অনুকূল আবহাওয়া, হাওরের ৮০ ভাগ ধান কাটা শেষ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি


মে ০২, ২০২০
০৮:৪৮ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ০২, ২০২০
০৮:৪৮ অপরাহ্ন



অনুকূল আবহাওয়া, হাওরের ৮০ ভাগ ধান কাটা শেষ

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং শ্রমিক সংকট না থাকায় সুনামগঞ্জের বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে এখন। চলতি সপ্তাহে বজ্রপাত, ও শিলাবৃষ্টি না হওয়ায় কৃষক একটানা ধান কাটতে সক্ষম হয়েছেন। একই সঙ্গে আকাশ রৌদ্রজ্জ্বোল থাকায় কাটা ধান শুকানোর কাজও করা গেছে সহজে।

গতকাল শুক্রবার (১ মে) পর্যন্ত হাওরে ৮০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। তবে গড়ে জেলায় ৬৭ ভাগ বোরো ধান কাটা শেষ বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

সুনামগঞ্জ কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় আবাদকৃত ২ লাখ ১৯ হাজার ৩শ হেক্টর জমির মধ্যে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭শ ৬০ হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ। এর মধ্যে হাওরে ৮০ ভাগ, হাওরের বাইরে ২৯ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। গড়ে জেলায় ৬৭ ভাগ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। এই সপ্তাহেই হাওরের ধান কাটা শেষ হবে বলে জানিয়েছে ওই সূত্র।

এদিকে কৃষকরা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানো চলছে সমান গতিতে। শ্রমিক সংকট না থাকায় ধানও কাটা চলছে দ্রুতগতিতে। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে দুইদিনের বৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড়ে কৃষকদের মধ্যে ভীতি দেখা দেয়। ওই সময় একদিনে জেলায় হাওরের ক্ষেতে বজ্রপাতে চারজন কৃষক মারা যান। তবে এর পরেই আবহাওয়া অনুকূলে চলে আসে যা এখনও বহাল। এ কারণে প্রতিটি হাওরেই সমান গতিতে ধান কাটা চলছে। করোনার ভয় উপেক্ষা করে কষ্টের বোরো ধান গোলায় তুলতে কৃষক-কিষাণীরা এখন মাঠে অবস্থান করছেন।

সরেজমিনে দেখার হাওরে গিয়ে দেখা যায়, এই হাওরের বেশিরভাগ ধান কাটা শেষ। হাওরের ঝাউয়ার অংশ, গছিলাড়া অংশসহ কিছু অংশের ধান কাটা প্রায় শেষ। এখন বিস্তৃত খোলা কান্দায় গড়ে ওঠা খলায় যন্ত্রে ধান মাড়াই করছেন কৃষক। কিষাণীরা খলায় ধান শুকাচ্ছেন। অনেকে শুকানো ধান গরুর গাড়ি, মহিষের গাড়িসহ ভ্যানগাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে।

দেখার হাওরের তাজপুর গ্রামের কৃষক আজিম উল্লাহ বলেন, আমি ২২ কিয়ার জমিতে ধান লাগিয়ে ছিলাম। এর মধ্যে ১৮ কিয়ার জমির ধানই কেটে নিয়েছি। কাটা ধান মাড়াই শেষে শুকানোর কাজও প্রায় শেষ। এই সপ্তাহেই বাকি ক্ষেতের ধান কাটা শেষ হবে বলে জানান তিনি।

একই গ্রামের কিষাণী রহিমুন্নেছা বলেন, আমরা আধিভাগা কৃষক। ঋণ করে ১৭ কিয়ার জমির ধান করেছিলাম। ১ হাল জমির ধান কাটা শেষ। বাকি ক্ষেতের ধানও ৩-৪ দিনের মধ্যে কাটা শেষ হয়ে যাবে। এবার বাম্পার ফলন হলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সফর উদ্দিন বলেন, আমাদের দুশ্চিন্তা কেটে গেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দ্রুতগতিতে ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর কাজ চলছে। এই সপ্তাহেই ধান কাটা শেষ হবে। অবশিষ্ট ফসল পাহাড়ি ঢল ও বন্যার ঝুঁকিতে নেই বলে জানান তিনি।

সুনামগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট শামীমা শাহরিয়ার বলেন, শ্রমিক সংকট না থাকায় এ বছর ধান কাটাও চলছে দ্রুতগতিতে। আমাদের নেতাকর্মীরাও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছেন। প্রশাসন কৃষক-শ্রমিকদের ত্রাণের আওতায় নিয়ে এসে ধান কাটতে উৎসাহিত করেছে। তাছাড়া সামাজিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে মানুষ সাড়া দিয়ে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে। এবার বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি দেখা দিলেও কৃষকরা সরকারকে ন্যায্য দামে আরও ধান দিতে চান।

তিনি বলেন, কৃষকের কাছ থেকে ধান যাতে হয়রানি ও সিন্ডিকেটমুক্ত পরিবেশে ক্রয় করা হয়, সেই দাবি আরও জোরালো হয়েছে।

 

এসএস/আরআর