করোনার প্রভাব : শ্রমিক সংকটে দিশেহারা জগন্নাথপুরের কৃষকরা

আলী আহমদ, জগন্নাথপুর


এপ্রিল ১০, ২০২০
১১:২১ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ১০, ২০২০
১১:২১ অপরাহ্ন



করোনার প্রভাব : শ্রমিক সংকটে দিশেহারা জগন্নাথপুরের কৃষকরা

করোনাভাইরাসের কারণে পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় বোরো ধান কাটার শ্রমিক সংকট নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

কৃষকরা জানান, জগন্নাথপুর উপজেলার মানুষ একমাত্র বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিবছর বোরো মৌসুমে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কৃষি শ্রমিকরা জগন্নাথপুরে এসে ধান কেটে কৃষকদের গোলা পরিপূর্ণ করেন। ধান কাটা শেষ হলে বাড়ি ফেরার সময় নিজেরা ধান ভর্তি ট্রাক নিয়ে যান। এবার করোনাভাইরাসের কারণে সব ধরণের পরিবহন বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা আসতে পারছেন না বলে কৃষকদের জানিয়ে দিয়েছেন। ফলে ধান কাটার শ্রমিক সংকটে দিশেহারা কৃষক। 

জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওরপাড়ের চিলাউড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল মন্নান বলেন, প্রতিবছর সিরাজগঞ্জ থেকে ২০ জনের একদল শ্রমিক ধান কাটার জন্য আমার বাড়িতে আসেন। এবারও আসার কথা থাকলেও ধান কাটা শ্রমিকদেরর সর্দার জানিয়ে দিয়েছেন তারা করোনাভাইরাসের কারণে আসতে পারবেন না। আমি এবার তিন হাল ১২ কেদারের মধ্যে এক হাল জমিতে বোরো আবাদ করেছি। এক সপ্তাহের মধ্যে বোরো ধান কাটা শুরু হবে।

উপজেলার নাদামপুর গ্রামের বাসিন্দা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাজ্জাদ মিয়া বলেন, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা থেকে ২৫ জন ধান কাটার শ্রমিক আমার বাড়িতে আসার কথা থাকলেও যান চলাচল বন্ধ থাকায় তারা আসতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। কৃষকদের কথা চিন্তা করে শ্রমিকদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা দরকার।

নলুয়া হাওরপাড়ের কৃষক নেতা সিদ্দেকুর রহমান জানান, নলুয়া হাওরের মাঠজুড়ে আধাপাকা ধানের সমারোহ। করোনাকালে পরিবহন বন্ধ থাকায় বাইরের শ্রমিকের তীব্র সংকট। হাওরপাড়ের কৃষকদের মধ্যে ফসল নিয়ে এখন শঙ্কা বিরাজ করছে।

চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরশ মিয়া বলেন, প্রতিদিন কৃষকরা ধান কাটার শ্রমিক আনার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আমরা বিষয়টি কৃষি কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের জগন্নাথপুর উপজেলা শাখার আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, জগন্নাথপুরের কৃষকরা বোরো ধানের ওপর নির্ভরশীল।  অকাল বন্যা কিংবা প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে ধান পাকার সঙ্গে সঙ্গে তা কাটার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য কৃষি শ্রমিকদের আসার পদক্ষেপ নিতে হবে। 

জগন্নাথপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার বলেন, জগন্নাথপুর উপজেলায় এবার ২০ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা শুরু হবে। করোনাভাইরাসের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধান কাটার শ্রমিক আসা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে করে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। আমরা কৃষকদের কাছ থেকে ধান কাটার শ্রমিকদের তালিকা সংগ্রহ করে তাদেরকে আসার ব্যবস্থা করে দিতে কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের লিখিতভাবে জানিয়েছি। আশা করছি কৃষি শ্রমিক আসার একটা ব্যবস্থা হবে।