আবির হাসান-মানিক, তাহিরপুর
মে ০৮, ২০২০
১০:১৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মে ০৮, ২০২০
১০:১৯ পূর্বাহ্ন
স্বরূপে ফিরছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার জনজীবন! সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে দোকানপাট খোলার নির্দেশনা থাকলেও উপজেলার হাটবাজারের দোকানপাটগুলোতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না অনেকেই। যানবাহন চলার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা বিরাজমান।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সুনামগঞ্জ জেলায় ৫৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ৪ মে পর্যন্ত একমাত্র উপজেলা ছিল তাহিরপুর যেখানে কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। পরের দিন ৫ মে তাহিরপুরে প্রথমবারের মতো ৬ করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এ নিয়ে সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার মধ্যে সবকটিতেই করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এদিকে, প্রথমবারের মতো তাহিরপুরে যে ৩ জন পুরুষ ও ৩ জন মহিলা করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে, সন্দেহভাজন হিসেবে পরীক্ষার জন্য গত ২২ এপ্রিল তাদের নমুনা ল্যাবে পাঠানো হয়। আক্রান্তদের ফলাফল দেরিতে আসায় এ নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে চলছে আলোচনা সমালোচনা। তাছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে ৫ জনই রিপোর্ট আসার চার দিন আগেই ঢাকায় চলে যান। তাহিরপুরে ঢাকা ফেরত এই ছয়জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হলেও তারা তা মানেননি। বরং বাড়িতে থাকা আক্রান্তদের একমাত্র সদস্য (৫ মে) সকাল থেকে ধানকাটায় ছিলেন। দুপুরে করোনা পজিটিভ রেজাল্ট এলেও তাকে নিজ ঘরে এনে রাখা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, গত ৫ মে পর্যন্ত সন্দেহভাজন ৪৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করে সিলেট ও ঢাকার ল্যাবে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ৬ জনের ফলাফল পজিটিভ আসে।
সম্প্রতি ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দেশের সব ধরনের দোকান-পাট ও শপিং মল খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। বেশ কয়েকটি শর্ত মেনে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সারা দেশের শপিং মলগুলোর পাশাপাশি সব ধরনের দোকানপাট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
সারাদেশে করোনা ভাইরাস বিস্তার ঠেকাতে মানুষকে ঘরে রাখতে রাজপথের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় টহল দিচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী, র্যাব ও পুলিশ।
গত এক সপ্তাহ ধরে তাহিরপুরের হাটবাজারগুলোতে আগের মতো সেনাবাহিনী বা পুলিশ সদস্যদের টহল চোখে পড়েছে না। তাই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার বিষয়টি অনেকাংশেই এখন উপেক্ষিত, তাছাড়া জনসাধারণের মাঝেও করোনা ভীতি নেই আগের মতো। জীবনযাত্রা যেন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে, জনসমাগমের চিত্র দেখে এমনই পরিলক্ষিত হচ্ছে! লকডাউন বলতে যেন আর কিছুই দৃশ্যমান নেই! নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানপাটের পাশাপাশি অন্যান্য সব দোকানগুলোও নিয়মিত খোলা হচ্ছে। চলছে রাত অবধি।
দোকানগুলোতে কেনাকাটায় জটলার দৃশ্য এখন নিয়মিত। যানবাহনগুলোর চলাচলও স্বাভাবিক হওয়ায়, দূরদূরান্তের লোকজন অনেকটা নির্ভার হয়েই চলাচল করছেন। দেশের অন্যতম করোনা হটস্পট নারায়ণগঞ্জসহ গাজীপুর ও ঢাকা থেকে এ উপজেলায় সহস্রাধিক নারী পুরুষ প্রবেশ করেছেন যা কেবল আতঙ্কের বার্তাই বহন করছে। যদিও বহিরাগতদের মধ্য থেকে অনেকগুলো পরিবারকে লকডাউনের আওতায় নেওয়া হয়েছে এবং হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করাসহ অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তারপরও অনেকে হোম কোয়ারেন্টিনের নির্দেশ মানছেন না।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘জনসমাগম এড়িয়ে, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে দোকানপাটগুলোতে কেনাবেচা নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। তাছাড়া তাহিরপুরে ইতোমধ্যে যেসমস্ত বহিরাগত প্রবেশ করেছেন ও যারা বাইরে থেকে নতুন করে প্রবেশ করছেন তাদের সকলের উপরই কড়াকড়ি নজরদারি রয়েছে এবং তাদের শনাক্ত করে হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করাসহ সন্দেহভাজনদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে।
এনপি-০৪