করোনার ঝুঁকিতে জগন্নাথপুর, মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

আলী আহমদ, জগন্নাথপুর


এপ্রিল ২৫, ২০২০
১১:৪১ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২৫, ২০২০
১১:৪১ অপরাহ্ন



করোনার ঝুঁকিতে জগন্নাথপুর, মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

করোনাভাইরাস সংক্রমণের অন্যতম এলাকা ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার আতঙ্কে এখন সুনামগঞ্জের প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলাবাসী। 

ঢাকা থেকে জগন্নাথপুরে আসা এক তরুণ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আজ শনিবার (২৫ এপ্রিল) ওই তরুণকে তার নিজ বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্যকর্মীরা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) জগন্নাথপুরের ১৮ বছরের এক তরুণকে সিলেটে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, সাম্প্রতিককালে ৫ শতাধিক মানুষ নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে জগন্নাথপুরে এসেছেন। এর মধ্যে শুধু নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন দুই শতাধিক লোক। তারা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে অবাধে ঘোরাফেরা করছেন।

প্রথম করোনা রোগী হিসেবে গত বৃহস্পতিবার জগন্নাথপুরের কলকলিয়া ইউনিয়নের উত্তর নাদামপুর গ্রামে ১৮ বছরের এক তরুণকে শনাক্ত করা হয়। ১৭ এপ্রিল নারায়াণগঞ্জ থেকে ওই তরুণ পরিবারের লোকজনের সঙ্গে এলাকায় ফিরেন। স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের ১৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করে। ২৩ এপ্রিল প্রতিবেদন আসে ওই তরুণ করোনা পজিটিভ। পরে তাকে সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন হাসাতালের আইসোলেশনে ভর্তি করা হয়। ওই ঘটনায় ১৫০টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার জগন্নাথপুর উপজেলা আশারকান্দি ইউনিয়নের পাঠকুড়া গ্রামের আরেক তরুণের করোনা পজিটিভ বলে রির্পোট পাওয়া যায়। এতে ওই তরুণের বাড়িসহ আশপাশের ৮টি বাড়ি লকডাউন করা হয়।

এদিকে গত বুধবার (২২ এপ্রিল) উপজেলার আশারাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের এক গ্রাম পুলিশ করোনার উপসর্গে মারা যান। স্থানীয় প্রশাসন স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করে ১০টি বাড়ি লকডাউন করেছে।

দুই তরুণের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সংবাদে এবং করোনার উপসর্গে একজনের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করলেও অনেকেই সামাজিক দূরত্ব মানছেন না।

জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বিজন কুমার দেব জানান, জগন্নাথপুর উপজেলা নানা কারণে এখন করোনার ঝুঁকিতে রয়েছে। একদিকে আছেন ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত লোকজন, অপরদিকে অন্য জেলা থেকে কৃষি শ্রমিকরা এ উপজেলায় এসেছেন। তারা সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ঝুঁকি বেড়েছে।

জগন্নাথপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার বলেন, জগন্নাথপুর উপজেলায় বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কাটার জন্য কৃষি শ্রমিক হিসেবে এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক এসেছেন। প্রতিদিন বাইরের জেলা থেকে কৃষি শ্রমিকরা আসছেন। আমরা তাদেরকে বিভিন্ন স্কুল ও মাদরাসা ভবনে এবং গৃহস্থের বাংলা ঘরে রাখছি। তবে অনেক কৃষক আমাদেরকে না জানিয়ে শ্রমিক আনায় তাদের বিষয়টি জানা নেই।

জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে আগত আড়াই শতাধিক লোকসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত লোকজন জগন্নাথপুর উপজেলাকে করোনার ঝুঁকিতে ফেলেছে। আমরা দিন-রাত তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে কাজ করছি। 

জগন্নাথপুর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মধু সুদন ধর বলেন, গতকাল পর্যন্ত আমরা করোনা সন্দেহে ৮৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছি। এর মধ্যে দুই তরুণের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। তারা দুইজন ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে এলাকায় এসেছিলেন। 

জগন্নাথপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজুল আলম মাসুম বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা লোকজন আমাদেরকে আতঙ্কে রেখেছেন। আমরা উপজেলাবাসীকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক হওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

 

এএ/আরআর