অন্যরাও হবেন তাঁদের ঈদের অংশীদার

নিজস্ব প্রতিবেদক


মে ২৩, ২০২০
১০:০৩ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ২৩, ২০২০
১০:০৩ অপরাহ্ন



অন্যরাও হবেন তাঁদের ঈদের অংশীদার

ঈদকে উপলক্ষ করে হাটবাজার আর বিপণিবিতানগুলো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় সিলেট নগরের অধিকাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আর বিপণিবিতান চালু না হলেও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান ঠিকই খুলেছে। সেখানে বেচাকেনাও চলছে দেদারসে। সচেতন মানুষজন জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে নির্দিষ্ট সামাজিক দূরত্বের ধার না ঘেঁষে মানুষজন ঈদের কেনাকাটা করছেন। এতে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটতে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

একাধিক সচেতন মানুষ জানিয়েছেন, এবারের ঈদে তাঁরা কোনো কেনাকাটা করবেন না। যেহেতু করোনাভাইরাসের এ সময়টাতে তাঁরা আত্মীয়স্বজনদের বাসায় যাবেন না, তাই নিজেরা কোনো নতুন পোশাক কিনবেন না। এমনকী অন্যান্য বছর যেখানে আত্মীয়স্বজনদের তাঁরা কাপড়-চোপড় উপহার দিতেন, এবার সেটাও করবেন না। এর বদলে তাঁরা ঈদের বাজেটের পুরো টাকা গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বিতরণ করবেন। বাসার আশপাশের চেনাজানা গরিব ও দুস্থদের মধ্যে তাঁরা টাকা বিলাবেন। এতে তাঁরা দ্বিগুণ উৎসাহে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন বলে মনে করছেন।

পাঠানটুলা এলাকার বাসিন্দা শরাফত হোসেন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে আমরা এখন ঘরবন্দী। প্রতি বছর রমজান মাসে মসজিদে নামাজ আদায় করলেও এবার যাইনি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কারণেই যাইনি। বাসাতেই নামাজ আদায় করেছি। এবার আমরা পরিবারের সব সদস্যরা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ঈদের কেনাটাকা করব না। কারও জন্যই পোশাক কিনব না। কেবলমাত্র সেমাই কিংবা খাবার জাতীয় কিছু সামগ্রী নিজেদের জন্য কিনব। এর বাইরে ঈদের বাজেটের সমস্ত টাকা গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দেব। এটাই হবে এই ঈদের সবচেয়ে বড় আনন্দ।’

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন মাহমুদ ইসলাম। তিনি জানান, করোনাভাইরাসের কারণে এবার তিনি ঈদের বোনাস অর্ধেক পেয়েছেন। তবে এবার তিনি কোনো কেনাকাটা করবেন না। কেবল বোনাসের কিছু টাকা তিনি অসহায়দের মধ্যে বিতরণ করবেন। ঈদের দিন তিনি বাসা থেকেও বেরোবেন না। ঘরেই পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সময় কাটাবেন। সোবহানীঘাট এলাকার বাসিন্দা মইনুল হক (৬১) জানান, তিনি কেবল ঈদের দিন পাশের মসজিদে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। এবারের ঈদে নতুন পাঞ্জাবি-লুঙ্গি তিনি কিনবেন না বলে জানিয়েছেন।

সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন সানজিদা ইসলাম। তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর বান্ধবীরা মিলে একসঙ্গে ঈদের কেনাকাটা করতে বিপণিবিতানে যেতাম। ঘুরে ঘুরে আমরা সকল বিপণিবিতানের কাপড়ের দোকানগুলো দেখতাম। এরপর নিজেদের পছন্দমতো একই রং এবং নকশার কাপড় সব বান্ধবীরা মিলে কিনতাম। এবার সেই দিনগুলো মিস করব। এবার করোনার কারণে আমরা কোনো নতুন পোশাক কিনব না। বাসা থেকেও বেরোব না। তবে ঈদের দিনে ম্যাসেঞ্জারে আমরা ভিডিওকলে সবাই মিলে আলাপ করব।’ 

সেনপাড়া এলাকার গৃহিণী নাঈমা আক্তার পারুল (৪৭) বলেন, ‘এবার তো বাসায় আর অন্যান্য বছরের মতো ঈদের দিন আত্মীয়স্বজন বেড়াতে আসবেন না। তাই পিঠা-সেমাই কেবল নিজেদের জন্যই করব। তবে এবার ঈদের কেনাকাটা খুব মিস করব। সেই শৈশব থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত আমরা কেনাকাটা করতে বেরোতাম বাবা-মায়ের সঙ্গে। বিয়ের পর বাচ্চাদের নিয়ে বেরোচ্ছি। এবার সেটা হচ্ছে না। এরপরও যদি ভালোয় ভালোয় করোনাকালটা কেটে যায়, তাহলে বাঁচি। বাসায় বন্দী থাকতে থাকতে হাফিয়ে উঠেছি। পরিস্থিতি যে কবে শান্ত হয়, একমাত্র আল্লাই জানে।’

বিএ-০১