হাওরের পাকা ফসল তুলতে কৃষকদের পাশে গ্রামবাসী

আলী আহমদ, জগন্নাথপুর


এপ্রিল ২১, ২০২০
১১:৫১ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২১, ২০২০
১১:৫১ অপরাহ্ন



হাওরের পাকা ফসল তুলতে কৃষকদের পাশে গ্রামবাসী

কষ্টার্জিত ফসল হারানোর দুশ্চিন্তায় যখন কৃষক দিশেহারা, তখন কৃষকের পাশে থাকতে হাতে কাস্তে নিয়ে মাঠে নেমেছেন শিক্ষক, ছাত্র, কর্মহীন যুবক ও স্থানীয় ধান কাটার শ্রমিকরা। আজ মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে জগন্নাথপুরের পিংলার হাওরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

জানা যায়, শ্রমিক সংকট এড়াতে উপজেলার রতিয়ারপাড়া বাদশাহ মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক গনেশ চক্রবর্তীর সহায়তার স্থানীয় শ্রমিক, কর্মহীন মানুষ, স্বেচ্ছাশ্রমী স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ ৩৩ জন ধান কাটার শ্রমিক হিসেবে হাওরে কৃষকের পাকা ধান কাটছেন। ওই ৩৩ জনের মধ্যে ২৩ জন আব্দুল বারিক নামের এক দরিদ্র কৃষকের ক্ষেতের ধান কাটেন। অপর ১০ জন কৃষক সৈয়দ মিয়ার জমির ধান কেটেছেন। 

কলেজপড়ুয়া ছাত্র মামুন আহমদ জানান, শ্রমিক সংকটের কারণে পাকা ধান নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষক। তাই আমরা ১১ জন শিক্ষার্থী আমাদের স্যারের সহযোগিতায় কৃষক আব্দুল বারিকের ধান স্বেচ্ছাশ্রমে কেটেছি। হাওরে ফসল ওঠার আগ পর্যন্ত অসহায় কৃষকদের ধান কাটব আমরা।

কৃষক আব্দুল বারিক জানান, শ্রমিকের অভাবে জমির পাকা ধান নিয়ে হতাশায় ভুগছিলাম। হঠাৎ করে সকালে হাওরে শিক্ষক, ছাত্রসহ ৩৩ জন এসে জানালেন তাঁরা ক্ষেতের পাকা ধান কাটবেন। পরে ৩৩ জনের মধ্যে শিক্ষক ও ছাত্র মিলে ২৩ জন আমার তিন কেদার জমির ধান কেটে দিয়েছেন। তাদের সহায়তায় ধান কাটতে পেরে আমি আনন্দিত। আর এ জন্য তারা কোনো পারিশ্রমিক নেননি। 

আরেক কৃষক সৈয়দ মিয়া নিজের জমির পাকা ধান কাটতে পেরে খুশি বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এবার ২৪ কেদার জমিতে বোরো আবাদ করেছি। জমির ধান পেকে গেছে। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে ধান নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলাম। এখন ধান কাটার লোকজন পেয়ে যাওয়ায় সংকট দূর হয়ে গেছে।

তিনি জানান, তার তিন কেদার জমির ধান দুপুর পর্যন্ত কাটা শেষ হয়েছে। তিনি আশা করছেন, আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে দুই/তিনদিনের মধ্যে তার জমির সব ফসল কাটা শেষ হয়ে যাবে।

শিক্ষক গনেশ চক্রবর্তী বলেন, একদিকে করোনার ভয়, অন্যদিকে আগাম বন্যার শঙ্কায় শঙ্কিত কৃষকরা। এ অবস্থায় হাওরে পাকা ধান নিয়ে চিন্তিত তারা। আমাদের ইউএনও ও কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে জগন্নাথপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জগন্নাথপুর এলাকার স্কুল-কলেজের ছাত্রসহ স্থানীয় শ্রমিক ও কর্মহীন ৩৩ জন লোক সংগ্রহ করে মাঠে গিয়ে আমরা কৃষকের ধান কাটতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার শ্রমিক সংকটের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আজ থেকে জগন্নাথপুরের প্রতিটি হাওরে স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের প্রচেষ্টায় শিক্ষক, ছাত্র, ব্যবসায়ী, স্বেচ্ছাসেবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ ধান কাটছেন। আশা করছি এক সপ্তাহের মধ্যে ফসল তোলা সম্ভব হবে। এবার এ উপজেলায় ২০ হাজার ৫শ হেক্টর ফসল চাষাবাদ করা হয়েছে।

জগন্নাথপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজুল আলম মাসুম বলেন, আগাম বন্যার শঙ্কায় দ্রুত পাকা ধান কাটতে হাওরজুড়ে মাইকিং করা হচ্ছে। গতকাল থেকে ছোট-বড় ১৫টি হাওরে কৃষকের পাশে ধান কাটতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ হাওরে নেমেছেন। আমরা প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।

 

এএ/আরআর