করোনার প্রভাব : দিশেহারা শায়েস্তাগঞ্জের দুগ্ধ খামারিরা

শায়েস্তাগঞ্জ সংবাদদাতা


মে ১৪, ২০২০
০২:৪১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ১৪, ২০২০
০২:৪১ পূর্বাহ্ন



করোনার প্রভাব : দিশেহারা শায়েস্তাগঞ্জের দুগ্ধ খামারিরা

সারাদেশে লকডাউনের কারণে বিপাকে আছেন হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জের দুগ্ধ খামারিরা। করোনাভাইরাসের কারণে মিষ্টির দোকান, হোটেল, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় এখন অনেকটাই দিশেহারা দুগ্ধ খামারিরা। দুধের চাহিদা না থাকা আর সেই সঙ্গে গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন লোকসান গুনছেন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার খামারীরা।

শায়েস্তাগঞ্জ এগ্রোফার্ম ও এগ্রিটেক্ট ফারম লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন শায়েস্তাগঞ্জ পৌর এলাকার দাউদনগর মহল্লার সৌরভ পাল চৌধুরী। তার এই ডেইরি ফার্মে দৈনিক প্রায় ২শ লিটার দুধ উৎপন্ন হয়। এসব দুধ মিষ্টান্ন তৈরির দোকানসহ হোটেল-রেস্তোরাঁ ও বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে তিনি স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দোকানপাট বন্ধ থাকায় উৎপাদিত দুধ নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছেন তিনি। আগের মতো দুধ বিক্রয় হচ্ছে না। ফলে প্রতিদিন অনেক টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। আর এই সমস্যাটি শুধু সৌরভ পালের একার নয়।

শায়েস্তাগঞ্জের দুগ্ধ খামারিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ রয়েছে মিষ্টির দোকান, চায়ের দোকান, বিভিন্ন বেকারিসহ অন্যান্য খাবারের দোকান। এই দোকানগুলোতে কাঁচামাল হিসেবে গরুর দুধের চাহিদা অনেক। বিশেষ করে মিষ্টান্ন উৎপাদনে দুধের চাহিদা বেশি। কিন্তু করোনায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দুধের চাহিদা নেই বললেই চলে।

তবে সবকিছু বন্ধ থাকলেও দুধ উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। গরুর খাবার ও অন্যান্য খরচ দিয়ে এখন হিমশিম খাচ্ছেন তারা। শায়েস্তাগঞ্জ এগ্রো ফার্মের মালিক সৌরভ পাল চৌধুরী বলেন, আমার ফার্ম থেকে দৈনিক প্রায় ২০০ লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে, যা দিয়ে ৫ জন শ্রমিকসহ নিজের পরিবারের খরচ বহন করি। চাহিদা না থাকায় উৎপাদিত দুধের বেশিরভাগই গাভীর বাচ্চাকে খাওয়াতে হচ্ছে। কিছু দুধ দিয়ে আমরা ছানা তৈরি করে রাখছি। এতে মারাত্মক লোকসান গুনতে হচ্ছে। খামার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। বাজারে পশু খাদ্যের দামও বেশি। এভাবে চলতে থাকলে পথে বসতে হবে।

মায়া ডেইরি ফার্মের মালিক মিজানুর রহমান রাসেল বলেন, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় দৈনিক প্রায় সাড়ে ২ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়। প্রায় প্রত্যেকটি খামারের মালিকরা অনেকটাই পথে বসতে শুরু করেছেন। দুধের দাম কমিয়েও বিক্রয় করতে পারছি না আমরা। এ অবস্থায় আমরা কি করব ভেবে পাচ্ছি না। তাছাড়া এখন গরুর খাদ্যের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের অনেক লোকসান হচ্ছে। ফলে আমাদের খামারের উৎপন্ন দুধ বিক্রি করতে পারছি না। এরই সাথে যোগ হয়েছে গো-খাদ্যের দাম অতিরিক্ত বেড়েছে। খামারের গাভীদের খাবার দেয়াই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এরকম চলতে থাকলে খামার ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে কথা হয় শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার রমা পদ দে’র সঙ্গে। তিনি বলেন, শায়েস্তাগঞ্জে বড়-ছোট মিলে ৩২টি দুগ্ধ খামার রয়েছে। করোনা পরিস্থিতে দোকানপাট বন্ধ থাকায় উৎপাদিত দুধ বাজারজাত করতে পারছেন না খামারিরা। সরকারিভাবে দুগ্ধ খামারিদের তালিকা করা হচ্ছে। দুগ্ধ খামারিদের বিষয়টি সরকারের নজরে আছে।

 

এসডি/আরআর