দেশে ২৫০ ডাক্তার-নার্স করোনায় আক্রান্ত

সিলেট মিরর ডেস্ক


এপ্রিল ২২, ২০২০
০১:২০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২২, ২০২০
০১:২০ পূর্বাহ্ন



দেশে ২৫০ ডাক্তার-নার্স করোনায় আক্রান্ত
জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের উদ্বেগ

 

দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হবার দেড় মাসের মাথায় এ রোগে মৃতের সংখ্যা ১১০ জনে পৌঁছে গেছে। আর আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার চার শ’।  প্রতিদিন মৃত্যু ও আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ইতোমধ্যে গোটা দেশকে করোনা ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। 

তবে আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে- রোগীদের সেবাদানকারী চিকিৎসক ও সেবাকর্মীরাও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এরইমধ্যে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের  একজন চিকিৎসক করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন।

চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ ডক্টরস ফোরাম (বিডিএফ) এর প্রধান সমন্বয়ক ডা. নিরুপম দাশ জানিয়েছেন, সোমবার (২০ এপ্রিল) রাত পর্যন্ত সারা দেশে ১৭০ জন ডাক্তার ও  ৮০ জন সেবাকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৯৪ জন, প্রাইভেট হাসপাতালে ৩৩ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) আটজন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) আটজন এবং সোহরাওয়ার্দী হসপাতালে পাঁচজন চিকিৎসক  আক্রান্ত হয়েছেন।

সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ১৪৩ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন ঢাকা বিভাগে। রাজধানীর বাইরে নারায়ণগঞ্জে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ জন, কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ২২ জন, ময়মনসিংহে সাতজন এবং গাজীপুরের কালীগঞ্জে ১৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

এ ছাড়া সেবা দিতে গিয়ে ৮০ জন নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের সংস্পর্শ আসায় প্রায় চারশ’র বেশী স্বাস্থ্যকর্মীকে কোয়ারেন্টিনে পাঠাতে হয়েছে।

চিকিৎসকদের এভাবে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে নিম্নমানের পিপিই আর রোগীদের তথ্য লুকানোর প্রবণতাকে দায়ী করছেন চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় আক্রান্ত চিকিৎসকগণ তাদেরকে দেওয়া পিপিই’র মান ও কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

এ প্রসঙ্গে ফাউন্ডেশন অব ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিস- এর মহাসচিব ডাক্তার শেখ আবদুল্লাহ আল মামুন গনমাধ্যমকে বলেন, ভাইরাসবাহী রোগীদের সংস্পর্শে এসে চিকিৎসক ও সেবাকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন এটা যেমন সত্যি তেমনি তাদেরকে আগে থেকেই যথোপযুক্ত সুরক্ষা দেওয়া হয় নি এটাও আজকে প্রমাণিত।

ডাক্তার শেখ আবদুল্লাহ আরো বলেন, যেভাবে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সেবাকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন তাতে স্বাস্থ্য সেবা খাত ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করা অমূলক হবে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, সামনে আরো বহু বহু রোগী আসবে। কিন্তু এখনই যদি এতজন চিকিৎসক আক্রান্ত হন সেটা আমাদের একটা শঙ্কার মধ্যে ফেলেছে যে, স্বাস্থ্য সেবা কিভাবে চলবে। আমার মনে একটা প্রশ্ন আসছে, যে চিকিৎসক আক্রান্ত হচ্ছে, তার দায় কি কারো নেয়া উচিত।

এদিকে, হাসপাতালের চিকিৎসক ও সেবাকর্মীদের সুরক্ষার জন্য এন-৯৫ মাস্ক না পাঠিয়ে যারা সাধারণ ক্লিনিকাল মাস্ক সরবরাহ করেছে তাদের বিচার হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ডাক্তার মো. আবদুল আজিজ।

এদিকে, জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ডা. ফয়জুল হাকিম, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা হারুন অর রশিদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা রওশন আরা, জনস্বাস্থ্য সংগঠক অনুপ কুন্ডু এক যুক্ত বিবৃতিতে স¤প্রতি কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে দুইশতাধিক ডাক্তার-নার্স-টেকনোলজিস্ট আক্রান্ত হবার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

গতকাল গণমাধ্যম পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা বলেন, বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ প্রতিরোধে প্রথম থেকেই সরকার যথাযথ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার না দেয়ার ফলে এবং কঠোর তদারকি না করবার ফলে একে একে এসব ঘটনা ঘটে চলছে। কেন্দ্রীয় ঔষধাগার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এন৯৫ লেখা বক্সে সাধারণ মাস্ক সরবরাহের ঘটনাকে ‘ভুলবশত’ বলে দায়িত্ব এড়াতে পারে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও এর দায়িত্ব এড়াতে পারে না। এ-ই ‘ভুলবশত’ ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হতে হবে। কেননা এর সাথে ব্যাপকভাবে ডাক্তারদের সংক্রমিত হবার সম্পর্ক রয়েছে।

বিবৃতিতে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা ডাক্তার-নার্সদের দুরবস্থার অভিযোগ কথা ব্যক্ত করায় তাদেরকে হুমকি ধামকি না দিয়ে সেইসব অভিযোগ দূর করে তাদেরকে আস্থায় নিয়ে আসার জন্য নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহবান জানানো হয়।

এএন/বিএ-১১