরু করা হয়। গত ২২ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে ইচ্ছুক তরুণদের নাম, ঠিকানা ও মুঠোফোন নম্বর আহ্বান করে একটি পোস্ট দেন। এতে সাড়া দিয়ে উপজেলার ৩১৩ জন তরুণ কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাদের মধ্যে আছেন জগন্নাথপুর পৌরসভার ৫০ জন তরুণ, কলকলিয়া ইউনিয়নে ৪০ জন, পাটলিতে ২৭ জন, মীরপুর ইউনিয়নে ২০ জন, চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নে ৩৭ জন, রানীগঞ্জ ইউনিয়নে ৫৩ জন, সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নে ২০ জন, আশারকান্দি ইউনিয়নে ২৪ জন ও পাইলগাঁও ইউনিয়নে ৪২ জন।

তাদের অনেকে এলাকায় স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজেদের অর্থ ব্যয় করে এবং স্বেচ্ছাশ্রমে প্রতিদিন পাড়া-মহল্লা, হাটবাজার, স্কুল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বাসা-বাড়ির আঙিনায় জীবাণুনাশক স্প্রে করছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গ্রামে গ্রামে প্রচারের কাজ করছেন। বিতরণ করছেন মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস ও সাবান। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হতে অনুরোধ করছেন মানুষজনকে। এছাড়া করোনার সচেতনতায় জগন্নাথপুরের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও কাজ করে যাচ্ছেন। এসব স্বেচ্ছাসেবীদের কার্যক্রম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিনিয়ত ভাইরাল হচ্ছে।

পৌরশহরের জগন্নাথপুর বাসুদেববাড়ীর বাসিন্দা তরুণ স্বেচ্ছাসেবী ময়ূক ভট্টাচার্য বলেন, আমরা কয়েকজন তরুণ মিলে এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করেছি। পাশাপাশি পাড়ার পয়েন্টে পয়েন্টে ব্যবস্থা করা হয়েছে হাত ধোয়ার। আমাদের পাড়ায় পরিচিত কিংবা অপরিচিত কেউ ঢুকতে হলে সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া বাধ্যতামূলক। 

মুক্ত সমাজ কল্যাণ সংস্থার সৈয়দ জিতু জানান, তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে শহরের প্রধান প্রাণকেন্দ্র পৌর পয়েন্ট এলাকায় জনসাধারণের সুবিধার্থে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস বিতরণ করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে জনসচেতনামূলক প্রচারের কাজ চলছে।

পাটলী ইউনিয়নের প্রভাকরপুর গ্রামের যুবক রাসেল বক্স জানান, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমন এড়াতে নিজের বিবেকের তাড়নায় উদ্যোগী হয়ে কাজ শুরু করি। আমাদের ইউএনও মহোদয়ের আন্তরিকতায় বিভিন্ন গ্রামে করোনার ভয়াবহতা বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছি। জীবানুনাশক স্প্রে ছিটানো হচ্ছে নিয়মিত। বাজার থেকে কাপড় কিনে এনে ছোটবোনের সহযোগিতায় হাতে তৈরি মাস্ক বিতরণ করছি।

সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নের একদল তরুণ নিজেরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে তা বিতরণ করেছেন। কলকলিয়া ইউনিয়নের নাদামপুর, মজিদপুর গ্রামের তরুণরা মিলে গ্রামের মসজিদ ও সড়কের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করেছেন। ছিটিয়েছেন জীবানুনাশক ব্লিচিং পাউডার।

রানীগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ জানান, রানীগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত স্বেচ্ছাসেবক দল ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের ইউনিয়নের হিলালপুর, মেঘারকান্দি ও হরনাকান্দি গ্রামে গিয়ে টিসিবির নিত্যপণ্য মানুষের কাছে ন্যায্য মূল্যে পৌঁছে দিচ্ছেন। 

মেঘারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা রাসেন্দ্র দাস বলেন, স্বেচ্ছাসেবকদের এমন উদ্যাগে আমরা উপকৃত হচ্ছি। গ্রামের বাজার থেকে যে পেঁয়াজ ১৫০ টাকা কেজিতে কিনতে হতো, ন্যায্য দামে তা ৩৫ টাকা কেজিতে ঘরে বসে পাওয়ায় আনন্দ লাগছে।

জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বিজন কুমার দেব বলেন, করোনাভাইরাস রোধে জগন্নাথপুর উপজেলার স্বেচ্ছাসেবকদের কাজ প্রশংসার দাবি রাখে। তারা প্রতিদিন সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছে।

জগন্নাথপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহ্ফুজুল আলম মাসুম বলেন, তরুণ স্বেচ্ছাসেবীরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাজে সহযোগিতা করছে। তাদের কাজের স্পৃহা দেখে আমি মুগ্ধ। তারা নিজ উদ্যোগে এসব কাজ করছে। মানুষের জন্য এই মুহূর্তে ঘরে থাকাটা সবচেয়ে নিরাপদ।