বড়লেখায় ভালো ফলনেও শঙ্কিত কৃষক

এ জে লাভলু, বড়লেখা


এপ্রিল ১৭, ২০২০
১১:৪২ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ১৭, ২০২০
১১:৪২ অপরাহ্ন



বড়লেখায় ভালো ফলনেও শঙ্কিত কৃষক
উৎকণ্ঠা নিয়ে ধান কাটা শুরু

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে।  বৈরি আবহাওয়ার আশঙ্কায় পাকা ধান আগেভাগেই কাটা শুরু হয়ে গেছে। আগাম বন্যার সতর্কবার্তায় পাকা ধানগুলো যত দ্রুত সম্ভব কাটার জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও কৃষকদের মাঝে প্রচার চালানো হচ্ছে। এ বছর ধানের ফলন ভালো হওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার আশা করছে কৃষি বিভাগ।

বড়লেখা উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এবার উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন মিলিয়ে বোরো আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৫শ ৭৫ হেক্টর। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ৪শ ৬৮ হেক্টর। কৃষি বিভাগের তৎপরতায় ১০৭ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ধান আবাদ হয়েছে হাকালুকি হাওরপাড়ের তিন ইউনিয়ন তালিমপুর, সুজানগর ও বর্ণিতে। অন্য ৭টি ইউনিয়নেও কম-বেশি ধান আবাদ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় এবার ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ধারা হয়েছে ২৬ হাজার ২শ ১৫ মেট্রিক টন।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, বড়লেখায় কৃষক পর্যায়ে নিজস্ব লোকজন দিয়েই ধান কাটানো হয়। তাছাড়া এবার করোনাভাইরাসে অনেক দিনমজুর কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অন্য কাজ না থাকায় তাদের ধান কাটার কাজে লাগানো যাবে। শ্রমিক সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। শুধুমাত্র আবহাওয়া ভালো থাকলেই ধান কেটে ঘরে তোলা সম্ভব হবে। আগামী ১৭ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতের মেঘালয় ও আসামের বরাক অববাহিকায় ভারী (১০০ থেকে ২৫০ মিলিলিটার) বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য কৃষি বিভাগ যেখানে ধান পাকছে, সেখানেই দ্রুত কৃষককে ধান কাটতে উৎসাহিত করছে। ইতোমধ্যে কৃষক সমিতিগুলোকে ধান কাটার যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। এলাকাগুলোতে প্রচারপত্র বিলি হচ্ছে। শতকরা ৮০ ভাগ পরিপক্ক হলে ধান সংগ্রহের আহ্বান জানানো হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) পয়লা বৈশাখের বিকেলে ধান কাটতে উৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে কৃষকদের সঙ্গে ধান কাটায় অংশ নেন বড়লেখা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান, ভাইস চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন, নারী ভাইস চেয়ারম্যান রাহেনা বেগম হাছনা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবল সরকার, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার উদ্দিন, কৃষকলীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, হাওলাদার মো. আজিজুল ইসলাম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. উবায়েদ উল্লাহ খান, তালিমপুর ইউপির চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্ত দাস, সাংবাদিক লিটন শরীফ, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পলাশ দত্ত, সুবিনয় চন্দ্র দাস, কৃষক আব্দুল আজিজ, জয়নাল উদ্দিন, সফর উদ্দিন, সেবুল আহমদ, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুমন আহমদ প্রমুখ। বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের হাল্লা-খুটাউড়া সিআইজি (ফসল) কৃষক সমবায় সমিতির আয়োজনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রদর্শনী প্লটে স্বল্প মেয়াদী বোরো নতুন জাতের ব্রি ধান ৮৮ ক্ষেতে এ ধান কাটা হয়।

স্থানীয় কৃষক আব্দুল আজিজ বলেন, কৃষি বিভাগ আমাদের সহায়তা করছে, পরামর্শ দিচ্ছে। পেকে যাওয়া ধান দ্রুত কাটার আহ্বান জানিয়েছে। এবার ফলন ভালো হয়েছে। আবহাওয়ার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আগাম বন্যা হলে হাওরের নিম্নাঞ্চলের ধান ডুবে যেতে পারে। বন্যার আগে ধান কাটতে পারলে আমরা ভালো ধান ঘরে তুলতে পারব বলে আশা করছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবল সরকার বলেন, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ বেশি হয়েছে। বৈরি আবহাওয়ার আশঙ্কায় কৃষকদের পেকে যাওয়া ধানগুলো দ্রুত কাটার আহ্বান জানাচ্ছি। এ জন্য প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে। আগের বছরের চেয়ে এবার বোরো ধানের ফলন তুলনামূলকভাবে ভালো হয়েছে। ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো থাকলে কৃষকরা লাভবান হবেন। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি। এখানে ধান কাটার শ্রমিকদের সংকট হবে না। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে কৃষি শ্রমিকদের ত্রাণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ জন্য অনেকেই ধান কাটায় আগ্রহী হবেন।

 

এজে/আরআর