করোনা আক্রান্তদের রক্ত দিচ্ছেন তাবলীগ জামাত কর্মীরা

সিলেট মিরর ডেস্ক


এপ্রিল ২৯, ২০২০
০৫:১৩ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২৯, ২০২০
০৫:১৩ অপরাহ্ন



করোনা আক্রান্তদের রক্ত দিচ্ছেন তাবলীগ জামাত কর্মীরা

তাবলীগ জামাত থেকে করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) সংক্রমণ ছড়ানো নিয়ে ভারতে সাম্প্রদায়িক বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। এবার দিল্লিতে তাবলীগ জামাতে যোগ দেওয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এরকম কয়েকজন সুস্থ হয়ে ওঠার পর এগিয়ে এসেছেন নিজের রক্ত দান করতে। সেই রক্ত থেকে প্লাজমা নিষ্কাশন করে তা দেওয়া হবে করোনা সংক্রমিত রোগীদের শরীরে।

প্লাজমা প্রয়োগের এই চিকিৎসায় গত সপ্তাহেই সাফল্য এসেছে। তারপরেই কোয়ারেন্টিন সেন্টারে থাকা সুস্থ তাবলীগ সদস্যরা প্লাজমা দিতে এগিয়ে এসেছেন। করোনা থেকে সেরে ওঠা রোগীর দেহে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, সেই অ্যান্টিবডি রক্তের প্লাজমা ট্রান্সফিউশনের মাধ্যমে সুস্থ মানুষের দেহে ঢুকিয়ে তাদের চিকিৎসা করা হচ্ছে ভারতে।

করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের প্লাজমা সংক্রমিতের দেহে প্রবেশ করিয়ে দিল্লিতে সাফল্য পাওয়া গেছে। তারপরে মুম্বাইতেও শুরু হয়েছে প্লাজমা নেওয়া। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্লাজমা চিকিৎসার সাফল্য তুলে ধরেছেন। যদিও এই চিকিৎসা এখনও ক্লিনিকাল ট্রায়ালের পর্যায়তেই আছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ প্লাজমা চিকিৎসা নিয়ে এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত করেনি।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে উঠে প্লাজমা দান করা এরকমই একজন তামিলনাডুর দিন্ডিগালের যুবক আনাস সৈয়দ। দারুল উলুম দেওবন্দের ছাত্র তিনি। পরীক্ষার শেষে ছুটি পড়েছিল মার্চ মাসে। দিল্লি হয়ে বাড়ি ফেরার ট্রেনের টিকিট কাটা ছিল আগেই। ট্রেন ছাড়ার একদিন আগেই পৌঁছেছিলেন দিল্লি। রাতটা থেকে গিয়েছিলেন নিজামুদ্দিনে। কিন্তু সেই ট্রেনে চড়ে বাড়ি যাওয়া হয়নি তার। হঠাৎই শুরু হয়ে যায় লকডাউন।

মার্চের মাঝামাঝি দিল্লিতে ধর্মীয় সমাবেশের পর কিছু মুসল্লিকে কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়।

আরও বহু মানুষের সঙ্গে নিজামুদ্দিন মারকাজেই থেকে যেতে হয় আনাস সৈয়দকে। এরপরে তার শরীরে ধরা পড়ে করোনা সংক্রমণ।

আইসোলেশনে ২১ দিন থাকার পরে সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিনি। কয়েকদিন আগে চিকিৎসকরা প্লাজমা দান করার প্রস্তাব দেন। তারা বলেন যে অন্য রোগীদের সুস্থ করে তোলা যাবে প্লাজমা দিয়ে। কোয়ারেন্টিনে থাকা অন্য তাবলীগ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। তাবলীগ প্রধান মৌলানা সাদ কান্দলভিও হোয়াটসঅ্যাপে অডিও বার্তা দেন যে আমরা নিজের ইচ্ছায় প্লাজমা দিতেই পারি। তখনই সিদ্ধান্ত নেন যে প্লাজমা দেবেন। 

গত রবিবার তার এবং আরও কয়েকজনের রক্ত নেওয়া হয় - যা থেকে প্লাজমা পৃথক করা হয়। করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য তাবলীগ সদস্যদের যে বদনাম করা হচ্ছিল, এখন আনাস সৈয়দের মনে হচ্ছে প্লাজমা দান করার মাধ্যমে আল্লাহ সেই বদনাম দূর করে দিলেন।

প্রথম দিনেই আনাস সৈয়দের সঙ্গেই প্লাজমা দিয়েছেন তাবলীগের সদস্য ফারুক বাশা। আনাস সৈয়দ রোজা রাখছেন। সন্ধ্যায় ইফতারের পরেই তাদের কোয়ারেন্টিন সেন্টারেই শুরু হচ্ছে দুই বা তিনজন সুস্থ হয়ে ওঠা তাবলীগ সদস্যর রক্ত থেকে প্লাজমা নিষ্কাশন। তাবলীগ ঘনিষ্ট এক চিকিৎসক ডাক্তার শোয়েব আলি বলেছেন, তিন থেকে চারশো তাবলীগ সদস্য প্লাজমা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন বলে তার ধারণা।

রবিবারে প্রথম দিনেই আনাস সৈয়দের সঙ্গেই প্লাজমা দিয়েছেন তাবলীগের আরেক সদস্য ফারুক বাশা। তিনিও তামিলনাডুর বাসিন্দা - চেন্নাই থেকে দিল্লি এসেছিলেন তাবলীগ জামাতের সমাবেশে যোগ দিতে। তারপরে ফিরতে পারেন নি আরও অনেকের মতোই। তিনিও দিল্লির সুলতানপুরীতেই কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।

বাশার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, রক্ত দিতে ইচ্ছুক কি না। তিনি বলেন, 'প্রথমে বিষয়টা বুঝতে পারিনি। তারপরে বুঝিয়ে বলা হয় যে প্লাজমা নিষ্কাশন করে তা অন্য করোনা সংক্রমিতের শরীরে দেওয়া হবে, যাতে তারা সুস্থ হয়ে ওঠেন। আরও অনেকের মতো আমিও প্লাজমা দিতে রাজি হয়ে যাই। যদি ভাইরাস আক্রান্ত কেউ সেই প্লাজমা দিলে সুস্থ হয়ে ওঠেন, তাহলে তো ভালই।' 

সূত্র : বিবিসি বাংলা।

 

এনপি-০৩