ভয় ও আতঙ্কের মাঝে হাওরে ধান কাটা শুরু

মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী, দোয়ারাবাজার


এপ্রিল ১১, ২০২০
১২:৪৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ১১, ২০২০
১২:৪৬ পূর্বাহ্ন



ভয় ও আতঙ্কের মাঝে হাওরে ধান কাটা শুরু
শ্রমিক সংকটে দিশেহারা কৃষকরা

দোয়ারাবাজার উপজেলার নাইন্দার হাওরে ধান কাটছেন স্থানীয় শ্রমিকরা। ছবিটি শুক্রবার দুপুরে তোলা।

হাওরবাসীর স্বপ্নপূরণ নির্ভর করে হাওরের ফসলের ওপর। এ বছর ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও করোনাএ এই ক্রান্তিকালে শ্রমিক সংকটে দিশেহারা এখন ঘরবন্দি কৃষকরা। তবু বৈশ্বিক এ মহামারীর প্রাদুর্ভাবে ছড়িয়ে পড়া উদ্বেগ, উৎকন্ঠা ও আতঙ্কের মধ্যে ধান পাকতে শুরু করায় হাওরপাড়ের কৃষকরা কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন।

সুনামগঞ্জের প্রায় প্রতিটি ছোট-বড় হাওরের বোরো ফসল পাকতে শুরু করেছে। হাওরের প্রায় ৪০ ভাগ ধান এখন হলুদ রঙ ধারণ করায় অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল শুরু হওয়ার পূর্বেই ধান কাটার উপযোগী হয়ে ওঠেছে। সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে কয়েকটি হাওরে বোরো ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার দেখার হাওর, কানলার হাওর ও নাইন্দার হাওরে ধান কেটে হাওরেই কৃষকরা চিরায়ত প্রথায় গরু দিয়ে মাড়াই করে ঘরে ধান তুলতে শুরু করেছেন।

বিভিন্ন হাওরের ধান কাটার উপযোগী হলেও মরণব্যাধি করোনার প্রাদুর্ভাবে শ্রমিক সংকটে অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। প্রতিবছর এপ্রিলের শুরুতে হাওরপাড়ে ধান কাটার মৌসুমে নবান্নের উৎসব দেখা গেলেও এবার করোনা কৃষকদের সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জ সদর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, ছাতক, দিরাই ও শাল্লা উপজেলার ছোট-বড় ২৬৫টি হাওরে ২ লাখ ১৯ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। এসব এলাকায় চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ লাখ টন। এখন পর্যন্ত ফসলের যা অবস্থা, তাতে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন স্থানীয় কৃষকরা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

তবে করোনাভাইরাসের সময়ে স্বাস্থ্য বিধি সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনার পর সব শ্রেণি-পেশার মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়ায় ধান কাটার শ্রমিক সংকটে কৃষকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। সময়মতো সোনালি ফসল কাটতে না পারলে বৃষ্টির কারণে ধান মাড়াই, শুকানো সবকিছুই বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।

দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের পলিরচর গ্রামের কৃষক আবদুল গনি বলেন, করোনাভাইরাসের ভয়ে মানুষ এখন ঘরবন্দি অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। স্থবির হয়ে পড়েছে চারদিক। অন্যান্য বছরের তুলনায় আমাদের দেখার হাওরে এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু ধান কাটার কোনো শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। মহামারী থেকে বেঁচে থাকলে এবং সময়মতো ধান কেটে ঘরে তুলতে পারলে হাওরপাড়ের কৃষকরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন।

একই উপজেলার কৃষক আবদুল জলিল বলেন, মহামারীর বিরুদ্ধে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে ঘরবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে মানুষ। হাওরের সোনালি ফসল এখন কাটার উপযোগী হলেও করোনার প্রাদুর্ভাবে ঘরবন্দি থাকায় ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। অতিবৃষ্টি, ঝড়-তুফান এবং পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট অকাল বন্যা শুরু হওয়ার পূর্বেই নাইন্দার হাওরে ধান কাটতে শুরু করেছি।

ওই উপজেলার তেগাঙ্গা গ্রামের কৃষক বিল্লাল হোসেন বলেন, নাইন্দার হাওরে এবার প্রায় সাড়ে ১০ একর জমিতে বোরো চাষ করেছি। ধান কাটার এখন ভর মৌসুম। এই হাওরের অন্তত ৫০ ভাগ ধান পেকে গেছে। কিন্তু শ্রমিক সংকটে এখন ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না।   

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আবদুল আহাদ বলেন, সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাওরে ধান কাটার সময় হয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে বিভিন্ন উপজেলার ইউএনও ও জনপ্রতিনিধিদের স্থানীয়ভাবে ধান কাটার শ্রমিক সংগ্রহ করে সময়মতো ধান কাটা শুরু করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।