মাঠের বিকল্প ছাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুন ০৪, ২০২০
১০:৫৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ০৪, ২০২০
১০:৫৩ পূর্বাহ্ন



মাঠের বিকল্প ছাদ

সিলেট নগরের ঝরনারপাড় এলাকা। বেলা পাঁচটা। গতকাল বুধবার। ওই এলাকার একটি তিনতলা ভবনের ছাদে খেলা করছিল সাত থেকে আটজন ছেলে-মেয়ে। সবাই ওই ভবনেরই বিভিন্ন পরিবারের বাসিন্দা। করোনা-পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর থেকে ঘরবন্দী শিশু-কিশোরেরা এখন ছাদকেই মাঠ কিংবা উন্মুক্ত স্থানের বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করে খেলাধুলায় মেতে উঠেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ছাদে শিশু-কিশোরেরা নানা ধরনের খেলা খেলছে। দল বেঁধে তারা ঘুড়ি ওড়ানো, ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিণ্টনসহ বিভিন্ন খেলায় অংশ নিচ্ছে। অনেক শিশু-কিশোর আবার ছাদজুড়ে পরিবারের অন্যন্য সদস্যদের সঙ্গে হাঁটাহাঁটি করছে। আবার অধিকাংশ ছাদে মধ্যবয়স্ক ও বয়স্ক ব্যক্তিদের হাঁটার পাশাপাশি নানা ধরনের শারীরিক কসরতও করতে দেখা গেছে।

ঝরনারপাড় এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আবদুস সোবহান বলেন, ‘করোনা-পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর আর বাসা থেকে বের হচ্ছি না। অথচ প্রতিদিন সকাল ও বিকেল বেলা আমার হাঁটার দীর্ঘদিনের অভ্যাস। এ কারণে এখন বাসার ছাদেই হাঁটাচলা করি। এ ছাড়া নাতি-নাতনিরা বিকেল বেলা ছাদেই এখন খেলাধুলা করে। পরিবারের নারীসহ অন্যান্য সদস্যরা বিকেলে ছাদেই বসে গল্পগুজব করে। শুরুতে বিষয়টি কেমন লাগত! এখন আমরা এমন জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি।’

নগরের কয়েকটি এলাকার বাসিন্দা জানিয়েছেন, অনেকেই এখন বাসার ছাদকে মাঠের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছেন। সকাল-বিকেল হাঁটার পাশাপাশি শারীরিক কসরত, শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা এবং ভবনের গৃহিণী ও বাসিন্দাদের ঘরবন্দী জীবনে ছাদই যেন এখন প্রাণভোমরার মতো আবির্ভূত হয়েছে। বিকেল বেলা তাই ছাদে ছুটে যেতে এখন অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেন। ভবন থেকে না বেরোনায় ঘরবন্দী মানুষেরা ছাদে একত্রে গেলেও সেটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর কোনো ঝুঁকিই তাই থাকছে না।

গতকাল কয়েকদিন সিলেট নগরের সেনপাড়া, বালুচর, আগপাড়া, দর্জিপাড়া, রায়নগর, মীরাবাজার, শিবগঞ্জ, সোনারপাড়া, টিলাগড়, শাপলাবাগ, উপশহর, যতরপুর, সোবহানীঘাট, চালিবন্দর, কামালগড়, কাষ্টঘর, শেখঘাট, লামাবাজার, বিলপাড়, ভাতালিয়া, কাজলশাহ, বাগবাড়ি, আখালিয়া, মদিনামার্কেট, পাঠানটুলা, সুবিদবাজার, বড়বাজার, লেচুবাগান, লন্ডনী রোড, হাউজিং এস্টেট, লিচুবাগান, পীরমহল্লা, শাহী ঈদগাহ, কুমারপাড়াসহ অন্তত শতাধিক পাড়া-মহল্লা ঘুরে দেখা গেছে, সেসব এলাকার ছাদগুলোতে শিশু-কিশোরেরা খেলাধুলা করছে। কোনো কোনো নারী ছাদবাগানে পরিচর্যা করছেন। তরুণ-যুবকদের ছাদে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলতেও ব্যস্ত দেখা গেছে। মূলত ছাদকেন্দ্রিক একটা আড্ডার সংস্কৃতি এই করোনা-পরিস্থিতিতে চালু হয়ে পড়েছে বলে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

ভাতালিয়া এলাকার বাসিন্দা শিবুল দাশ বলেন, ‘আমার বাবা প্রতিদিন বিকেলে হাঁটতে বেরোতেন। তিনি প্রবীণ মানুষ। তাঁর ডায়াবেটিকও রয়েছে। তাই করোনা-পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর তাঁকে আর বাসার বাইরে বোরোতে দিচ্ছি না। এখন তিনি বাসার ছাদেই ঘণ্টাখানেক হাঁটাচলা করেন। তবে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন প্রচুরসংখ্যক মানুষ বাসার বাইরে বেরোচ্ছেন। অনেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার কারণে ঝুঁকি বাড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি যেন সকলে মেনে চলে, এটা বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে।’

দুজন প্রবীণ ব্যক্তি জানিয়েছেন, তাঁদের সকাল-বিকেল হাঁটাচলার অভ্যাস ছিল। কিন্তু করোনা-পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর তাঁরা বাসার বাইরে না বেরোতে পেরে কয়েকদিনেই হাফিয়ে উঠেছিলেন। পরে যখন ছাদের বিষয়টি মাথায় এলো, তাঁরা যেন বেঁচেছেন। এখন প্রতিদিন ছাদেই তাঁরা হাঁটাচলা করছেন। এতে হাঁটার পাশাপাশি মুক্ত বাতাসে তাঁদের কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির বিষয়টিও হয়ে গেল। সেনপাড়া এলাকার চৌদ্দ বছরের কিশোরী ফাহমিদা আক্তার বলে, ‘বিকেল বেলা ছাদে গিয়ে খেলি। আমাদের বিল্ডিংয়ে আমার আরও দুজন সহপাঠী রয়েছে। তাদের সঙ্গেই ছাদে যাই, গল্প করি, খেলি। বিশেষ করে ছাটে পাটি বিছিয়ে লুডু খেলাই আমরা বেশি খেলি। মাঝে মাঝে দড়িলাফও খেলি। মোটামুটি ভালোই কাটে আমাদের সময়। এরপর ছাদ থেকে সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরে হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা সেরে পড়তে বসি।’

এএন/বিএ-০১