আসছে চাকরি হারানোর খড়গ?

নিজস্ব প্রতিবেদক


মে ১৬, ২০২০
১০:১০ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ১৭, ২০২০
১২:৫২ অপরাহ্ন



আসছে চাকরি হারানোর খড়গ?

করোনা পরিস্থিতি দুই মাস যেতে না যেতেই চাকরি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন বিভিন্ন বেসরকারি ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানের চাকুরিজীবীরা। এরই মধ্যে প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে এমন কথাবার্তা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপকভাবে চাউর হয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। একই আশঙ্কা বিরাজ করছে সিলেটের বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকুরিচ্যুত করা কিংবা বেতন কর্তন করার মতো কঠোর সিদ্ধান্তে শীঘ্রই যেতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের বেসরকারি চাকুরিজীবীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাকুরি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা, ব্যাংক কর্মকর্তা, উন্নয়নসংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী, গণমাধ্যমকর্মী ও স্কুল-কলেজ-কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা। এর বাইরে বিভিন্ন দোকান, হোটেল ও রেস্তোরাঁর কর্মচারীরাও একই আশঙ্কায় রয়েছেন। এমনকী চাকুরিচ্যুত না হলেও করোনা পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে বেতনের একটি নির্দিষ্ট অংশ আগামী দু-এক মাসের মধ্যে কর্তন করতে পারেও বলে কেউ কেউ মনে করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেটের দুজন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোতে লেনদেন কমে গেছে। বিশাল একটা সংকটের মধ্য দিয়ে ব্যাংক খাত এগিয়ে চলছে। আরও কয়েক মাস এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ব্যাংক খাতে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে। এ অবস্থায় খাতটিকে টিকিয়ে রাখতে কর্তৃপক্ষ কর্মী ছাটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেবে। এ অবস্থায় অনেকেই চাকুরি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন। একদিকে করোনার কারণে ভয় আর শঙ্কা ব্যাংকারদের ঘিরে রেখেছে, অন্যদিকে ভবিষ্যত চিন্তায়ও তাঁরা অস্থির হয়ে পড়ছেন। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, এখন সেটা দেখার অপেক্ষায়ই তাঁরা রয়েছেন। এরই মধ্যে ব্যাংকপাড়াতে এমন আলোচনা আড়ালে-আবডালে চলছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেকজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘শুনছি, একটি নির্দিষ্ট শতাংশ বেতন কমিয়ে ফেলার সিদ্ধান্তেও আসতে পারে বিভিন্ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে যাঁরা বেশি বেতন পান, তাঁদের বেতন কমার হার বেশি হবে বলে ধারণা করছি। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত আসলে কী ঘটে?’

সিলেট নগরের একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক জাবেদ উদ্দিন। তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়টি গত দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। মার্চ মাসের বেতন পেয়েছি। এপ্রিল মাসের বেতন এখনো পাইনি। ঠিক জানি না, ঈদের বোনাস ঠিকমতো পাব কি না। দুই মাসেই যদি এই হাল হয়, তাহলে এ পরিস্থিতি যদি আরও কিছুকাল থাকে, তবে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব? আর্থিক সংকটে পড়ে স্ত্রী-সন্তান-পরিবার নিয়ে ঠিকমতো চলতে পারব কি না, তাই ভেবে কূল পাচ্ছি না।’ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক চাপে রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয় সমন্বয় করার স্বার্থে কর্মী ছাটাইয়ের সিদ্ধান্তে কর্তৃপক্ষের আসাটা একেবারেই অমূলক নয়। তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে প্রতিনিয়ত শঙ্কা বেড়েই চলছে যে, কারা এ কোপের শিকার হবেন?

সিলেটের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানান, বেতন ও বোনাস তাঁরা এখনো ঠিকমতো পাননি। কয়েকজন গণমাধ্যকর্মী জানিয়েছেন, সিলেটের সবকটি স্থানীয় দৈনিক করোনা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বেতন অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। অনেক জাতীয় পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেল বেতন দিচ্ছে না। ফলে তাঁরা চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।

সাজ্জাদ আলী নামের একজন রেস্তোরাঁকর্মী জানান, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে হয়তো হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো পুনরায় চালু হবে। তবে সেখানে কী পরিমাণ মানুষ খেতে আসবেন, সেটা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অর্থের অপচয় রোধ কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কারণে অনেকে হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবার-দাবার বন্ধ করে দিতে পারে। এ কারণে এসব কর্তৃপক্ষ শুরুর দিকে সীমিত পরিসরে প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করতে পারে। সেক্ষেত্রে কর্মী ছাটাইয়ের ঘটনাও ঘটবে। সবমিলিয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁ শ্রমিকদের মধ্যে চাকুরি হারানোর শঙ্কা এরই মধ্যে ভর করেছে।

এএন/বিএ-০১