যাদুকাটায় ত্রাণের জন্য আর্তনাদ

আবির হাসান-মানিক, তাহিরপুর


এপ্রিল ১৩, ২০২০
১০:২৬ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ১৩, ২০২০
১০:২৬ অপরাহ্ন



যাদুকাটায় ত্রাণের জন্য আর্তনাদ

করোনার প্রভাবে বাবা-মা কর্মহীন হয়ে পড়ায় বাধ্য হয়ে আয়ের সন্ধানে নৌকা নিয়ে যাদুকাটা নদীতে বের হয়েছে একই পরিবারের তিন অবুঝ শিশু।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে দিন কাটাচ্ছেন কর্মহীন হয়ে পড়া সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর পাড়ের শ্রমিকরা। তারা বিপাকে পড়েছেন আয়ের একমাত্র উপায় বন্ধ হওয়ার কারনে। কর্মহীন হয়ে পড়া এ সমস্ত নিম্ন আয়ের শ্রমিকদের চোখে এখন কেবলই আতঙ্ক আর হতাশা। দু'মুঠো খাবারের সন্ধানে চারপাশে ছুটোছুটি করে শূন্য হাতে ভগ্ন হৃদয় নিয়ে পরিশ্রান্ত দেহটা যেন আর সামনে চলতে চায় না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কর্মহীন হয়ে পড়া এক শ্রমিকের ছোট ছোট তিন ছেলে-মেয়ে রোজগারের সন্ধানে বের হয়েছে যাদুকাটা নদীতে। কৌতুহল মেটাতে জিজ্ঞেস করলাম, মহামারি করোনাভাইরাসের নাম শুনেছ? মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ। বর্তমান এ পরিস্থিতিতে ভয় লাগে না? তিনজনই মৃদু হেসে বলে উঠল না, না, ভয় করে না। এ রকম পরিস্থিতিতে এতো অল্প বয়সে নদীতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেন বের হয়েছ জানতে চাইলে তারা বলে, মা-বাবা কাজ করতে পারে না, তাই আমরা তিন ভাই-বোন মিলে নদীতে লোকজন পারাপারের জন্য নৌকা নিয়ে বের হয়েছি।

যাদুকাটা নদীকে কেন্দ্র করে কয়েক হাজার শ্রমিক করোনা পরিস্থিতিতে বেকার কর্মহীন হয়ে বর্তমানে খাদ্য সংকটে দিনাতিপাত করছেন। সরকারি, বেসরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে বিতরণ করা খাদ্যসামগ্রীও জুটছে না তাদের কপালে। ফলে এ সমস্ত কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

এমন হাজারও শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ায় তাদের ছেলে-মেয়েরা বাধ্য হয়ে উপার্জনের নানা উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু দিন শেষে শুধুই হতাশা আর শূন্য হাতে বাড়ি ফেরা।

যাদুকাটা নদীতে কাজ করা বাদাঘাট (উত্তর) ইউনিয়নের গড়কাঠি গ্রামের জাকির মিয়া বলেন, নদীতে বর্তমান পরিস্থিতিতে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা শ্রমিকরা পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। হাতে টাকা-পয়সা যা ছিল, এখন তাও ফুরিয়ে গেছে। সরকারি কোনো সহযোগিতাও আমরা পাচ্ছি না। দুই চোখে এখন শুধু অন্ধকার দেখতে পাচ্ছি।

যাদুকাটা বালু-পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুস শাহীদ বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে যাদুকাটা নদীতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন এমন হাজারও শ্রমিক আজ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে যেসব খাদ্যসামগ্রী সহায়তা হিসেবে দেওয়া হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এ অঞ্চলের খেটে-খাওয়া এসব শ্রমিকরা খাদ্য সংকটে ভুগছে। আমার সমিতির অধীনে প্রায় ২ হাজারের মতো শ্রমিক রয়েছেন, অথচ খাদ্যসামগ্রী সহায়তার জন্য ১৫০ জনের নাম নেওয়া হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদের শ্রমিকদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। এছাড়া আজ পর্যন্ত চেয়ারম্যান, মেম্বার কেউই আমাদের শ্রমিকদের খোঁজ নেয়নি।

তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জি বলেন, শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এ সমস্ত কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকদের নিয়ে তালিকা তৈরির কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। স্থানীয় বালু-পাথর সমিতি, ইউপি চেয়ারম্যান ও  সদস্যদের বলা হয়েছে দ্রুত তালিকা তৈরি করে উপজেলা প্রশাসনের নিকট জমা দিতে।