করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে তাহিরপুর

তাহিরপুর প্রতিনিধি


এপ্রিল ২৬, ২০২০
০৬:৫৯ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২৬, ২০২০
০৭:০০ অপরাহ্ন



করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে তাহিরপুর
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন সহস্রাধিক মানুষ

বৈশ্বিক মহামারী আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে প্রতিদিনই নতুন করে লোকজন আক্রান্ত হচ্ছেন, দীর্ঘ হচ্ছে মৃতের সংখ্যা। বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে লোকজনের অসচেতনতার কারণে ভাইরাসে আক্রান্ত হবার হার বেড়েই যাচ্ছে, বাড়ছে মৃত্যুহারও। সারাদেশে লকডাউন ঘোষিত হয়েছে ঠিক কিন্তু বিশেষতঃ গ্রামীণ পর্যায়ে জনস্রোত ঠেকানো দুরুহ হচ্ছে।

 

গত কয়েকদিনে সিলেটের বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় বিশেষতঃ নারায়ণগঞ্জ ঢাকা থেকে আসা ব্যক্তির মধ্যেই তুলনামূলকভাবে বেশি সংখ্যায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হতে দেখা যাচ্ছে। আশংকার মাত্রাটা এখানেই বাড়িয়ে দিচ্ছে। কারণ তাহিরপুরে ইতোমধ্যে সহস্রাধিব নারী-পুরুষ শিশু নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা গাজীপুর থেকে প্রবেশ করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের হটস্পট (করোনা ঝুকিপূর্ণ অঞ্চল) নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে পর্যন্ত বেশ কিছু লোকজন এসেছে যারা নির্দ্বিধায় সামাজিক দূরত্বের তোয়াক্কা না করে উপজেলার গ্রামগুলোর বিভিন্ন হাটবাজারে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন! অনেকে আবার ক্ষেত খামারে যাচ্ছেন, অবাধে ওঠাবসা করছেন পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশীর সাথে!

ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জের হাওর দুর্গম তাহিরপুর উপজেলার পার্শ্ববর্তী বিশ্বম্ভরপুর জামালগঞ্জ উপজেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। বিশ্বম্ভরপুরে আক্রান্ত জেলা সদর হাসপাতালের ওই চিকিৎসক থাকেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায়। তিনি সেখান থেকেই মোটরসাইকেলে জেলা সদরে যাতায়াত করেন। বিশ্বম্ভরপুরে তিনি প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতেন। অপরদিকে জামালগঞ্জ উপজেলায় পরীক্ষায় ২জন করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। আক্রান্ত হওয়া দুজনের বয়স মাত্র ১২ বছর। ওই দুই মেয়েশিশু তাদের শ্রমিক মায়েদের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে থাকত।

তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানা গেছে, প্রথমদিকে তাহিরপুরে ২২জনের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। যার ফলাফলে সবগুলোই নেগেটিভ এসেছে। পরবর্তীতে গত বৃহস্পতিবার আরও ১৩টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে এবং শনিবার (২৫ এপ্রিল) আরও ৩টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। যার ফলাফল এখনও হাতে এসে পৌঁছায়নি।

তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা গেছে, তাহিরপুরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ গাজীপুরসহ অন্যান্য জেলা থেকে হাজার খানেকেরও বেশি নারী, পুরুষ শিশু প্রবেশ করেছেন। যাদের সবাইকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। কারণ অনেকেই গোপনে এসে আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে এদের মধ্য থেকে পর্যন্ত ৪৮৪ জনকে হোম কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে এবং পর্যন্ত ৮৫ জন ১৪দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থেকে সময়সীমা পার করেছেন। বাকি ৩৯৯ জন এখনও হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।

তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচএফপিও) ডা. মো. ইকবাল হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত যেসব নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে তাতে ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। আরও কয়েকটির ফলাফল এখনও হাতে এসে পৌছায়নি। তাহিরপুরে করোনা ঝুকিপূর্ণ এলাকা থেকে হাজার খানেকেরও বেশি লোকজন এসেছে। যাদের সবাইকে নানা কারণে এখনও পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভবপর হয়নি। তাই আমি বলছি না যে, তাহিরপুর উপজেলা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকিমুক্ত আছে। বরং সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও অবনতি হবার আশংকাই রয়ে যাচ্ছে অধিকমাত্রায়।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জি প্রতিবেদককে বলেন, পার্শ্ববর্তী দুই উপজেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা তাহিরপুরের জন্য সংকেতবার্তা বলে মনে করছি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তাহিরপুরে আসা অনেককে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। অনেকগুলো পরিবার লকডাউন করা হয়েছে।

এনপি-০৮