বড়লেখায় উপসর্গহীন করোনা আক্রান্তরা বাড়াচ্ছেন ঝুঁকি

এ.জে লাভলু, বড়লেখা


মে ২৪, ২০২০
০৫:১৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ২৪, ২০২০
০৫:১৬ পূর্বাহ্ন



বড়লেখায় উপসর্গহীন করোনা আক্রান্তরা বাড়াচ্ছেন ঝুঁকি

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় একের পর এক করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছে। সর্বশেষ আজ শনিবার (২৩ মে) পূবালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তার (৩০) দেহে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। এ নিয়ে উপজেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬ জনের করোনার কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ নেই। কিন্তু তাদের দেহে প্রাণঘাতী এ রোগ নিরবে বাসা বেঁধেছে।

এদিকে দিন দিন উপসর্গবিহীন করোনা রোগী বাড়তে থাকায় সংশ্লিষ্টরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, দিন যত গড়াচ্ছে তত উপসর্গবিহীন করোনা রোগী বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, উপসর্গবিহীন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে সুস্থ মনে করে অবাধে ঘোরাফেরা করছেন। এতে তারা যেসব সুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শে যাচ্ছেন কিংবা যারা তাদের সংস্পর্শে আসছেন তারাই করোনা সংক্রমিত হচ্ছেন। এভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে সামনে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হলে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি ঘরে থাকাটাই একমাত্র পথ বলে তারা মনে করছেন।

হাসপাতাল ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বড়লেখায় গত ২৫ এপ্রিল প্রথম এক যুবকের (৩৫) করোনা শনাক্ত হয়। ওই ব্যক্তির মধ্যে করোনার উপসর্গ জ্বর-সর্দি-কাশি ছিল। তিনি চা-ছোলা বিক্রি করতেন। তিনি আক্রান্ত কারও মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তিনি সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এর পরদিন গত ২৬ এপ্রিল এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর (৩০) করোনা শনাক্ত হয়। তার মধ্যে করোনার উপসর্গ জ্বর ছিল। গত ২৩ এপ্রিল করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা এক ব্যক্তির করোনা নেগেটিভ এলেও গত ৫ মে নমুনা পরীক্ষায় তার স্ত্রীর (৩৫) করোনা পজিটিভ আসে। যদিও ওই নারীর করোনার কোনো উপসর্গ নেই। এরপর চলতি মাসের গত ১৭ মে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক ওয়ার্ড বয়ের (৩৫) করোনা শনাক্ত হয়। ওই ওয়ার্ড বয়েরও করোনার কোনো লক্ষণ নেই। এরপর ওই হাসপাতালের চিকিৎসকসহ আরও ৩৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়। গত ২১ মে তাদের নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন আসে। এর মধ্যে তিন চিকিৎসকের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। তাদের বয়স ২৯ থেকে ৩১ এর মধ্যে। তবে তাদের কারও করোনার কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ ছিল না। ধারণা করা হচ্ছে, তারা আক্রান্ত কারও মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন। 

সর্বশেষ আজ শনিবার পূবালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তার দেহে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। যদিও তার মধ্যে করোনার কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ নেই। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আক্রান্ত কারও মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন।

এ নিয়ে বড়লেখা উপজেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ জনে। তাদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিনজন চিকিৎসক হাসপাতালের কোয়ার্টারে আইসোলেশনে রয়েছেন। এছাড়া হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ও ব্যাংক কর্মকর্তাসহ আক্রান্ত ৫ জন নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন। প্রশাসন আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাসা ও বাড়ি লকডাউন করে রেখেছে।

এ ব্যাপারে বড়লেখা উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রত্নদীপ বিশ্বাস বলেন, বড়লেখায় এ পর্যন্ত ৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রথম যে ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তার মধ্যে করোনার উপসর্গ ছিল। তবে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এছাড়া এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর শরীরে করোনার লক্ষণ ছিল। এরপর যে ৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের কারও মধ্যে করোনার কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ নেই। তাদের মধ্যে হাসপাতালের তিনজন চিকিৎসক ও একজন ওয়ার্ডবয় রয়েছেন। এটা খুব উদ্বেগের বিষয়। কারণ উপসর্গবিহীন করোনা আক্রান্তদের দ্রুত শনাক্ত করতে না পারলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।

 

এজে/আরআর-০৯