নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ১৯, ২০২০
০৯:০০ অপরাহ্ন
আপডেট : মে ২০, ২০২০
০৪:০৪ পূর্বাহ্ন
করোনায় সারা বিশ্ব এক কঠিন সময় পার করছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এই ভাইরাসে, মারাও যাচ্ছেন অনেকে। বাংলাদেশেও প্রতিদিন আগের সব রেকর্ড ভেঙে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এ অবস্থায় সারা বিশ্বের মতো এ দেশেও স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষদের। তেমনই একজন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম। দিন নেই রাত নেই, যখনই কোনো সংবাদ পাচ্ছেন ছুটে চলেছেন নির্দিষ্ট জায়গায়।
ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। করোনা পরিস্থিতি আসার পর থেকেই মানুষের জন্য দিন-রাত ছুটছেন নগরের এই স্থান থেকে ওই স্থান। প্রবাসীদের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো, করোনা আক্রান্ত রোগীর বাসা লকডাউন, এলাকার জনগণ করোনা সন্দেহে কারও বাসা অবরুদ্ধ করেছে তাঁদের বুঝানো, সব কাজে তিনি আছেন। খবর পাওয়ার সঙ্গেই দ্রুত সময়ের মধ্যে পৌঁছে যান সেখানে। শুধু করোনা নয়, আসছে বর্ষা মৌসুমে নগরে যাতে ডেঙ্গু প্রভাব ফেলতে না পারে সেজন্যও কাজ করে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে রয়েছে পুরো শহরে জীবাণুনাশক পানি ছিটানোর কাজ। সিলেট নগরের মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে প্রতিটি কাজের সঙ্গে নিজেকে সরাসরি যুক্ত রাখছেন তিনি।
এসব বিষয় নিয়ে সিলেট মিররকে ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে করোনা প্রথম শনাক্ত হয় ৮ মার্চ থেকে। তবে এর আগে থেকেই জনগণকে সচেতন করাসহ বিভিন্ন কাজ আমাদের শুরু হয়। করোনা যতদিন নির্মূল না হচ্ছে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাব। তবে এসব যে আমি নিজের চাকরির জন্য করছি তা না, এটাই আমার দায়িত্ব। আমার উপর যে দায়িত্ব পড়েছে, সেটা যথাযথভাবে পালন করাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে কাজ করা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এ প্রশ্নে ডা. জাহিদুল বলেন, ‘আমাদের একটা গাইডলাইন আছে, আক্রান্ত রোগীর কতটা কাছে যাওয়া যাবে বা আমরা কিভাবে নিজেদের সুরক্ষিত রাখব। সেগুলো মেনে চলার চেষ্টা করি। সাধারণত একটা মাস্ক, হাতের গ্লাভস এবং চশমা পড়েই বাইরে কাজ করি। তবে সবসময় নিজেকে সুরক্ষার বিষয়টা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। কিন্তু কাজ চালিয়ে যেতে হবে।’
দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের পরিবারের সহযোগিতা পেয়েছি প্রথম থেকে, এমনটা জানিয়ে ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এপ্রিলের ৫ তারিখে যখন সিলেটে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় তখন পরিবারকে জানিয়েছিলাম, আমি একটা হোটেলে আইসোলেশনে থাকব। তবে তারা তাতে রাজি হননি। তাই বাসায় অবস্থান করেই দায়িত্ব পালন করছি। আমার স্ত্রীও একজন চিকিৎসক। তাই তার সহযোগিতা বেশি পাচ্ছি। তবে এখন বাসায় যাওয়ার পর পর আগেই ওয়াশরুমে গিয়ে গোসল করি। পরবর্তীকালে পরিবারের সবার সঙ্গে দেখা করি।’
এই কয়েকমাস কাজ করতে গিয়ে ডা. জাহিদুল অনেক ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন, তেমনি একটি ঘটনা বললেন সিলেট মিররকে। তিনি বলেন ‘নগরের খারপাড়া এলাকা থেকে রাত সাড়ে এগারোটায় ফোন এলো, সেখানে একটা বাসা অবরুদ্ধ করে রেখেছেন এলাকাবাসী। খবর পেয়েই ছুটে যাই সেখানে, গিয়ে দেখি অনেক মানুষ একটা বাসা অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। কারণ ওই বাসায় একটি পরিবার হবিগঞ্জ থেকে এসেছে এবং পরিবারের একটা বাচ্চার শ্বাসকষ্ট আছে। বাসায় ঢুকার পর জানলাম যে, বাচ্চাটার বয়স মাত্র আড়াই মাস। এক মাস আগে বাচ্চাটার নিউমেনিয়া হয়েছিল। বাচ্চার জন্ম হয় হবিগঞ্জে, এখন বাস্তবতার জন্য মা আর বাচ্চাকে সিলেটে নিয়ে আসে বাচ্চার বাবা। পরবর্তীকালে আমি বাচ্চাটাকে কোলে নিলাম, তখন সেখানের মানুষজন বুঝতে পারলেন যে আসলে বাচ্চাটা করোনা আক্রান্ত না।’
করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু নির্মূলের কাজটি কিভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. জাহিদুল বলেন, ‘এ বছরও নগরে ডেঙ্গুর প্রভাব পড়বে। তাই গত এক বছর ধরে এই প্রকোপ কমানোর জন্য আমরা বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেই। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি চলে আসায় সেগুলো বাস্তবায়নে কিছুটা ছন্দপতন ঘটে। এর মধ্যে মশক নিধন কর্মসুচি চলছে। যেসব এলাকায় এডিসের লার্ভা পাওয়া যেতে পারে সেখানে আমরা কাজ করছি। তবে এক্ষেত্রে নগরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে নিজ নিজ বাসা, বাসার আঙিনা পরিষ্কার রাখতে হবে।’
এই করোনা সংকটকালীন সময়ে সিলেটের মানুষের জন্য কী বার্তা থাকবে জানতে চাইলে সিসিকের এই প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘নগরবাসী সবাই ঘরে থাকুন। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হবেন না। অনেকেই ঈদেও কেনাকাটা করছেন। তাদের বলব এক ঈদে নতুন কাপড় না পড়লে কিছুই হবে না। কিন্তু আপনার ক্ষতি হলে সেটা সারাজীবন আপন মানুষকে ভোগাবে। তাই সবাইকে বাসায় থাকার অনুরোধ থাকলো।’
এএন/বিএ-২৪