ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে বিশ্ব : জাতিসংঘ

সিলেট মিরর ডেস্ক


এপ্রিল ২২, ২০২০
০৯:০২ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২২, ২০২০
০৯:০২ অপরাহ্ন



ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে বিশ্ব : জাতিসংঘ

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিশ্ব ব্যাপক দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মুখে আছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে বলেছে, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট বিশ্বজুড়ে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ করতে পারে। 

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে পর্যটন থেকে আয় বন্ধ হয়ে যাওয়া, রেমিটেন্সে ধস, ভ্রমণ এবং অন্যান্য কার্যক্রমে নানামাত্রিক নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট অভিঘাত চলতি বছর নতুন করে আরও ১৩ কোটি মানুষকে তীব্র ক্ষুধার্তের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে, বলেছে তারা। বিশ্বের প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি মানুষ এখনি এ তালিকায় বলে আছে বলে জানিয়েছে তারা। সব মিলিয়ে চলতি বছরই বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে সাড়ে ২৬ কোটিতে পৌঁছাতে পারে বলে মঙ্গলবার ডব্লিউএফপি ধারণা দিয়েছে, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। বিবিসি জানায়, বিপর্যয় এড়াতে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ডব্লিউএফপির প্রধান ডেভিড বিসলি। 

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক ভিডিও কনফারেন্সে দেওয়া ভাষণে বিসলি বলেছেন, “বিশ্ব সম্প্রদায়কে বিজ্ঞতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কয়েক মাসের মধ্যেই বাইবেলে বর্ণিত পরিস্থিতির মতো একাধিক দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে পারি আমরা। সত্য হচ্ছে আমাদের হাতে আর সময় নেই।”   

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনলাইনে দেওয়া এক ব্রিফিংয়ে ডব্লিউএফপির প্রধান অর্থনীতিবিদ আরিফ হুসেইন বলেছেন, সুতার উপর ঝুলে থাকা কোটি কোটি মানুষের জন্য কোভিড-১৯ ভয়াবহ বিপর্যয় হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। যদি আমরা তা না করি, তাহলে চড়া মূল্য দিতে হবে, ভয়াবহ মূল্য দিতে হবে বিশ্বকে। অনেকে প্রাণ হারাবে, অসংখ্য মানুষ জীবিকা হারাবে।”

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির গবেষণা, মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণ বিষয়ক এ পরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, দিন আনে দিন খায় এমন মানুষদের সুরক্ষায় শিগগির পদক্ষেপ না নিতে পারলে বিপদ মারাত্মক আকার ধারণ করবে। এ প্রসঙ্গে তিনি কেনিয়ার খাদ্য বিক্রেতাদের উদাহরণ টানেন। বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের চাপে পড়ে তারা যদি তাদের সম্পদ বিক্রি করতে বাধ্য হয়, তাহলে নিজের পায়ে দাঁড়াতে তাদের আরও অনেকগুলো বছর লেগে যেতে পারে। আর কৃষকদের যদি লাঙল বা হালের বলদ বিক্রি করতে হয়, তাহলে খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়াও ব্যাহত হবে, বলেন আরিফ। “এই মানুষগুলোকে নিয়েই আমরা উদ্বিগ্ন, যারা কোভিড-১৯ পরিস্থিতির আগে মোটামুটি ঠিক থাকলেও, এখন আর নেই,” যেসব দেশে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা জালে বরাদ্দ সামান্য কিংবা একেবারেই নেই সেসব দেশে বসবাসরতদের নিয়ে ‘বেশি উদ্বেগের’ কথাও জানান এ অর্থনীতিবিদ।

বিশ্বের কোন কোন অঞ্চলে খাদ্য সহায়তার প্রয়োজনীয়তা বাড়তে পারে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা সে বিষয়ে বিস্তারিত না বললেও আফ্রিকায় সংকট তীব্রতর হতে পরে বলে ধারণা করছেন তারা। ডব্লিউএফপিও জানিয়েছে, চলতি বছর তাদের সাহায্য কর্মসূচিগুলো অব্যাহত রাখতে ১০-১২ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন পড়তে পারে। এ অঙ্ক গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। গতবছর তারা রেকর্ড ৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার তুলতে সক্ষম হয়েছিল বলে জানান আরিফ। সামনের মাসগুলোর সম্ভাব্য চাহিদা মেটাতে এবার আগে থেকে খাদ্য মজুদের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, বলেছেন তিনি।

করোনাভাইরাস মহামারীর আগেই যারা তীব্র ক্ষুধার্তের তালিকায় ছিলেন তাদের বেশিরভাগই সিরিয়ার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত এবং জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর বাসিন্দা। মরুভূমির পঙ্গপাল পূর্ব আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের শস্য ও ফসল নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ায় সেখানকার অসংখ্য মানুষও এখন ডব্লিউএফপির খাদ্য কর্মসূচির উপর নির্ভরশীল।

এনপি-০৬/বিএ-০৪