সবার জন্য সুলভে টিকা নিশ্চিতে প্রস্তাব আসছে

সিলেট মিরর ডেস্ক


মে ১৬, ২০২০
০৪:৫৮ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ১৬, ২০২০
০৪:৫৮ অপরাহ্ন



সবার জন্য সুলভে টিকা নিশ্চিতে প্রস্তাব আসছে

বিশ্বে সবার জন্য সুলভে নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) টিকা পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করতে একটি প্রস্তাব উঠছে ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলিতে (ডাব্লিউএইচএ)। আগামী সোম ও মঙ্গলবার (১৮ ও ১৯ মে) ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেই সম্মেলনে বিশ্বের ১৯৪টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আসন্ন সম্মেলনে উপস্থাপনের জন্য ইতিমধ্যে একটি খসড়া প্রস্তাবের ব্যাপারে সদস্য দেশগুলোর সম্মতি মিলেছে। করোনার টিকা বা ওষুধ আবিষ্কার হলে তার স্বত্ব নিয়ে বিশ্বে আবারও ধনী-গরিব পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে। এ কারণে এখনই সম্ভাব্য টিকার পেটেন্ট স্বত্ব শিথিল করাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ওই খসড়া গৃহীত হলে কভিড-১৯ চিকিৎসাসামগ্রী, টিকা ও ওষুধ ব্যাপক পরিসরে উৎপাদন ও ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।

জেনেভায় বাংলাদেশি কূটনীতিকরা জানান, সবার জন্য সুলভে টিকা পাওয়া নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশগুলো যাতে রয়ালটি ছাড়াই সেই টিকা উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে পারে সেদিকেও বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে। খসড়াটির বিষয়ে জেনেভায় কূটনৈতিক মিশনগুলো আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

সম্মেলনে উপস্থাপনের জন্য তৈরি করা খসড়ার বিষয়ে দরকষাকষিতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন জেনেভায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘের দপ্তরগুলোতে স্থায়ী প্রতিনিধি শামীম আহসান। তিনি বলেছেন, প্রস্তাবটি গৃহীত হলে বাংলাদেশের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর সেই সুযোগ বাংলাদেশকেই কাজে লাগাতে হবে।

প্রস্তাবটির মূল স্পন্সর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। আলোচনা-দরকষাকষি শেষে খসড়াটি যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে অনেক পরিবর্তন এসেছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বড় ভূমিকা রেখেছে। প্রথম খসড়া নিয়ে দরকষাকষি শুরুর পর বাংলাদেশ ৩০ থেকে ৪০টি পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছে। যেসব বিষয়ে বাংলাদেশের মূল উদ্বেগ ছিল সেগুলো খসড়ায় পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো সব সময় ওষুধের ওপর অধিকারের বিষয়টি সমতার ভিত্তিতে বিবেচনা করে। যখন একটি নতুন জীবন রক্ষাকারী ওষুধ বের হয় তখন তার ওপর সবার অধিকার আছে, এভাবে আমরা জিনিসটা দেখি।’ 

তিনি বলেন, সুলভ মূল্য, ওষুধে অধিকার, সমতা, নিম্ন আয়ের দেশের জন্য বিশেষ সুবিধার বিষয়গুলো অনেকে স্বীকার করতে চায় না। বাংলাদেশ এ বিষয়গুলো শুরুতেই চিহ্নিত এবং এগুলোর প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেছে। এ ক্ষেত্রে অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোও সমর্থন দিয়েছে। এরপর সেগুলো খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 

এদিকে আসন্ন সম্মেলন ঘিরে আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোও খসড়া প্রস্তাব নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি সংস্থা অক্সফাম বলেছে, করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের পর পৃথিবীর অর্ধেক ও দরিদ্রতম জনগোষ্ঠী ৩৭০ কোটি লোককে টিকা দিতে যে খরচ হবে তা বিশ্বের বৃহত্তম ১০টি ওষুধ কম্পানির চার মাসের লাভের অর্থের চেয়েও কম। অক্সফাম বিশ্বের সরকার ও ওষুধ কম্পানিগুলোকে করোনার টিকা, পরীক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাকে পেটেন্টমুক্ত এবং সব রাষ্ট্র ও মানুষের মধ্যে সমানভাবে বণ্টনের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।

গেটস ফাউন্ডেশনের ধারণা, টিকা সংগ্রহ করে বিশ্বের দরিদ্রতম ব্যক্তিদের নিরাপদ ও কার্যকরভাবে প্রয়োগে আড়াই হাজার কোটি ডলার খরচ হতে পারে। গত বছর বিশ্বের শীর্ষ ১০টি ওষুধ কম্পানি আট হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারের মুনাফা করেছে। অর্থাৎ প্রতি চার মাসে তাদের গড় মুনাফা তিন হাজার কোটি মার্কিন ডলার।

এনপি-০২