দোয়ারাবাজারে নিয়োগ বাণিজ্য, সাত শিক্ষকের পদত্যাগ

দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি


মে ২৩, ২০২০
০৭:০১ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ২৩, ২০২০
০৭:১৪ অপরাহ্ন



দোয়ারাবাজারে নিয়োগ বাণিজ্য, সাত শিক্ষকের পদত্যাগ

অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান জসিম মাস্টার

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসিম মাস্টার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে অধিষ্ঠিত থাকার পরও একটি এমপিওভুক্ত নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে একই ব্যক্তি ইউপি চেয়ারম্যান ও স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকাবস্থায় রাজনীতিতেও সক্রিয় থাকায় তিনি এখন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

জসিম মাস্টারের সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে অতিষ্ঠিত হয়ে তার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন স্কুলের শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যসহ সর্বস্তরের এলাকাবাসী। এসব অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে গত শনিবার (১৬ মে) একযোগে ওই স্কুলের সকল শিক্ষক স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন এবং গত বুধবার (২০ মে) বিকেলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে নিয়োগ বাণিজ্যসহ অনিয়ম-দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ করেছেন তারা। পাশাপাশি ওই প্রতিষ্ঠানের ৭ জন সহকারী শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটির কাছে লিখিত আবেদন করে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। এ নিয়ে এখন এলাকাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

অভিযোগসূত্রে জানা যায়, উপজেলার বাঁশতলা চৌধুরীপাড়া শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বাংলাবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসিম মাস্টার ২০১০-২০১১ সালে হকনগর (কলোনী) পাথর কোয়ারি থেকে স্কুলের উন্নয়নের কথা বলে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করাসহ স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সকল সদস্যদের সঙ্গে ছলচাতুরীর মাধ্যমে ২০২০ সালে পাঁচ লাখ টাকা উৎকোচের বিনিময়ে একজন ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ ২০১৫ সালের নিয়োগ বলে দেখিয়েছেন তিনি (তবে তার সঙ্গে কথা বলার একটি অডিও রেকর্ড আছে যেখানে তিনি তিন লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।) অথচ নিয়োগকৃত শিক্ষক স্থানীয় কুশিউড়া-ঢালিয়া ইবতেদায়ী মাদরাসার প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

এদিকে ২০১৫ সাল থেকে আজ অবধি এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভবন নির্মাণের নাম করে টাকা উত্তোলন করা হলেও শেষমেষ সরকারি অর্থায়নে দ্বিতল একাডেমিক ভবন নির্মিত হয়। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উত্তোলনকৃত টাকার কোনো হদিস নেই। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত বেতন ও ভর্তি ফিসহ স্কুল উন্নয়নের মোটা অংকের টাকার কোনো হিসাব-নিকাশের মিল নেই। এছাড়াও ক্ষমতার অপব্যবহার করাসহ অনেক অনিয়ম-দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ রয়েছে জসিম মাস্টারের বিরুদ্ধে।

এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত সোমবার (১৮ মে) সম্প্রতি প্রধান শিক্ষক জসিম মাস্টার প্রাক্তন ছাত্রদের সঙ্গে এক বৈঠকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার পরামর্শক্রমে স্কুল এমপিওভুক্তকরণের ব্যয় নির্বাহের জন্য তিনি তিনজন শিক্ষক-কর্মচারীর কাছ থেকে সর্বমোট ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। ওইদিনের পর থেকে ইউপি চেয়ারম্যানের স্বীকারোক্তির ওই অডিও ক্লিপে বর্তমানে এলাকাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম ও সুরুজ ভুঁইয়া বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রধান শিক্ষক জসিম মাস্টার স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সঙ্গে ছলচাতুরী করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে মোটা অংকের নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে একজন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ২০১৫ সালের নিয়োগ দেখিয়েছেন। তিনি তা স্বীকারও করেছেন। কিন্তু আমরা ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা কিছুই জানি না। আমরা চাই এর সুষ্ঠু তদন্ত হোক।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাসিব উদ্দিন বলেন, প্রধান শিক্ষক জসিম মাস্টার আমাদের ঘুমে রেখে নিয়োগ বাণিজ্য করে এখন বিপাকে পড়েছেন। আমরা বিষয়টি ছাতক-দোয়ারাবাজার আসনের সাংসদ মুহিবুর রহমান মানিক মহোদয়কে জানিয়েছি।

অভিযোগের সত্যতা জানতে ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রধান শিক্ষক জসিম মাস্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি 'পরে কথা বলছি' বলে কল কেটে দেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মেহের উল্লাহ বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে প্রধান শিক্ষক জসিম মাস্টার এ বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধান করবেন বলে জানিয়েছেন।

 

এইচএইচ/আরআর-০১