বড়লেখায় প্রবাসীদের ডাকে এগিয়ে এলেন শিক্ষার্থীরা

এ.জে লাভলু, বড়লেখা


মে ২৫, ২০২০
০৫:২৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ২৫, ২০২০
০৫:২৪ পূর্বাহ্ন



বড়লেখায় প্রবাসীদের ডাকে এগিয়ে এলেন শিক্ষার্থীরা

একটি বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী তারা। থাকেন দূর প্রবাসে। করোনাভাইরাসের কারণে তারাও কর্মহীন। কষ্টে রয়েছেন। তাতে কি? দেশের মানুষের কথা ভুলে যাননি তাঁরা। সংকটে পড়া এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রথমে উদ্যোগ নেন প্রবাসীদের কয়েকজন। আর তাদের ডাকেই সাড়া মেলে। একে একে এগিয়ে আসেন দেশে-বিদেশে থাকা একই বিদ্যালয়ের প্রায় ৩ শতাধিক প্রাক্তন শিক্ষার্থী। সবাই মিলে মাত্র সাতদিনে সংগ্রহ করেন ৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা। আর সে টাকা দিয়ে খাদ্যসামগ্রী কিনে তা কর্মহীন ও অসহায় মানুষদের মধ্যে বিতরণ করেছেন।

করোনাভাইরাসের কারণে ঘরবন্দি মানুষ যখন কর্মহীন হয়ে সংকটে, ঠিক তখনই এসব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার কাঁঠালতলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রায় ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী। তারা ইতোমধ্যে উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের ১ হাজার কর্মহীন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন। তাদের এমন উদ্যোগ বিভিন্ন মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে থমকে গেছে জনজীবন। ফলে মানুষ হয়ে পড়েছেন ঘরবন্দি। এতে তাদের কাজকর্ম নেই। হাতে টাকা নেই। ঘরে খাবার নেই। ফলে অনেকেই খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য গত ৭ মে উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের কাঁঠালতলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও ফ্রান্স প্রবাসী সাজিদ রুহেলসহ কয়েকজন প্রবাসী প্রথমে উদ্যোগ নেন। এরপর তারা ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুলে কাঁঠালতলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে একটি পোস্ট দেন।

এতেই সাড়া মেলে। একে একে এগিয়ে আসেন ওই বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যাচের প্রায় ৩ শতাধিক প্রাক্তন শিক্ষার্থী। প্রবাসী ছাড়াও তাদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার সঙ্গে জড়িত অনেকে। দেশ-বিদেশের কয়েকজন মিলে নিজেদের সাধ্যমতো অর্থ দিয়ে তহবিল গঠন করেন। মাত্র সাতদিনেই তহবিলে জমা হয় ৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা।

টাকা সংগ্রহের পর উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের কর্মহীন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করে গত ১৯ মে থেকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। গত শুক্রবার বিতরণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে। ওই ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের ১ হাজার পরিবারে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক পরিবারকে চাল, আলু, তেল, পেঁয়াজ, লবণ, ময়দা ও সেমাইসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে।

আলাপকালে কাঁঠালতলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ফ্রান্স প্রবাসী সাজিদ রুহেল বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে গোটা বিশ্ব থমকে গেছে। আমাদেরও কাজকর্ম নেই। সারাক্ষণ ঘরে থাকতে হচ্ছে। সংকটের এই সময়ে দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে তাদের জন্য কিছু একটা করার ইচ্ছা জাগে। এরপর আমি যে হাইস্কুলে পড়ালেখা করেছি, সেই স্কুলের সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেই। এরপর বিষয়টি কয়েকজন প্রবাসীকে শেয়ার করি। আমরা ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুলি। এতে ব্যাপক সবার সাড়া মেলে। এরপর দেশ-বিদেশে থাকা সবাই ৭ দিনে আমরা ৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছি। কল্পনা করিনি এতো তাড়াতাড়ি সবাই সাড়া দেবে। মানুষের দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়াতে পেরে ভালো লাগছে।

কাঁঠালতলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শিক্ষক ইমন চৌধুরী, ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন ও কুয়েত প্রবাসী নজরুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ কষ্টে রয়েছেন। তাদের কথা ভেবে কয়েকজন প্রবাসী তাদের জন্য খাদ্যসামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ নেন। এরপর আমরা যারা কাঁঠালতলী হাইস্কুলে লেখাপড়া করেছি, তারা সবাই এগিয়ে আসি। সবাই যার যার সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছি। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান প্রবাসীদের।

এই কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক শিক্ষক মোহাম্মদ ছয়ফুল হক বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে কার্যত সবকিছু অচল। ফলে মানুষের কাজকর্ম নেই। তারা কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের কথা ভেবে কয়েকজন প্রবাসী, যারা কাঁঠালতলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, তারা প্রথমে এই উদ্যোগ নেন। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বিদ্যালয়ের প্রায় ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী কর্মহীন-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সবাই মিলে মাত্র ৭ দিনে ৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা সংগ্রহ করে খাদ্যসামগ্রী কিনে দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের ১ হাজার পরিবারে বিতরণ করা হয়েছে।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার মুহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন বলেন, দেশের এই সংকটে কাঁঠালতলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে মহৎ। তাদের মতো সবাই এগিয়ে এলে অসহায় মানুষ খাদ্য সংকটে পড়বে না। তাদের এই উদ্যোগ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

 

এজে/আরআর-০৭