শ্রমিক সংকটে কৃষকদের পাশে জগন্নাথপুরের শিক্ষার্থীরা

আলী আহমদ, জগন্নাথপুর


এপ্রিল ১৬, ২০২০
১২:১১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ১৬, ২০২০
১২:১১ পূর্বাহ্ন



শ্রমিক সংকটে কৃষকদের পাশে জগন্নাথপুরের শিক্ষার্থীরা

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে এবার কৃষি শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের হাওরগুলোতে। এ অবস্থায় কৃষককে সহায়তা করতে মাঠে নেমেছে গ্রামের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও ধান কাটতে জমিতে নেমেছেন।

আজ বুধবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে জগন্নাথপুর উপজেলার দ্বিতীয় বৃহৎ মইয়ার হাওরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ফসলে ভরা মাঠে বাতাসে দুলছে পাকা ও আধাপাকা ধান। সোনালি ফসলের মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর বোরো ধান কাটার মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষি শ্রমিকরা জগন্নাথপুরে আসতেন। করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর এখনও কৃষি শ্রমিক না আসায় অনেক কৃষক জমির পাকা ধান নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন।

মইয়ার হাওরের কৃষক যাত্রাপাশা এলাকার বাসিন্দা নিলেন্দ্র গোপ জানান, আমি এবার ১৮ কেদার (৩০ শতাংশে এক কেদার) জমিতে বোরো আবাদ করেছি। এর মধ্যে ছয় কেদার জমির ব্রি-২৮ ধান জমিতে পেকে রয়েছে। প্রতিবছর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থেকে আমার ১৫ জন শ্রমিক আসত। এবার করোনাভাইরাসের কারণে শ্রমিকরা আসতে পারবে না বলে জানিয়েছে। তাই পাকা ধান নিয়ে বেকায়দায় পড়েছি। এ অবস্থায় গ্রামের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ১৫ জন শিক্ষার্থী স্বেচ্ছায় আমার জমির ধান কেটে দিতে রাজি হয়। তাদেরকে নিয়ে আমি আজ দুই কেদার জমির ধান কেটেছি।

ধান কাটার সময় কথা হয় জগন্নাথপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী দ্রীজয় গোপ এর সঙ্গে। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে কলেজ বন্ধ থাকায় আমরা এখন অবসর সময় কাটাচ্ছি। তাই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে ধান কাটছি। আমি ১৫ জনের একটি দল নিয়ে ধান কাটার কাজ করছি। সবাই বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। পারিশ্রমিক হিসেবে কৃষক খুশি হয়ে যা দেবেন, তাতেই আমরা সন্তুষ্ট। কোনো কৃষক বেকায়দায় পড়ে টাকা না দিলেও আমরা তার ধান কেটে দেব।

হাওরে কথা হয় আব্দুস ছোবহান উচ্চবিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রুবেল গোপের সঙ্গে। রুবেল জানায়, তার সঙ্গে ৮ জনের একটি দলে শিক্ষার্থী ও কয়েকজন ব্যবসায়ী রয়েছেন। তারা কৃষক রঞ্জু গোপের ধান কাটছেন।

রঞ্জু গোপ জানান, তিনি ৪০ কেদার জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। শ্রমিক না আসায় দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী পেয়ে তিন কেদার জমির পাকা ধান কেটেছেন।

যাত্রাপাশা গ্রামের যুবক বকুল গোপ বলেন, আমাদের যাত্রাপাশা গ্রামের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা দলবদ্ধ হয়ে কোন কৃষকের জমির ধান পেকেছে এই খোঁজ-খবর নিয়ে ওই কৃষকের জমির ধান কাটছে। করোনা পরিস্থিতিতে এলাকায় অনেক মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। এসব বেকার লোকজন যদি হাওরের ধান কাটার কাজ শুরু করেন, তাহলেও ধান কাটার শ্রমিক সংকট কেটে যাবে।

জগন্নাথপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার বলেন, জগন্নাথপুরে ২০ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ধান কাটার উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

 

এএ/আরআর